—ফাইল চিত্র।
সাধারণ ভাবে অভিযোগ ওঠে, অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা রাজ্য নাকি খরচ করে উঠতে পারে না। এ বার অভিযোগ উঠছে, শুধু দিল্লি থেকে আসা অর্থই নয়, রাজ্য নিজের বরাদ্দ টাকাও খরচ করতে পারেনি। এবং চিকিৎসার মতো এমন একটি ক্ষেত্র নিয়ে সেই অভিযোগ উঠছে, যেটিকে সারা বিশ্বে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তরফে টাকা খরচ করতে না-পারার বিষয়টি স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে।
গত বছর রাজ্যের এক আয়ুষ চিকিৎসকের করা আরটিআই (তথ্য জানার আবেদন)-এর জবাবে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর স্বীকার করে, ২০১৪-১৯ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছরে আয়ুষ চিকিৎসায় (আয়ুর্বেদ, ইউনানি, যোগ, হোমিয়োপ্যাথি, সিদ্ধা) কেন্দ্রের দেওয়া ৯৪ কোটি টাকার মধ্যে ৪৬ কোটি টাকাই খরচ করতে পারেনি বাংলা। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় ২০২০-২১ সালে আয়ুষ মন্ত্রক থেকে রাজ্যকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তাদের আগের জবাব সংশোধন করে স্বাস্থ্য দফতর লিখিত ভাবে জানিয়েছে, খরচ করতে না-পারা কেন্দ্রীয় অর্থের পরিমাণ ৪৬ কোটি নয়, প্রায় ৫০ কোটি! উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের ওই আয়ুর্বেদ চিকিৎসক আরটিআই করেন ২০২০ সালের ১৮ অগস্ট। সেখানে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের কতটা খরচ করা যায়নি, সেটা জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের বরাদ্দ ৪০ শতাংশ অর্থের কতটা গত পাঁচ
বছরে খরচ হয়েছে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া উত্তরে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য আয়ুষ প্রকল্পে নিজের দেওয়া ৫৫ কোটি ২২ লক্ষ টাকার মধ্যেও ২৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেনি। রাজ্যের টাকাও খরচ করতে না-পারার বিষয়টি সামনে চলে আসায় স্বাস্থ্যকর্তারা পড়েছেন অস্বস্তিতে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তা (আয়ুষ) শরৎকুমার দ্বিবেদীকে কিছু দিন আগেই বদলি করা হয়েছে। দফতরে কানাঘুষো, আয়ুষের টাকা খরচ করতে না-পারাই সেই বদলির মূল কারণ। স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য মুখে তা স্বীকার করেননি। ‘‘টাকা খরচে কিছু সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে গত বছর করোনার জন্য অনেক টাকা খরচ করা যায়নি। তবে আমরা এই বিষয়ে সব রকম পরিকল্পনা করছি। দ্রুত সব টাকা খরচ হবে,’’ বলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
আয়ুষ চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্রের প্রকল্প বা মিশন এড়িয়ে চলা বা তাতে গুরুত্ব না-দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে রাজ্যের। আয়ুষ চিকিৎসায় টাকা খরচ করতে না-পারা তারই পরিণাম। ‘‘ভারতের প্রাচীন ও স্বীকৃত এই চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য কেন্দ্রে আলাদা মন্ত্রক রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সেই মন্ত্রক থেকে যে-সব ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল, তার কিছুই করেনি রাজ্য,’’ বলেন আয়ুষ চিকিৎসক অভিজিৎ ঘোষ। তাঁর আরও অভিযোগ, সরকারি আয়ুষ ডিসপেন্সারিগুলিতে অর্ধেক ওষুধ মেলে না। সরকারি আয়ুষ গ্রাম তৈরি করে সেখানে ওষধি গুল্ম বা বৃক্ষ রোপণের কাজ হয়েছে নামমাত্র। আয়ুষ নিয়ে সরকারি প্রচারও নেই। ছোঁয়াচে নয়, জীবনধারার ত্রুটিজনিত (লাইফস্টাইল ডিজ়িজ়) এমন রোগের ক্ষেত্রে আয়ুষ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার জন্য আশা এবং এএনএম-দের যে-প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল, এ রাজ্যে তা-ও হয়নি। টাকা খরচের অনেক সুযোগ থাকলেও রাজ্য তার সদ্ব্যবহার করেনি বলে অভিযোগ।
মালদহের উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপ স্থাস্থ্যকেন্দ্রের আয়ুষ চিকিৎসক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আয়ুষ চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিলে গরিব মানুষ নামমাত্র টাকায় পরিষেবা পেতে পারতেন। গ্রামের মানুষ এই চিকিৎসা থেকে কার্যত বঞ্চিত। আয়ুষ মেডিক্যাল অফিসারদের বেতন আট বছর ধরে বাড়েনি। এত দিনেও বাংলায় আয়ুষের জন্য কোনও নতুন সরকারি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরের মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হয়নি। এ-সব কাজ করলে টাকা খরচ হয়ে যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy