Advertisement
০৪ মে ২০২৪
School Teacher Transfer

৬০৩ শিক্ষকের বদলির নির্দেশ স্থগিত! নেপথ্যে আদালতের চাপ? না কি পঞ্চায়েতের প্রয়োজন?

ঠিক ছিল, গরমের ছুটির পর বদলির নির্দেশ কার্যকর হবে। ১৫ জুন স্কুল খুলেছে। সেই দিনই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ জারি হয়। কেন এই স্থগিতাদেশ? আদালতের চাপে? না কি অন্য কোনও কারণ?

Image of Bratya Basu.

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। — ফাইল চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ১৫:২৩
Share: Save:

শিক্ষক বদলির নির্দেশ জারি করেও আপাতত পিছিয়ে এসেছে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর। গোটা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে প্রথম দফায় ৬০৩ জন শিক্ষকের প্রশাসনিক বদলির নির্দেশ গিয়েছিল পর্ষদের কাছে। আপাতত তা কার্যকর হচ্ছে না।

এই বদলির নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি আদালতের গোচরেও আনা হয়। অভিযোগ উঠেছিল, মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেছে বেছে বদলি করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন অভিযোগ করে, প্রতিহিংসাবশতই রাজ্য সরকার শিক্ষকদের বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও তোলে তারা। যদিও রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, পদ্ধতি মেনেই এই বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের বিশেষ কোনও অংশকে বেছে এই নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

গত ১৩ থেকে ১৬ জুন, টানা চার দিন ধরে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চে এই বদলি মামলার শুনানি হয়। আদালত পদ্ধতিগত প্রশ্ন তুলে রিপোর্ট তলব করে রাজ্যের কাছে। মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা সোমবার (১৯ জুন)। গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ বদলির স্থগিত রেখে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর।

কেন এই স্থগিতাদেশ? আদালতের চাপে? না কি অন্য কোনও কারণ? শিক্ষা দফতর একটি সূত্রে বলছে, তালিকায় থাকা বহু শিক্ষক বদলির নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন পর্ষদের কাছে। কেউ অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে, কেউ আবার দূরত্বজনিত অসুবিধার কারণে বিষয়টি পুনরায় ভেবে দেখার আবেদন জানিয়েছেন। স্কুলশিক্ষকদের সেই সব আবেদন খতিয়ে দেখার জন্যই নির্দেশ স্থগিত রাখার এই সিদ্ধান্ত বলে ওই সূত্রের দাবি।

এ ছাড়াও রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া চলছে। এই পর্বে শিক্ষকদের ভোটের কাজে প্রয়োজন হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। এর সঙ্গে বদলির প্রক্রিয়া জারি থাকলে তাতে অসুবিধা হতে পারে ভোটের কাজে। তাই এটি বদলি কার্যকরের সঠিক সময় নয় বলেও মনে করছেন বিকাশ ভবনের আধিকারিকরা। তবে পঞ্চায়েত ভোটের পর ফের এই শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে কিছু জানা যায়নি বিকাশ ভবন সূত্রে।

ঠিক ছিল, স্কুলে গরমের ছুটির পর বদলির নির্দেশ কার্যকর হবে। গত ১৫ জুন স্কুল খুলেছে। সেই দিনই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ জারি হয়। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র নেতা কৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্তের বিরোধী নই। কিন্তু গ্রামীণ স্কুলগুলিকে ফাঁকা করে দিয়ে, যেখানে শিক্ষকের প্রয়োজন নেই সেখানে অতিরিক্ত শিক্ষক দিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলাম আমরা। স্কুলগুলি যাতে কোনও ভাবে দুর্বল না হয়ে পড়ে আমাদের দাবি ছিল তার সপক্ষে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এ ভাবে শিক্ষকদের বদল করলে স্কুলগুলির ওপর চাপ বাড়তে পারে। আর শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট কারণে। আমরা জেনেছিলাম সরকার-বিরোধী আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য বাছাই করে শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছিল। আপাতত সেই নির্দেশ স্থগিত হয়ে যাওয়াই আমরা খুশি। আগামী দিনে শিক্ষক বদলের ক্ষেত্রে সরকার যেন প্রতি হিংসামূলক আচরণ না করেন সেটাই আশা করব।’’ তবে বদলির সিদ্ধান্তে ভুল কিছু দেখছে না পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তাদের কার্যকরী সভাপতি বিজন সরকারের মতে, ‘‘বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি শিক্ষা দফতরের সব সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করে। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা না-করে শিক্ষকদের ও স্কুলের স্বার্থে কথা বলুন। বদলির ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতর এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি যা শিক্ষার উন্নতির পথে পরিপন্থী হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Bratya Basu School education department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE