হয়রানি: রাস্তায় বাস কম। তার মধ্যে বৃষ্টি। তাই দূরত্ববিধি উপেক্ষা করেই বাসে ওঠার চেষ্টা। শুক্রবার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
বাড়তি ভাড়ার ঘোষণা ছাড়া মালিকরা বেসরকারি বাস চালাতে রাজি নন বলে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে বাস এবং মিনিবাসের সংখ্যা কমছিলই। কিন্তু শুক্রবার রাজ্য সরকার বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে বাড়তি ২০০ বাসের ব্যবস্থা করে তাতে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করায় জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানালেন, তাঁদের সঙ্গে এই বৈষম্য করা হলে তাঁরা আর বাসই নামাবেন না। ফলে বেসরকারি বাসমালিক এবং রাজ্য সরকারের ১৫ দিনব্যাপী লড়াইয়ে ‘উলুখাগড়া’ যাত্রীদের ভোগান্তি সোমবার আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবারও বৃষ্টির মধ্যে বাস পেতে নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে অফিসযাত্রীদের। বারাসত, চিড়িয়ামোড়, বারুইপুর, কামালগাজি, রুবি মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিভেজা যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়েছে।
রাস্তায় বেসরকারি বাসের এই অবস্থা দেখে রাজ্য প্রশাসনের তরফে সোমবার থেকে বাড়তি ৪০০ বাস নামানোর সিদ্ধান্ত হয়। এগুলির মধ্যে ২০০ বাস চালাবে বেসরকারি সংস্থা, যারা মূলত সেক্টর ফাইভে অ্যাপ নির্ভর বাস চালায়। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের উদ্বৃত্ত বাসও কাজে লাগানো হবে। এ-ও জানানো হয়েছে, এসি বাসে সরকারি এসি বাসের ভাড়া (ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকা) এবং বেসরকারি নন-এসি বাসে সরকারি এগ্জ়িকিউটিভ বাসের ভাড়া (ন্যূনতম ভাড়া ১২ টাকা) কার্যকর হবে। তপনবাবুর প্রশ্ন, এই ভাড়াই যদি নিতে দেওয়া হবে, তা হলে তাঁদের ভাড়া এক কথায় বাড়ানো হল না কেন?
আরও পড়ুন: পরিবহণে ভোগান্তি, প্রশ্নে মন্ত্রীর ভূমিকা
আরও পড়ুন: ১০০ দিনের কাজে আগ্রহ নেই, ফিরতে আগ্রহী শ্রমিকরা
কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, যাত্রী কম হচ্ছে বা লাভ হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতিতে এবং সরকারের সঙ্গে লড়াইয়ের জেরে বেসরকারি বাস মালিকেরা সাধারণ মানুষকে দুর্গতির মধ্যে ঠেলে দিলেন কেন? বাস আর না-নামানোর ‘হুমকিই’ বা তাঁরা দেন কী করে? সদুত্তর মেলেনি। প্রসঙ্গত, স্বাভাবিক অবস্থায় বৃহত্তর কলকাতায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে আট হাজার বাস-মিনিবাস চললেও লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে ওই সংখ্যা গড়ে ২৭০০-এর উপরে ওঠেনি ।
ভাড়া নিয়ে সে ভাবে গলা না-চড়িয়ে এ যাবৎ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছিল বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট এবং অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি-সহ মোট আটটি বাসমালিক সংগঠন। কিন্ত শুক্রবার তারাও জানিয়ে দিয়েছে, বর্ধিত ভাড়া ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের পক্ষে পরিষেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট, বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-সহ অন্য চার সংগঠন অবশ্য প্রথম থেকেই ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সরব। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি টিটো সাহা বলেন, ‘‘ভাড়া নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না- হলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির বোঝা টেনে চলা কার্যত অসম্ভব।’’ অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী হারে বাস পিছু যাত্রী এবং আয় কমেছে তা সরকারকে জানিয়েছি। এখন পরিষেবা সচল রাখার স্বার্থে তাঁরাই নির্ধারণ করুন ভাড়ার হার।’’
বাসমালিকদের ‘জেদ’ যেমন প্রশ্নের মুখে, তেমন চর্চা চলেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। বাসমালিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ভাড়া নির্ধারণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট জমা দিতে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়া হল কেন? তবে কি ধরে নেওয়া হয়েছে যে জুলাই থেকে মেট্রো বা ট্রেন চললে বাসের ভাড়া আর না-বাড়ালেও চলবে? এ ছাড়া, লকডাউন শিথিল করার পর্বে রাস্তায় যানবাহন সচল করার দায়িত্বে থাকা তিন আধিকারিকই মূলত ভাড়া নির্ধারণের বিশেষজ্ঞ কমিটির দায়িত্বে। যাঁরা সমস্যা মিটিয়ে বাস পরিষেবা মসৃণ করতে পারেননি, তাঁদেরই কেন কমিটিতে রাখা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অভ্যন্তরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy