সকাল সকাল নদিয়ায় এক কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে হানা দিল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সোমবার সকালে নদিয়ার চাকদহ থানা এলাকায় পেশায় কাঠমিস্ত্রি দুই ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের আধিকারিকেরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। বাড়ির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে নথিপত্রও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, চাকদহের পড়ারি গ্রামের বাসিন্দা ওই কাঠমিস্ত্রির নাম বিপ্লব সরকার। সোমবার সকালে বিপ্লব ও তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে হাজির হয় তদন্তকারী দল। পরে দুই ভাই-সহ আরও এক জনকে আটক করা হয়। ধৃতদের নাম বিপ্লব, বিনন্দ সরকার এবং বিপুল সরকার। তাঁদের মধ্যে একজন রাজমিস্ত্রি। দু’জন কাঠের কাজ করেন।
সোমবার সকাল সকাল টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িটিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ভুয়ো পাসপোর্ট এবং আন্তর্জাতিক হাওয়ালা চক্রের তদন্তের অঙ্গ হিসাবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। ইডি সূত্রে খবর, মনে করা হচ্ছে, ভারতের জেলে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে চাকদহের ধৃতদের যোগ থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:
ভুয়ো নথি দাখিল করে পাসপোর্ট তৈরির চক্রটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে গত বছরের শেষে। চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল ওই মামলায় বিরাটি থেকে আজ়াদ মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ইডি। পরে জানা যায়, ‘আজ়াদ মল্লিক’ ছদ্মনাম, আদতে ধৃতের নাম আহমেদ হোসেন! আন্তর্জাতিক হাওয়ালা চক্রে টাকা লেনদেনে জড়িত ছিলেন এই আজ়াদ। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন তিনি। পরে তাঁর কাছ থেকে পাকিস্তানের নথিও উদ্ধার হয়। জানা যায়, তিনি পাকিস্তানের নাগরিক। কাঁচরাপাড়ার একটি ক্যাফে থেকে হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট-সহ অন্যান্য ভুয়ো নথি বানানোর কাজ করতেন তিনি। আজ়াদকে জেরা করে পরে ইন্দু ভূষণ নামে আরও এক ব্যক্তির খোঁজ মেলে। চাকদহের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে গত মাসে গ্রেফতার করে ইডি।
তদন্তকারীদের দাবি, অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং ভারতীয় নাগরিকত্বের নানা জাল নথি তৈরি করে দিতেন ইন্দু ভূষণ। গত সাত-আট বছরে অন্তত ৩০০টি ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির নেপথ্যে ছিলেন তিনি। এই ইন্দুকে দিয়েই ভুয় নথি তৈরির চক্র চালাতেন আজ়াদ। ইডি সূত্রে খবর, ধৃতের মোবাইল ফোনের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ইন্দু ভূষণের দু’টি মোবাইল থেকে আজ়াদের সঙ্গে ৫৫৭ বার যোগাযোগ করা হয়েছিল। সেই ফোনের সূত্র ধরেই এ বার খোঁজ মিলেছে চাকদহের বিপ্লব সরকার ও তাঁর ভাই-সহ তিন জনের। অভিযুক্তদের সঙ্গে ইন্দু ও আজ়াদের যোগ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তাঁরাও ভুয়ো পরিচয়পত্র বানানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।