Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বেপরোয়া গাড়ি ধরতে নজরমিনার, ক্যামেরা

কালো তিল, বাদামি জড়ুলের মতো ‘বিউটি স্পট’ সুন্দরীদের আকর্ষণ বাড়ায়। কিন্তু সরল, সুন্দর সড়কের কিছু কিছু ‘ব্ল্যাক স্পট’ যেটা বাড়িয়েই চলেছে, সেটা হল সরকারের মাথাব্যথা। হুটহাট দুর্ঘটনা, প্রাণহানির জন্যই বিভিন্ন রাস্তার ওই সব মোড় বা বিশেষ অংশ ‘ব্ল্যাক স্পট’ নামে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে।

সোমনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

কালো তিল, বাদামি জড়ুলের মতো ‘বিউটি স্পট’ সুন্দরীদের আকর্ষণ বাড়ায়। কিন্তু সরল, সুন্দর সড়কের কিছু কিছু ‘ব্ল্যাক স্পট’ যেটা বাড়িয়েই চলেছে, সেটা হল সরকারের মাথাব্যথা। হুটহাট দুর্ঘটনা, প্রাণহানির জন্যই বিভিন্ন রাস্তার ওই সব মোড় বা বিশেষ অংশ ‘ব্ল্যাক স্পট’ নামে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই ধরনের মোড় বা এলাকায় দুর্ঘটনা কমাতে এ বার ওয়াচ-টাওয়ার বা নজরমিনার এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

ওই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার বা দরপত্রও ডাকা হয়েছে। প্রতিটি ওয়াচ-টাওয়ার ও ক্যামেরা বসাতে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ ধার্য করেছে পূর্ত দফতর। প্রথম দফায় বর্ধমানের গলসি বাজার, পারাজ ও সিদ্ধার মোড়; হুগলির ডানকুনি এফসিআই ক্রসিং; হাওড়ার ধুলাগড়, সাঁতরাগাছি, শলপ; উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা ও ডায়মন্ড হারবার মোড়ের মতো ব্যস্ত এলাকায় ওয়াচ-টাওয়ার ও ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় রাজ্য ও জাতীয় সড়ক ধরে সব জেলায় নজরদারি শুরু হবে।

নবান্নের খবর, ২০১৫ সালে রাজ্য পুলিশের এলাকায় ১৩ হাজার পথ-দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তাতে মৃত্যু হয় হাজার ছয়েক মানুষের। ২০১৬-য় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ১৪ হাজারে পৌঁছে যায়। মৃত্যু হয় প্রায় সাড়ে ছ’হাজার জনের। এই পরিসংখ্যান সামনে রেখে সরেজমিনে ঘুরে রাজ্যের ভিতর দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়কে ৪৩টি এবং রাজ্য সড়কে ৩৩টি ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করেছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, ওয়াচ-টাওয়ারে দিনরাতের পুলিশ থাকবে। কোনও গাড়ি নির্দিষ্ট গতির চেয়ে বেশি জোরে চললে বা লেন ভাঙলে সেই ছবি উঠে যাবে ওই সব নজর-ক্যামেরায়।

কী ভাবে বিভিন্ন সড়কের ওই সব ‘ব্ল্যাক স্পট’ বাছল পুলিশ?

মূলত ২০১৫ সালের পথ-দুর্ঘটনার প্রকৃতি ও পরিসংখ্যান দেখে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বাছা হয়েছে বলে জানান রাজ্যের এক পুলিশকর্তা। জাতীয় সড়কের ক্ষেত্রে যেখানে বছরে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং তার জেরে পাঁচ বা তার বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে, সেগুলোকেই ‘ব্ল্যাক স্পট’ বলা হচ্ছে।

আর রাজ্য সড়কের ক্ষেত্রে বছরে ছ’টি দুর্ঘটনা এবং তিন বা তার বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে এই তকমা দেওয়ার সূচক ধরা হয়েছে। ওয়াচ-টাওয়ার ও ক্যামেরা বসবে ওই সব এলাকাতেই।

দুর্ঘটনা বেড়ে চলায় বারে বারেই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, পথ-দুর্ঘটনা কমাতেই হবে। প্রতি বছর গাড়ির চাকায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু বরদাস্ত করবে না সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ রূপায়ণে বেশ কিছু দিন ধরে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ বা ‘সামলে চালান, জান বাঁচান’ ধ্বনি দিয়ে প্রচার চলছে। পথ-নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে সামিল করা হয়েছে স্কুলপড়ুয়াদেরও। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া গাড়ি ধরার কাজও চলছে। জাতীয় ও রাজ্য সড়কে যানবাহন যাতে নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলে এবং দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালাতে না-পারে, সেটা দেখার জন্যই এ বার রাস্তার পাশে ওয়াচ-টাওয়ার ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের আছে কি?

নবান্নের এক কর্তা বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশ কম, এটা সত্যি। সেই ঘাটতি মেটাতে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ারদের কাজে লাগানো হবে। যে-সব থানা এলাকার উপর দিয়ে রাজ্য ও জাতীয় সড়ক গিয়েছে, প্রয়োজনে নজরদারির ডিউটি দেওয়া হবে সেই সমস্ত থানার পুলিশকেও।

বিধাননগর, হাওড়া, আসানসোল, ব্যারাকপুর, শিলিগুড়ির বিভিন্ন রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে বাড়তি টাকা দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident CCTV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE