Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ফের পিছোল শুনানি, বন্ধ বিকল্প পথও

রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষার্থীরা দিশাহারা

আলোর রেখা দূরে থাক, অন্ধকার গাঢ়তর হচ্ছে। তার মধ্যেই আরও একটা মোক্ষম আঘাত এসে পড়ল ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছাত্রছাত্রীদের উপরে। এ বারের মতো রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট নেওয়া যাবে কি না, সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানি আবার পিছিয়ে গিয়েছে শুক্রবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

আলোর রেখা দূরে থাক, অন্ধকার গাঢ়তর হচ্ছে। তার মধ্যেই আরও একটা মোক্ষম আঘাত এসে পড়ল ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছাত্রছাত্রীদের উপরে।

এ বারের মতো রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট নেওয়া যাবে কি না, সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানি আবার পিছিয়ে গিয়েছে শুক্রবার। সোমবারের আগে সেই বিষয়ে কোনও ফয়সালার আশা নেই। তার উপরে শীর্ষ আদালত এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, যে-সব পরীক্ষার্থী গত ১ মে-র সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছেন, তাঁরা আর ২৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল জয়েন্ট এন্ট্রান্সের দ্বিতীয় বা শেষ পর্যায়ের পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। অর্থাৎ বিকল্প হিসেবে কেন্দ্রীয় জয়েন্টের ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষাকে আঁকড়ে ধরার সুযোগটাও পাচ্ছেন না অনেকে।

পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের নিজস্ব মেডিক্যাল প্রবেশিকা বাতিল বলে সর্বোচ্চ আদালত এপ্রিলের শেষে জানিয়ে দেওয়ায় বাংলার ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থী চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। কারণ, দেশ জুড়ে অভিন্ন কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল জয়েন্টের ব্যবস্থা হলেও ওই সব ছাত্রছাত্রীর মূল লক্ষ্য রাজ্যের প্রবেশিকা। সেটাই বাতিল হচ্ছে শুনে তাঁদের অনেকে ১ মে কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল জয়েন্টের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা ‘অল ইন্ডিয়া প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট’ বা এআইপিএমটি-তে বসেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ঠিকমতো তৈরি হয়ে বসতে পারেননি।

ওই সব পরীক্ষার্থীর কাছে রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্টই পাখির চোখ। তার জন্যই এত দিন ধরে তৈরি হচ্ছেন সকলে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১৭ মে-র নির্ধারিত সেই রাজ্য প্রবেশিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই খড়কুটো হিসেবে কেন্দ্রীয় জয়েন্টের প্রথম পরীক্ষাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন পরীক্ষার্থীরা। রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের আশা ছিল, ১ মে-র পরীক্ষাটা নমো নমো করে সারলেও ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় জয়েন্টের দ্বিতীয় পরীক্ষা ন্যাশনাল এন্ট্রান্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (এনইইটি)-এ তাঁরা ফের সুযোগ পাবেন। রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্টকে এ বারের মতো জিইয়ে রাখার আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে সেই আর্জিও জানানো হয়েছিল।

সর্বোচ্চ আদালত কী বলে, আশায় আশায় সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন রাজ্যের মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। কিন্তু এ দিন সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি এ আর দাভে, বিচারপতি এস কে সিংহ এবং বিচারপতি এ কে গোয়েলের বেঞ্চ সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলেছে, যে-সব পরীক্ষার্থী ১ মে-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছেন, তাঁদের পরবর্তী পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে যাঁরা ১ মে-র পরীক্ষা দেননি, তাঁরা ২৪ জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় বসতে পারবেন।

এই নির্দেশ শুনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পরীক্ষার্থীদের অনেকেই। রাজ্য প্রবেশিকা এবং কেন্দ্রীয় জয়েন্টের মধ্যে পাঠ্যক্রম, প্রশ্নের ধাঁচে ফারাক আছে। আছে ভাষা-সমস্যাও। রাজ্য জয়েন্টে বাংলা বা ইংরেজিতে উত্তর লেখা যায়। কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ইংরেজি ছাড়া উপায় নেই। ফলে রাজ্যের অনেক পরীক্ষার্থীর অসুবিধা হয় ঠিকই। তবে পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় জয়েন্টের শেষ পরীক্ষা এনইইটি হবে ২৪ জুলাই। তার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে ২১ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত। সব মিলিয়ে তাঁরা প্রস্তুতির সময় পেতেন অনেকটাই। যে-সব ঘাটতির কারণে ১ মে-র পরীক্ষা ভাল ভাবে দেওয়া যায়নি, সেগুলো পুষিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু শীর্ষ আদালত সেই পথ বন্ধ করে দেওয়ায় ওই পরীক্ষার্থীরা অসহায় বোধ করছেন। অকারণে একটি বছর নষ্টের আশঙ্কা বড় হয়ে উঠছে তাঁদের সামনে।

স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকে বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি এক বছর পরে অভিন্ন কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল জয়েন্টের বন্দোবস্ত করতে বলত, তা হলে সব দিকই রক্ষা পেত। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের তরফে সেটা আদালতকে বোঝানোও হয়েছে। আর্জি জানানো হয়েছে, এ বছরের মতো রাজ্য মেডিক্যাল প্রবেশিকা নিতে দেওয়া হোক। তাতে অসংখ্য পরীক্ষার্থীকে বছর নষ্টের মুখে পড়তে হবে না। রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার আশায় থাকতেও হবে না। ১৭ মে রাজ্যের প্রবেশিকায় বসতে পারলে তাঁদের অনেকেরই সমস্যার সুরাহা হতে পারে।

কিন্তু চলতি বছরের জন্য রাজ্যের মেডিক্যাল প্রবেশিকা চালু রাখার আবেদনটাও বেশ কয়েক দিন ধরে ঝুলে আছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রথম যে-দিন সেই আবেদনের শুনানির কথা ছিল, সে-দিন তা হয়নি। বৃহস্পতিবার শুরু হলেও শেষ হয়নি শুনানি। শুক্রবার একটা ফয়সালার আশায় ছিলেন পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত এ দিন জানিয়েছে, তারা ওই আর্জি শুনবে সোমবার। অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত আশায় থাকতে হচ্ছে রাজ্যের মেডিক্যাল জয়েন্টের পরীক্ষার্থীদের। রাজ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স হওয়ার কথা ১৭ মে। নির্ঘণ্ট মেনে সে-দিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা হবে ঠিকই। কিন্তু মেডিক্যাল জয়েন্ট জীবনদান পাবে কি না, সেটা নির্ভর করছে সর্বোচ্চ আদালতের উপরে।

এই টানাপড়েনে মার খাচ্ছে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি। সোমবার রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে এ বছরের জন্য মেডিক্যাল প্রবেশিকা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও পরীক্ষার্থীরা চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য হাতে আর সময় পাবেন মাত্র আট দিন। অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় ইতিমধ্যেই নাজেহাল পরীক্ষার্থীরা। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় কোন ধাঁচে প্রশ্ন হবে, তার জন্য কী রকম প্রস্তুতি প্রয়োজন, পাঠ্যক্রমে বদল হয়েছে কি না— এই সব প্রশ্ন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজ্যের ৮৫ হাজার ডাক্তারি জয়েন্ট পরীক্ষার্থীর। তারই মধ্যে শুনানির জন্য ‘তারিখ পে তারিখ’ পড়েই চলেছে!

রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) দফতরের আধিকারিকদের কথায়, রাজ্যের আয়োজিত এত বড় পরীক্ষা তুলে দেওয়ার মতো কোনও নির্দেশ দিতে হলে অন্তত এক বছর আগে সেটা দেওয়া উচিত। তাতে আয়োজক, পরীক্ষার্থী-সহ সব পক্ষেরই সুবিধে হয়। ‘‘শুধু পড়ুয়া নয়, পরীক্ষা নিয়ামকদেরও নানা ধরনের প্রস্তুতি চালাতে হয়। এ ভাবে হঠাৎ জানালে সমস্তটাই গোলমাল হয়ে যায়,’’ বললেন দফতরের এক কর্তা। তিনি জানান, শুধু পরীক্ষার্থীরা নয়, রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) দফতর এবং জয়েন্ট বোর্ডও এখন সুপ্রিম কোর্টের শেষ শুনানির দিকেই চেয়ে রয়েছে।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ওই দিন শুনানির পরেই সমস্তটা পরিষ্কার হবে।’’ পরীক্ষার চাপ এবং কোর্ট কী বলবে সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Medical Joint WBJEE examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE