খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, ‘রেফার’ বন্ধ করতে হবে। কিন্তু তার পরেও যে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির এই প্রবণতা বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ মিলেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা পড়া অভিযোগ সমূহ থেকেই। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানোর পোর্টালে জমা পড়েছে রেফার সংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ। যা নজরে আসতেই তড়িঘড়ি শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসল স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্রের খবর, জেলা থেকে শহরের হাসপাতালে তো বটেই, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেও রেফার লেগেই রয়েছে। তাই এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ (এমএসভিপি) ও অতিরিক্ত মেডিক্যাল সুপারদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করলেন স্বাস্থ্য দফতরের দুই বিশেষ সচিব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য-অধিকর্তা এবং অন্য আধিকারিকেরা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে জমা পড়া অভিযোগগুলি থেকে ছ’টি রেফারের ঘটনা তুলে ধরেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তার মধ্যে এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল এবং আর জি কর রয়েছে। ওই সমস্ত ঘটনায় কী ভাবে, কোন পরিস্থিতিতে রেফার করা হয়েছে, এবং তার পরে সেই রোগীদের কোথায় কোথায় আরও ঘুরতে হয়েছে, সবই তুলে ধরে প্রশ্ন করা হয়।
জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য দফতর একাধিক বার রেফার বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা কেন এখনও বজায় রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিশেষত, রাতে রেফারের সংখ্যা কেন বৃদ্ধি পায়, তা-ও জানতে চান আধিকারিকেরা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিকেল পাঁচটার পর থেকেই রেফার বেড়ে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি, তড়িঘড়ি একটি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করার জন্য এনআরএস কর্তৃপক্ষকে বাহবাও দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের মতে, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রেফার নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে স্বাস্থ্য ভবন।
ওই বৈঠকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রোগীকে না দেখেই ‘রিগ্রেট, নে বেড ভেকেন্ট’ বলে লিখে অন্যত্র রেফার করা যাবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পরে রোগীর পরিজনদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলে তবেই অন্যত্র পাঠানোর কথা বলতে হবে। যদি দেখা যায়, কোনও হাসপাতাল নির্দিষ্ট কোনও সমস্যার চিকিৎসা পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সেই সমস্যা নিয়ে আসা রোগীকে অন্যত্র রেফার করেছে, তা হলে বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনের নজরে আনতে হবে। সন্ধ্যা হলেই ইচ্ছেমতো রেফার করার প্রবণতা বন্ধ করতে কড়া ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য শিবিরেরই প্রশ্ন, এত কিছু বলার পরেও আদৌ রেফার-রোগ নির্মূল হবে কি?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)