Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বেআইনি মাছ ধরা রুখতে কড়া আইন আনতে চায় রাজ্য

ডায়মন্ড হারবার: এ সময়ে সমুদ্রে মাছ ধরা মানা। কিন্তু শুনছে কে? দেদার ট্রলার চলে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে। তাদের আটকানোর মতো পরিকাঠামো বা আইন, কোনওটাই কার্যত হাতে নেই মৎস্য দফতরের। সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা নয় মৎস্যজীবীদের। এ বছর থেকেই সময়সীমা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। মাছের প্রজননকাল হওয়ার জন্যই এ সময়ে মাছ ধরা মানা। অথচ, ক’দিন আগেই রায়দিঘিতে বেআইনি ভাবে ধরা প্রায় ২ কুইন্টাল ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে মৎস্য দফতর।

অকালেও ধরা হচ্ছে ইলিশ। —ফাইল চিত্র।

অকালেও ধরা হচ্ছে ইলিশ। —ফাইল চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

ডায়মন্ড হারবার: এ সময়ে সমুদ্রে মাছ ধরা মানা।

কিন্তু শুনছে কে?

দেদার ট্রলার চলে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে। তাদের আটকানোর মতো পরিকাঠামো বা আইন, কোনওটাই কার্যত হাতে নেই মৎস্য দফতরের।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার কথা নয় মৎস্যজীবীদের। এ বছর থেকেই সময়সীমা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। মাছের প্রজননকাল হওয়ার জন্যই এ সময়ে মাছ ধরা মানা। অথচ, ক’দিন আগেই রায়দিঘিতে বেআইনি ভাবে ধরা প্রায় ২ কুইন্টাল ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে মৎস্য দফতর। সেই মাছ থানার তরফে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শুক্রবারও বেআইনি ভাবে ধরা প্রায় ৩ কুইন্টাল ইলিশ বাজেয়াপ্ত হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে।

কিন্তু কেন এখন সমুদ্রে যাওয়ার এই প্রবণতা মৎস্যজীবীদের?

মরসুমের আগে কিছু মাছ সহজে ধরা পড়ে। আকারে-আয়তনে কিছুটা ছোট হলেও সেই মাছ বিক্রি করে টাকা আয় করা সহজ বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতারা। সেই লোভেই আইনকে বুড়ো আহুল দেখিয়ে কিছু মৎস্যজীবী বেরিয়ে পড়ছেন গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে। কিন্তু তাতে মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। প্রজননে সমস্যা হওয়ায় মাছ কমছে বলেও মৎস্যজীবীরা অনেকেই জানাচ্ছেন। ফলে মরসুম এলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে অধিকাংশ মৎস্যজীবীকে।

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতির কথায়, ‘‘মৎস্য দফতর ও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। আমাদের স্বার্থে আমরাই বেআইনি মাছ ধরার নৌকোগুলিকে ধরে তাদের খবর দিচ্ছি। মৎস্য দফতরের কর্তারা পরিকাঠামোর অভাব বলে দাবি করছেন। কিন্তু সে জন্য আমরা কেন ক্ষতির সম্মুখীন হবো?’’ মাছের মরসুম শুরু হওয়ার আগে মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলি মৎস্য সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন।

সামুদ্রিক মাছ যে ভাবে কমছে, তাতে মরসুমের আগেই বেআইনি মাছ ধরার সাজা আরও কড়া করতে চায় মৎস্য দফতর। দফতরের সহ অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্যের সামুদ্রিক মৎস্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিতে কিছু পরিবর্তন করে সাজা আরও কড়া করার ব্যাপারে এ বছরই পদক্ষেপ করার কথা রয়েছে। আড়তদারদের উপরেও নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হবে।’’ বেআইনি মাছ ধরা পড়লে নিলাম করে বিক্রির অর্ধেক টাকা মৎস্যজীবীদের পাওয়ার কথা। নতুন বিধিতে তা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে, সামুদ্রিক মৎস্যক্ষেত্রের পঞ্চায়েত এলাকার আড়তদারদের লাইসেন্সও যাতে মৎস্য দফতর দিতে পারে, তা-ও আসতে পারে নতুন বিধিতে। এ রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে দফতর সূত্রে।

