Advertisement
E-Paper

কালো চালের বিক্রি বাড়াতে তৎপর রাজ্য

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত বছর ৫০ বিঘে জমিতে চাষ করে কালো চাল মিলেছিল ২২ টন। এ বার চাষ হয়েছে ৩৫০ বিঘে জমিতে। আর অন্তত ১০০ টন ফলন পাওয়ার আশা করছে কৃষি দফতর। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওই ফসল মাঠ থেকে ঘরে তোলার কথা।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৫

বিদেশে রফতানির জন্য বাংলার কালো চালের উৎপাদন আরও বাড়াতে চুক্তি করে চাষের পথে হাঁটতে চায় রাজ্য সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, কৃষকের ফলন কিনে নেবে রফতানিকারক বেসরকারি সংস্থা।

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত বছর ৫০ বিঘে জমিতে চাষ করে কালো চাল মিলেছিল ২২ টন। এ বার চাষ হয়েছে ৩৫০ বিঘে জমিতে। আর অন্তত ১০০ টন ফলন পাওয়ার আশা করছে কৃষি দফতর। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওই ফসল মাঠ থেকে ঘরে তোলার কথা।

তবে রাজ্যে খরিফ ও রবি মরসুম মিলিয়ে চালের মোট উৎপাদন দেড় কোটি টনেরও বেশি। সেই অনুপাতে কালো চালের উৎপাদন ন’বছর আগে শুরু হলেও তেমন বাড়েনি। ওই টুকু চাল রফতানিও করা যায় না। কাজেই উৎপাদন আরও বাড়াতে চুক্তিচাষের পথে হাঁটতে চায় রাজ্য।

রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্র জানান, যে সব বেসরকারি সংস্থা এই চাল রফতানি করবে, তারা কৃষকদের সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি করুক যে, ফলনটা তারা কিনে নেবে। চাষিদের কৃষি দফতর কালো চালের উৎকৃষ্ট মানের বীজ ও চাষের আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে সাহায্য করবে। কৃষি অধিকর্তা জানান, বাংলার কালো চালের ভাল বাজার তৈরি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তবে তিনি বলেন, ‘‘চাষিরা প্রচুর পরিমাণে গোবিন্দভোগ ফলিয়ে এখন বিদেশে বিক্রি করতে পারছেন না। সেই অভিজ্ঞতা থেকে রাজ্য সরকার নিজেরা কালো চাল উৎপাদনে এর চেয়ে বেশি উৎসাহ দিতে চায় না।’’ রফতানি করতে গেলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

২০০৮ সালে ধান গবেষক অনুপম পালের তত্ত্বাবধানে রাজ্যে প্রথম সুগন্ধি কালো ধান ফলানো হয় নদিয়ার ফুলিয়ায়, কৃষি দফতরের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। অনুপমবাবুর দাবি, ‘‘এই কালো চাল উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের মধ্যে প্রথম।’’ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কালো চালের পুষ্টিগুণ প্রচুর। এর অ্যান্থোসায়ানিন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। বার্ধক্য, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস, ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঠেকাতেও কার্যকর। দাম অবশ্য চড়া, কেজি প্রতি ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।

এখনও পর্যন্ত কালো চাল বিক্রির জায়গা বলতে বিশ্ববাংলা, সুফল বাংলার স্টল ও কৃষি মেলা। কয়েকটি শপিং মলেও মিলছে। বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের পাঁচাল গ্রামের কৃষক ভৈরব সাইনি বলেন, ‘‘গত বছর প্রায় ২২ কুইন্টাল কালো চাল তামিলনাড়ু ও কর্নাটকে পাঠিয়েছি।’’ তবে কালো চালের চাষ ও বিক্রি সবই হচ্ছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। সংগঠিত প্রয়াসের খামতির কথা কৃষি দফতরের কর্তারাও মেনে নিচ্ছেন।

কলকাতা পুরসভা আয়োজিত ফুড কার্নিভাল ‘দেখো রে’-তে কালো চালের তৈরি রাইস নুডল, পাস্তা, পায়েস বিক্রি হয়েছিল। বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল কমিটির চেয়ারম্যান সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় এই ব্যাপারে উদ্যোগী হন। তিনি প্যারিস ও হংকংয়ের মেলাতেও বাংলার কালো চাল পাঠিয়েছিলেন।

বণিকসভার ওই কর্তা কিন্তু মনে করেন, কালো চালের ক্ষেত্রে চুক্তি করে চাষের পরিস্থিতি এখনই তৈরি হয়নি। সত্যব্রতবাবুর কথায়, ‘‘বিদেশে বাজার তৈরি হওয়ার পরেই রফতানিকারক সংস্থা বাংলার চাষির সঙ্গে চুক্তি করবে। কিছু দেশে বাংলার কালো চাল নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে মাত্র, চাহিদা তৈরি হয়নি।’’ তাঁর পরামর্শ, কয়েক জন ভাল শেফ-এর সঙ্গে আলোচনা করে কালো চালের বিভিন্ন পদ তৈরি করে সেগুলি রাজ্য, রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন মেলায় তুলে ধরতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কালো চালের খিচুড়ির যে অপূর্ব স্বাদ, সেটা ক’জন জানেন! এগুলোই জানাতে হবে।’’

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের অধীন সংস্থা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা ‘অ্যাপেডা’-র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা রণজিৎকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘প্যাকিং, প্রসেসিং, প্যাকেজিং, ব্র্যান্ডিং এগুলোর উপর জোর দিতে হবে।’’

Black Rice Government initiatives initiative Promotion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy