Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Fiscal deficit

ঘাটতি ভুলে দরাজ ব্যয়ে রাজ্য কি কেন্দ্রের পথেই

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:১৩
Share: Save:

চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি জিডিপির ৩.৫ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু কোভিড আর লকডাউনের ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে শেষমেশ তা দাঁড়িয়েছে ৯.৫ শতাংশে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট-বক্তব্যে স্পষ্ট, আগামী আর্থিক বছরেও তা হবে ৬.৮ শতাংশ। ধার করতে হবে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। যুক্তি, সরকারি ব্যয় না-বাড়িয়ে প্রাণ ফেরানো কঠিন হবে অর্থনীতিতে। নবান্নের অর্থ দফতর সূত্রেও খবর, ‘কেন্দ্রের মতো একই পথে হেঁটে’ আসন্ন বাজেটে ঘাটতির তোয়াক্কা তেমন না-করে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির দাওয়াইকে বেছে নিতে পারে রাজ্য। ভোটের কথা মাথায় রেখে ঘোষণা করা হতে পারে বেশ কয়েকটি প্রকল্প, যার সুবিধা সরাসরি ছুঁতে পারে সাধারণ মানুষকে।

কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী, সমব্যথী থেকে শুরু করে অনলাইনে ক্লাস করতে ট্যাবের টাকা দেওয়ার মতো বিভিন্ন প্রকল্প আগেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থ দফতর সূত্রে খবর, তেমন আরও কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বাজেট। বাজেটে সারা বছরের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হলেও, খরচের অনুমোদন নেওয়া হবে আগামী তিন মাসের। যা ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ বলে পরিচিত। অর্থ দফতরের একটি সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের শরীর তেমন ভাল নেই। যদিও সোমবারই ক্যামেরার সামনে বাজেট প্রতিক্রিয়া তিনি দেন। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে, তিনিই বাজেট পড়বেন। তা না হলে বিধানসভা ভোটের আগের শেষ বাজেট মুখ্যমন্ত্রী নিজে পড়তে পারেন বলেও ওই সূত্রের দাবি। যদিও সরকারি ভাবে তেমন কিছুই জানানো হয়নি।

ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা শিথিল করার বিষয়ে প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘লকডাউনের জেরে রাজ্যের অর্থনীতিও জোর ধাক্কা খেয়েছে। কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্ত কর ও অনুদানের টাকা কম এসেছে। সেই ধাক্কা সামলে রাজ্যের উন্নয়নে গতি ফেরানোর দিশা বাজেটে দেওয়া হবে। মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি গরিব, সংখ্যালঘু, আদিবাসী, তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষ এবং চাষিদের কথা বিশেষ ভাবে ভাবা হচ্ছে।’’

কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে? অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, করোনা-কালের কঠিন পরিস্থিতিতে এখন কেন্দ্রের ধাঁচে বিপুল খরচের পথে হাঁটতে পারে রাজ্য। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যের ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.১৮%। আশঙ্কা, এ বার তা ঢের বেশি হবে। ২০২১-২২ সালেও সেই ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা। রাজকোষ ঘাটতির পুরনো লক্ষ্যমাত্রায় ফিরতে এ বার বাজেটে অনেকখানি বাড়তি সময় নেওয়ার কথা বলেছেন নির্মলা। ৪.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছেন ২০২৫-২৬ সালের জন্য। তাই বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন (এফআরবিএম) সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। অথচ রাজ্যগুলিকে ৩ শতাংশের লক্ষ্যে ফিরতে সময় দেওয়া হচ্ছে ২০২২-২৩ পর্যন্ত। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এটি রাজ্যের উপরে বাড়তি চাপ।

কর্তাদের একাংশ বলছেন, এখন রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩% ঋণ নেওয়া যায়। বর্তমান অবস্থায় কেন্দ্র তা ৪% করেছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কার করলে, ধার নেওয়া যাবে ৪.৫% পর্যন্ত। ফলে আগামী বছরে বাজার থেকে বাড়তি কয়েক হাজার কোটি টাকা ধার করার সুযোগ মিলবে। স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিকাঠামো ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতেও রাজ্যের মাধ্যমেই খরচ হবে। ফলে অনুদান বাবদ বাড়তি টাকা আসবে। সেই সঙ্গে এ বার অর্থনীতি ধীরে ধীরে মুখ তুলতে শুরু করলে, রাজ্যের নিজস্ব আয়ও বাড়বে। তাই সরকারি ব্যয়ে কিছুটা দরাজ হতে অসুবিধা হবে না বলেই তাঁদের দাবি। বিশেষত ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে ‘ঢাক ঢাক গুড় গুড়’ পরিস্থিতি যেখানে আপাতত বছর কয়েক কম থাকার সম্ভাবনা।

অন্য বিষয়গুলি:

west bengal Fiscal deficit Budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE