কেউ রাজ্যে সমস্ত রকম বাজি নিষিদ্ধ করার পক্ষে সওয়াল করছেন। কারও মত, বাজি পোড়ানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হোক। কেউ চাইছেন, প্রতিমা বিসর্জনের নির্দিষ্ট কিছু জায়গার মতো বাজি পোড়ানোর জন্যও কয়েকটি ফাঁকা জায়গা চিহ্নিত করুক প্রশাসন। দিল্লিতে এ বার দেওয়ালিতে সমস্ত রকম বাজি বিক্রির উপর যে নিষেধাজ্ঞা সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জারি করেছে, তাতে কালীপুজোর ন’দিন আগে রাজ্যের পরিবেশকর্মীরা রীতিমতো উৎসাহিত।
কালীপুজোর ঠিক পরেই শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির রোগীদের ভিড় এক ঝটকায় অনেকটা বেড়ে যায়, বলছেন শহরের চিকিৎসকেরা। সরাসরি শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে যায়, এমন ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ কালীপুজো ও তার পর দু’-তিন দিন মানুষের সহনশীল মাত্রার দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষা থেকে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘আমি দিন কয়েকের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে বলব, শুধু দিল্লি বা তার আশপাশে নয়, গোটা দেশেই সমস্ত রকম বাজি নিষিদ্ধ করা হোক।’’ রাজ্যে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত সংস্থা ‘সবুজ মঞ্চ’-র নব দত্তর বক্তব্য, ‘‘গোটা তিনেক ছাড়া রাজ্যের সব বাজি কারখানা বেআইনি ভাবে চলছে। এর ভিত্তিতে সব রকম বাজি কেনাবেচা, ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। পর্ষদকে সে কথা চিঠি দিয়ে জানাব।’’
পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি কার্যত নিষিদ্ধ। তবু প্রতি বছর কালীপুজো-দেওয়ালিতে নিয়ম করে চলে সেই নিয়ম ভাঙা। অপদস্থ হতে হয় পর্ষদকে। এই অবস্থায় পর্ষদের কেউ কেউ মনে করছেন, সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ হওয়াটাই শব্দদৈত্যকে জব্দ করার মোক্ষম দাওয়াই হতে পারে।
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রর বক্তব্য, কালীপুজো এমন একটা সময়ে হয়, যখন তাপমাত্রা কমতে থাকে, বাতাসে ভাসমান সব ধূলিকণা নেমে আসে। এমনিতেই বাতাসের মান খারাপ থাকে, তার উপর বাজি পোড়ানোর ফলে বাতাস আরও দূষিত হয়ে পড়ে। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় সময়োপযোগী। বাজি পোড়ানো সর্বতো ভাবে বন্ধ হওয়া উচিত। তবে শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ বা বিধিনিষেধ আরোপ করে হবে না, এ ক্ষেত্রে জনচেতনা তৈরি হওয়া দরদার।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সব ধরনের বাজিতে বিষাক্ত উপাদান থাকে। যে কোনও বাজি পোড়ানো অস্বাস্থ্যকর।’’
তবে এই রাজ্যে বাজি তৈরির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ যুক্ত। পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, এখনই সব রকম বাজি বন্ধ করা হয়তো বাস্তবে সম্ভব নয়। প্রথম ধাপ হিসেবে এখন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়া হোক। পরের ধাপে বাজি পোড়ানোর কয়েকটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হোক।
বাজি ব্যবসার সঙ্গে গত দু’দশক ধরে যুক্ত শুভঙ্কর মান্নাও বলছেন, বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে।