Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্যুতে পাম্প চালাতে চাষিকে অনুদান মমতার

কৃষিকাজে বিদ্যুৎ জোগাতে আলাদা সরবরাহ লাইনের ব্যবস্থা তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে চাষের খরচ কমিয়ে আনতে এ বার ডিজেলের বদলে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেট ব্যবহারের উপরে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই ব্যাপারে আগ্রহ বাড়াতে বিদ্যুৎ-সংযোগের খরচ বাবদ কৃষকদের প্রত্যেককে আট হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

কৃষিকাজে বিদ্যুৎ জোগাতে আলাদা সরবরাহ লাইনের ব্যবস্থা তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে চাষের খরচ কমিয়ে আনতে এ বার ডিজেলের বদলে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেট ব্যবহারের উপরে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই ব্যাপারে আগ্রহ বাড়াতে বিদ্যুৎ-সংযোগের খরচ বাবদ কৃষকদের প্রত্যেককে আট হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আসলে কৃষিকাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামো ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলতে চাইছে রাজ্য সরকার। নবান্নের খবর, সেই জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে ৪০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।

ডিজেলের বলে বিদ্যুতে চাষের পাম্পসেট চালানোর সিদ্ধান্ত কেন?

বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানান, বাম আমলের শেষ দিকে রাজ্যে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেটের সংখ্যা ছিল এক লক্ষের কিছু বেশি। গত চার বছরে সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তার পরেও প্রায় ৬০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে বণ্টন সংস্থার ঘরে। মূলত এই কারণেই কৃষককে অনুদান দিয়ে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেট বাড়াতে বাড়তি খরচ বহন করবে রাজ্য।

বিদ্যুৎকর্তাদের হিসেব অনুযায়ী প্রতিটি পাম্পসেটে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিতে খরচ হয় দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। বিনিময়ে কৃষকের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বাড়তি অর্থ দিতে হয় বণ্টন সংস্থাকেই। আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বণ্টন সংস্থা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। রয়েছে অর্থের সঙ্কটও। এক বিদ্যুৎকর্তা বললেন, ‘‘সরকারের দেওয়া টাকায় পরিকাঠামো সম্প্রসারণ-সহ নতুন লাইন টানা, সাবস্টেশন ও ট্রান্সফর্মার বসানোর মতো কাজ করা যাবে।’’

কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রাজ্য ‘সেচ-বন্ধু’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্প সফল করতে ৪২০০ কোটি টাকা খরচ করে শুধু কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য পৃথক একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প-ব্যয়ের ৬০ শতাংশ অর্থ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি অর্থ রাজ্যের। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ব্যবস্থায় কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের মান ভাল হবে। সেই সঙ্গে পরিষেবা দেওয়া যাবে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহককে।

প্রশ্ন উঠেছে, আর্সেনিক-প্রবণ অঞ্চলেও কি পাম্পসেটের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে? সরকার বলছে, না, সেটা হবে না। এ ক্ষেত্রে মূলত সেই সব জেলাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বিদ্যুৎচালিত পাম্পসেটের সংখ্যা কম, অথচ কৃষিপ্রধান এলাকা বেশি। বিদ্যুৎ-সংযোগের আবেদন জানিয়ে যে-ষাট হাজার আবেদনপত্র জমে আছে, সেগুলো মূলত ওই সব জেলারই। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘অনেক জেলায় কৃষকেরা এখনও ডিজেলে পাম্প চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতে পাম্প চললে খরচ কমে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেলে কৃষকেরা বছরে দু’তিনটি ফসলও ফলাতে পারবেন। সেই জন্যই মুখ্যমন্ত্রী আরও বেশি পাম্পে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টামণ্ডলীর এক কর্তার দাবি, আগে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার জন্য কৃষকের কাছ থেকে ‘যেমন খুশি’ টাকা নেওয়া হত। তার পরেও ঠিক সময়ে সংযোগ পেতেন না অনেকে। এখন বিদ্যুৎ-সংযোগের টাকা সরকার দিচ্ছে। পাঁচ ‘হর্স পাওয়ার’ বা অশ্বশক্তির পাম্পসেট চালানোর জন্য লাইসেন্সও নিতে হয় না। কৃষি দফতরের কর্তাদের একাংশের যুক্তি, পঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিদ্যুৎচালিত পাম্পের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই ওই সব রাজ্যে জলের অভাবে চাষের ক্ষতি হয় না। চাষিরা একই জমিতে দু’তিনটি ফসল ফলাতে পারেন। এ রাজ্যে সেই সুযোগ থাকলেও জলের অভাবে অনেক সময় তা করা সম্ভব হয় না।

এ বার বাংলাতেও সেচ পাম্পে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়িয়ে দু’তিনটি ফসল তোলা নিশ্চিত করা যাবে বলে নবান্নের আশ্বাস। বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে শুধু কৃষিতেই বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ শতাংশ। নতুন পাম্পসেটে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কাজ দেড় বছরের মধ্যে শেষ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE