সল্টলেকে নিজের বাড়িতেই হামলার মুখে পড়ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রবিবার সন্ধ্যায় নিজের বাসভবনে এমন ঘটনার সম্মুখীন হন তিনি। সেই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে বিধাননগর কমিশনারেট। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, এমন আচমকা হামলার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হতে পারে।
রবিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়া থেকে সন্ধ্যায় নিজের সল্টলেকের বাড়িতে ফেরামাত্রই আক্রান্ত হন বালু। সল্টলেকের বাড়ির একতলায় তাঁর একটি অফিস রয়েছে। অভিযোগ, ওই অফিসে প্রবেশ করার সময় তাঁর উপর হামলা হয়। আচমকা এক যুবক এসে তাঁর মুখে ঘুষি মারেন। তাতেই ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান বালু, চিৎকার করতে থাকেন। সেই সময় তাঁর দফতরে থাকা কয়েক জন তৃণমূলকর্মী ছুটে এসে যুবককে আটকান। বালুকে ধরাধরি করে রাস্তা থেকে তোলা হয়। আক্রমণকারীকে বিধাননগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি মানসিক ভাবে অসুস্থ। তাঁকে পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে এই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে জ্যোতিপ্রিয়ের নিরাপত্তা নিয়ে। কী ভাবে বিধাননগর কমিশনারের অধীন ওই এলাকায় একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে তাঁর উপর হামলা চালালেন এক ব্যক্তি? কারণ, জ্যোতিপ্রিয় প্রাক্তন মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি ২৫ বছরের বিধায়ক। এমন একজন ব্যক্তির নিরাপত্তা নিয়েই যদি প্রশ্ন ওঠে, তা হলে সল্টলেকের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা কোথায়? এমন প্রশ্ন ক্রমশই জোরালো হচ্ছে বিধাননগরবাসীর মধ্যে। কারণ, রবিবার দুপুর থেকেই ওই ব্যক্তি প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছিলেন বলে অভিযোগ। তা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন বিষয়টিতে নজর দেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিধাননগরের বাসিন্দাদের মধ্যে।
আরও পড়ুন:
সেই আবহেই জ্যোতিপ্রিয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধি হতে পারে বলে খবর। বর্তমানে হাবড়ার বিধায়ক সর্ব ক্ষণের জন্য দু’জন সরকারি নিরাপত্তারক্ষী পান। এ ছাড়াও, বাড়িতে মোতায়েন থাকেন আরও দু’জন। এ বার তাঁদের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। নজর রাখা হবে তাঁর বাড়িতেও। বালুর নিরাপত্তার জন্য আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হবে, কিন্তু সেই সব পদক্ষেপ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কিছু জানাতে নারাজ প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। অভিযুক্ত যুবককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর নেন তিনি। বালুর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, তৃণমূল বিধায়ক অভিযুক্তকে চেনেন না। কখনও দেখেনওনি। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজও তিনি খতিয়ে দেখেছেন। তা থেকেই জানতে পেরেছেন যে, দুপুর ৩টে থেকে বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছিলেন ওই যুবক। মাঝে একবার উধাও হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই আবার বাড়ির সামনে এসে হাজির হন। তার পর বালু সেখানে পৌঁছোতেই তাঁর উপর হামলা চালান।
প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, আক্রমণের সময় ওই যুবক চাকরির কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘শুনলাম আমার কাছে ছেলেটি চাকরি চাইতে এসেছিল। কিন্তু আমি চাকরি দেব কী ভাবে? কোনও বিষয়ে সাহায্য চাইতে গেলে অবশ্যই আমি তাঁকে সাহায্য করব। চাকরি দেওয়া তো আর আমাদের হাতে নেই।’’ প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতি মামলায় দেড় বছর কারাবাসে থাকার পর চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তার পর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র হাবড়ায় গিয়ে কাজকর্ম শুরু করেছেন জ্যোতিপ্রিয়।