Advertisement
E-Paper

চাষে আছি পাশে, মধুর ভরসা রাজ্যের

মৌমাছির বাক্স নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা আসলে বেআইনি ব্যবসায় যুক্ত। কারণ, মৌমাছি ধরে রাখার সরকারি লাইসেন্স কারও নেই। এই যুক্তিতে মৌমাছি পালকদের গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে পুলিশ।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২০

ফুলের পরাগ মিলনে মৌমাছির যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, তা আজও বোঝেন না অনেক চাষি! তাঁরা ভাবেন, মৌমাছি ফুলের মধু খেয়ে নিলে ফলনের ক্ষতি হবে। তাই মৌমাছি পালকদের দেখলেই রে রে করে ওঠেন। বাক্স থেকে মৌমাছি বার করতে দেন না তাঁদের।

পুলিশের একাংশও মনে করে, মৌমাছির বাক্স নিয়ে যাঁরা বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা আসলে বেআইনি ব্যবসায় যুক্ত। কারণ, মৌমাছি ধরে রাখার সরকারি লাইসেন্স কারও নেই। এই যুক্তিতে মৌমাছি পালকদের গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে পুলিশ।

একে এমন ঝুঁকি ও বাধার পাহাড়। উপরন্তু সুসংহত কোনও বন্দোবস্ত নেই। বরং আছে দালালদের জুলুম। মধু সংগ্রহ করেও তাই বাজারে ভাল দাম মেলে না। অশেষ দুর্গতি মৌমাছি পালকদের।

তবে দেরিতে হলে এখন ঘুম ভেঙেছে সরকারের। রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর ঠিক করেছে, কয়েক লক্ষ মৌমাছি পালককে সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই জেলাশাসকদের মাধ্যমে মৌমাছি পালকদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন বছরের গোড়ায় পরিচয়পত্র বিলি করা হবে। মৌমাছি পালকদের ভাল দাম পাইয়ে দিতে বিপণন কৌশলেও বদল আনছে দফতর। মৌমাছি পালকদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পাল্টাতে চাষিদের সচেতন করতেও শুরু হবে প্রচার।

• বছরে সাত ধরনের ২০ হাজার টন মধু উৎপাদন হয় ভারতে

• ২০ হাজার কেজি পাওয়া যায় সুন্দরবন থেকে

• মালদহের লিচুর মধু থেকে বছরে ১০০ কোটির ব্যবসা

• সবার সেরা সুন্দরবনের গভীর অরণ্যের মধু

• রফতানি হয় জার্মানি, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে

রাজ্যের উদ্যান ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা জানিয়েছেন, মধু উৎপাদনে দেশের মধ্যে প্রথম তিনে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অথচ মৌমাছি পালকদের কোনও স্বীকৃতি নেই! তাই দেওয়া হবে পরিচয়পত্র, যা তাঁদের ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে কাজ করবে। সরকারি স্বীকৃতির পরে মৌমাছি পালকদের আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উন্নত মানের বাক্স দেওয়া হবে বলে জানান দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী।

‘অ্যাপিস মেলিফেরা’ নামে আদপে ইতালি থেকে আনা এক বিশেষ প্রজাতির মৌমাছি নিয়েই কয়েক লক্ষ পালকের জীবন-জীবিকা চলে। সারা বছরে যখন যে জেলায় যে ফল, ফসল বা শস্যবীজের মরসুম শুরু হয়— পালকেরা বাক্সবন্দি মৌমাছি নিয়ে সেখানে হাজির হন। খেতের পাশে বা বাগানের ধারে সেই বাক্স থেকে মৌমাছিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। শ্রমিক মৌমাছিরা রানি মৌমাছির জন্য ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আবার যে যার বাক্সে ফিরে আসে। মূলত দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো কয়েকটি জেলায় মৌমাছি পালকদের বাস। সাধারণত রাতের বেলায় বাক্সবন্দি মৌমাছি নিয়ে এক জেলা থেকে আর এক জেলায় পৌঁছে যান পালকেরা। ইউক্যালিপটাস, লিচু, সরষে, ধনে, তিল, কালোজিরে ছাড়াও সুন্দরবনের মধুও সংগ্রহ করেন তাঁরা।

কৃষিবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, কোনও খেতে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগ মিলন হলে কমপক্ষে ২০% বাড়তি ফসল পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ মৌমাছি পালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরুণ হালদার জানাচ্ছেন, চাষিদের মধ্যে সচেতনতার অভাব তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনও তাঁদের পেশাটিকে বুঝতে পারে না। ফলে নানা হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। অথচ বাংলার বিভিন্ন স্বাদের মধুর দেশজোড়া খ্যাতি রয়েছে। ‘‘একমাত্র সরকার পাশে দাঁড়ালেই তাঁরা রেহাই পাবেন’’— মনে করেন তরুণবাবু।

Honey Export Agriculture মধু Apiculture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy