বিপন্ন প্রাণী রেড পান্ডা সংরক্ষণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। রাজ্যের বন দফতর সম্প্রতি সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কে মোট ন’টি রেড পান্ডাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত করেছে। লক্ষ্য একটাই— প্রাকৃতিক উপায়ে এই লুপ্তপ্রায় প্রজাতির বংশবিস্তার ঘটানো এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। বন দফতর সূত্রে জানা গেছে, ওই রেড পান্ডাগুলি ইতিমধ্যেই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তারা প্রজননও শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। বন দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাণীগুলিকে মুক্ত করার পরও তাদের উপর দূর থেকে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে, যাতে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা না ঘটে।
এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। রেড পান্ডা সংরক্ষণে পশ্চিমবঙ্গের বন দফতর দার্জিলিঙের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জ়ুওলজিক্যাল পার্কের সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘রেড পান্ডা ক্যাপটিভ ব্রিডিং অ্যান্ড রি-ইনট্রোডাকশন প্রোগ্রাম’-এর অধীনে কাজ করছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল চিড়িয়াখানায় সাফল্যের সঙ্গে জন্মানো রেড পান্ডাদের বনাঞ্চলে পুনরায় ছেড়ে দিয়ে প্রাকৃতিক প্রজননের সুযোগ তৈরি করা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) রেড পান্ডাকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাই সিঙ্গালিলা ও নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ককে রেড পান্ডার সংরক্ষিত আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে চোরাশিকার প্রতিরোধে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বন দফতর। পাশাপাশি, পার্ক সংলগ্ন গ্রামগুলিতে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে, যাতে স্থানীয় মানুষ রেড পান্ডা সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন।
এ ছাড়া, দু’টি জাতীয় উদ্যানে রেড পান্ডার সংখ্যার নির্ভুল হিসাব পেতে গণনার কাজও শুরু করেছে বন দফতর। কর্মকর্তারা জানান, প্রজনন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা ও চোরাশিকার রোধই এখন সরকারের অগ্রাধিকার। উল্লেখযোগ্য ভাবে, রেড পান্ডা সংরক্ষণে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জ়ুওলজিক্যাল পার্কের সংরক্ষণ প্রকল্পটি ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী সেরা তিনটি সংরক্ষণ কর্মসূচির মধ্যে স্থান পেয়েছে। এই স্বীকৃতি শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা ভারতের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ক্ষেত্রেই এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।