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়দিঘি, কুলতলি, বাসন্তী, নামখানা এবং হাওড়ার দিকে রূপনারায়ণের কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে বেআইনি মাছধরা ও বিক্রি। তল্লাশি হচ্ছে কয়েকটি জায়গায়। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। অনেক সময়ে গভীর সমুদ্রেও যাচ্ছেন না মৎস্যজীবীরা। সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা আছে। ফলে ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যেই বেআইনি ভাবে মাছ ধরছেন তাঁরা।

রাজ্যে সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে ১৮টি ব্লকে কম বেশি ৩৭টি ‘ফিস ল্যান্ডিং ঘাট’ রয়েছে। তারমধ্যে পুর এলাকার আড়তদারদের লাইসেন্স দেওয়ার অধিকারী মৎস্য দফতর। তার বাইরে নয়। ডায়মন্ড হারবারের অতিরিক্ত মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ কুমার বাগ বলেন, ‘‘এই সমস্ত এলাকায় আড়তদারেরা বেআইনি ভাবে ধরা মাছ মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে কিনলে, তাঁদের বিরুদ্ধে সে রকম কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় নেই। পঞ্চায়েত এলাকায় আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণই আমাদের হাতে নেই। আমরা মাছ কেড়ে নিতে পারি মাত্র।’’

ওই আধিকারিক আরও জানান, বিশাল এলাকা সামলানোর জন্য রাজ্যের অতিরিক্ত অধিকর্তা মিলিয়ে রয়েছেন মাত্র ৭ জন মৎস্য আধিকারিক। কোনও জায়গায় তল্লাশি চালাতে হলে পুলিশকে সঙ্গে নিতে হয়। কিন্তু এত বড় এলাকায় কী ভাবে তারা নজরদারি চালাবেন, তা নিয়েও সংশয়ে মৎস্য দফতর। সুরজিৎবাবুর কথায়, ‘‘আমরা নিয়মিত কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ এবং জেলাশাসকের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে থাকি। তবে বেআইনি ভাবে মাছ ধরা তুলনামূলক ভাবে কমলেও একেবারে নির্মূল করতে হবে।’’ মৎস্য দফতর সাহায়্য চাইলে তা দেওয়া হয় বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।

মঙ্গলবার বেশ কিছু ইলিশ মাছ সহ রায়দিঘিতে ধরা পড়ে রসিক দাসের ট্রলার। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেন গেলেন মাছ ধরতে? রসিকবাবুর কথায়, ‘‘আমি আগে যাইনি। যখন দেখলাম, বেশ কিছু ভুটভুটি এবং ট্রলার মাছ ধরতে নেমে পড়েছে, তখন আমিও গিয়েছি। কিন্তু মৎস্য দফতরের কর্তারা এসে বললেন, মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরও ১৫ দিন জারি থাকবে, তারপর আর ট্রলার নামাইনি।’’ বেশ কিছু মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি গড়ে মাছ ধরে। তারা সরাসরি মৎস্যজীবীদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নন। তাঁদের অনেকে দাবি করছেন, মৎস্য দফতরের এই নতুন দিনক্ষণ তাঁদের জানাই ছিল না। কারণ, নিষেধাজ্ঞার দিনক্ষণ এ বছর থেকেই আরও ১৫ দিন বাড়ানোর কথা সংগঠনগুলির মাধ্যমেই মৎস্যজীবীদের জানিয়েছিল মৎস্য দফতর।

যদিও কুলতলির মৎস্যজীবীদের একাংশ জানালেন, জেনেশুনেই বেআইনি ভাবে মাছ ধরছেন এলাকার অনেকে। মরসুম শুরুর আগেই কিছু ইলিশ জালে তুলে আগাম কাঁচা পয়সা লাভের আশায় ভুটভুটি এবং ট্রলার নিয়ে রোজ মাছ ধরা চলছে। সেগুলি কলকাতা এবং ডায়মন্ড হারবার থেকে পাইকাররা কিনেও নিচ্ছেন বলে দাবি ওই মৎস্যজীবীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE