Advertisement
E-Paper

ভূমি রাজস্ব দফতরের ব্লক অফিসের ‘দুর্নীতি’তে কড়া নজর নবান্নের, বিশেষ তদন্ত শুরু অর্থ দফতরের

নবান্ন সূত্রে জানা যায়, এই চক্র কত দূর বিস্তৃত, তা জানতে অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হতে পারে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে, যেখানে গরমিলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ১২:৩৩
nabanna

—প্রতীকী ছবি।

ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের ব্লক স্তরের কাজকর্ম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশের পর শুরু প্রশাসনিক তৎপরতা। ব্লক অফিসগুলিতে ‘দুর্নীতি’র ঘুঘুর বাসা ভাঙতে প্রশাসনিক স্তরে নড়েচড়ে বসে নবান্ন। শুরু হয় দফতরভিত্তিক অভ্যন্তরীণ অডিট ও পর্যবেক্ষণ। নবান্ন সূত্রে খবর, কলকাতা থেকে বিভিন্ন জেলাভিত্তিক প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে রুটিন অডিট করা হয় ভূমি রাজস্ব দফতরের ব্লক স্তরের অফিসগুলিতে। সেই অডিটে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। দেখা যায়, জমির চরিত্র বদল সংক্রান্ত রাজস্ব, জরিমানা বাবদ আদায়ীকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে পুরোপুরি জমা পড়েনি। চালান জমা দেওয়ার পর সেটির জিআরএন নম্বর ব্যবহার করে রাজস্ব সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করা যেত। কিন্তু, তেমনটা করা হয়নি। অভিযোগ, উপভোক্তা জমির চরিত্র বদল বাবদ যে রাজস্ব দিয়েছেন, তা চালানে এক রকম, কিন্তু অফিসে জমা হওয়া কপিতে সেই পরিমাণ কমিয়ে লেখা হয়েছে।

নবান্ন সূত্রে জানা যায়, এই চক্র কতদূর বিস্তৃত, তা জানতে অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হতে পারে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে, যেখানে গরমিলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অভ্যন্তরীণ অডিট টিম এই আর্থিক গরমিল ধরতে সক্ষম হলেও, অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজনদের এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, দিনের পর দিন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক কী ভাবে চালান যাচাই না করেই অনুমোদন দিলেন? যেখানে জিআরএন নম্বর অনলাইনে দিলেই চালানের আসল তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে এই গাফিলতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।

এ ক্ষেত্রে অভিযোগ, এই চক্রে জড়িত রয়েছেন ব্লক অফিসের কিছু কর্মী, আমিন, মুহুরি, লিঙ্কম্যান নামক মধ্যস্থতাকারীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, এই লিঙ্কম্যানদের মধ্যে কেউ কেউ সম্প্রতি প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত টাকাই তাঁদের জীবনযাত্রায় এই আকস্মিক পরিবর্তন এনেছে। প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, শুধুই কি চালান দুর্নীতি, না কি জমির মিউটেশন সংক্রান্ত কাজেও দুর্নীতি হয়েছে? তদন্তকারীরা সে দিকেও নজর দিয়েছেন। কারণ, একাধিক এলাকায় অভিযোগ উঠেছে যে, দালালচক্রের মাধ্যমে কিছু লোকজন অবৈধ ভাবে জমির মালিকানা বদল করিয়ে নিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন কী ভাবে এই দুর্নীতির পর্দাফাঁস করে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, সে দিকেই তাকিয়ে রাজ্যের নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ। সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই বার্তা দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতিতে যুক্ত কেউ ছাড়া পাবেন না। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার।

এই ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করে, প্রশাসনের নিচু স্তরে নজরদারির অভাবই অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্ম দেয়। এ বার যদি তদন্তে দোষীরা সত্যিই চিহ্নিত হয় এবং কড়া শাস্তি পায়, তবেই এই ঘুণধরা ব্যবস্থায় কিছুটা শুদ্ধি আসবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Nabanna West Bengal Finance Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy