—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
যত্র আয় তত্র ব্যয়ের সংসারে খরচ বাঁচানো রাজ্য সরকারের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আসন্ন (আগামী বা ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের জন্য) বাজেটে বাড়তি খরচের সংস্থানও করতে হবে রাজ্যকে। এই অবস্থায় ডিজিটাল রেশন কার্ডের তালিকা সংস্কার করে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা বাঁচাতে পেরেছে রাজ্য। যা রাজ্যকে ন্যূনতম কিছুটা সহযোগিতা করবে বলে আশা আধিকারিকদের একটি অংশের।
একটা সময়ে আধারের কড়া বিরোধিতা ছিল রাজ্যের অবস্থানে। কিন্তু গোটা দেশে এখন ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজ শুরু করে নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এই কাজ শুরুর আগে রাজ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ কোটি ৭০ লক্ষ।
আধার সংযোগের পরে এখন রাজ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ডের সংখ্যা প্রায় ১.৯৮ কোটি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭১ লক্ষ ৫৮ হাজারে। ফলে সমান্তরালে কমেছে বাদ যাওয়া এক একটি কার্ডপিছু খাদ্যশস্যের বরাদ্দও। তাতে বছরে রাজ্যের সাশ্রয়ের পরিমাণ কমবেশি চার হাজার কোটি টাকা!
সাম্প্রতিক যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে উপভোক্তাদের তথ্যভান্ডার সংশোধনের (মূলত ভুয়ো কার্ড বাদ যাওয়া) পরে প্রতি মাসে আনুমানিক ৭৩ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বেঁচে যাচ্ছে। বাৎসরিক হিসেবে তা প্রায় ৮.৫০ লক্ষ মেট্রিকটন। আধিকারিক মহলের অন্দরের বক্তব্য, প্রতি মাসে এক জন রেশন গ্রাহক পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকেন নিখরচায়। তার এক কেজি খাদ্যশস্যে ভর্তুকি দিতে সরকারের খরচ হয় কমবেশি ৩০ টাকা। আবার রেশন গ্রাহকদের প্রকৃতি ভেদে খাদ্যশস্যের পরিমাণেও হেরফের হয়। সব মিলিয়ে খরচ বাঁচছে কমবেশি চার হাজার কোটি টাকা। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে এই সাশ্রয় রাজ্যের বাজেটের আগে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সময়ের সঙ্গে রাজ্যের অনুদান প্রকল্পগুলির খরচের বহর বেড়েছে অনেকটাই। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে শুধু লক্ষ্মীর ভান্ডারে ২.২১ কোটি (যে সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে হয়েছে) উপভোক্তাকে প্রতি মাসে আর্থিক সহায়তা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রাজ্যের। আগামী দিনে আরও প্রায় পাঁচ লক্ষ নতুন উপভোক্তার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬২৫ কোটি টাকার মতো।
এ ছাড়াও চালাতে হবে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, বিভিন্ন সামাজিক পেনশন প্রকল্প, তরুণের স্বপ্ন (পড়ুয়াদের ট্যাব-স্মার্টফোন দেওয়া), কৃষকবন্ধু ইত্যাদি খরচসাপেক্ষ কর্মসূচি। এ ছাড়াও রয়েছে বাকি দফতরগুলির জন্য বরাদ্দ দেওয়া, বেতন-পেনশন ইত্যাদি। সর্বোপরি ঋণ পরিশোধ বাবদ প্রায় ৭৬ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা চলতি বছর (২০২৪-২৫)। ফলে আয় না বাড়লে রাজস্ব এবং রাজকোষ ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই দিক থেকে তুলনায় ন্যূনতম হলেও, রেশনে খরচ বাঁচানোকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।
প্রসঙ্গত, আধার সংযোগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) দিয়ে রেশন তোলার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রতিটি কার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপভোক্তার মোবাইল নম্বর। ভবিষ্যতে চোখের মণি যাচাই করার পদ্ধতি চালু হওয়া নিয়েও চর্চা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আধার সংযোগের পরে এ পর্যন্ত ১.৯৮ কোটি কার্ড নিষ্ক্রিয় হলেও, এখনও দৈনিক কমবেশি এক হাজার করে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy