বিকেলের কালবৈশাখী নয়, বৃহস্পতিবার সকালের ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হল মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু এলাকা। দেওয়াল চাপা পড়ে দু’জন এবং বজ্রাঘাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১০।
দিনের শুরুতেই ঝড়বৃষ্টি ধেয়ে আসায় রোদ আর গরম তেমন দাপট দেখাতে পারেনি। ফলে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছে জেলা। কিন্তু কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার বরাত খুবই খারাপ। দিনে-রাতে ঘোরতর আর্দ্রতায় ঘেমেনেয়ে অস্থির মহানগরী।
ঝড়বৃষ্টি কোনও কোনও জেলায় অস্বস্তি কিছুটা কমালেও কপাল খুলল না কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার। নাকাল করা আর্দ্রতার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেল না মহানগরী।
কয়েক দিন ধরে রোজ সকালেই কলকাতার আকাশ ঢেকে থাকছে মেঘে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টির সম্ভাবনা কমছে। ফলে গুমোট গরম পিছু ছাড়ছে না রাতেও। মঙ্গল-বুধবারের পরে এ দিনেও কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার বীরভূম, বর্ধমান, নদিয়ায় বৃষ্টি হয়। বুধবার বৃষ্টি হয় উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায়। এ দিন সকালে ফের বৃষ্টি হয়েছে বীরভূম, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকায়। ফলে বৈশাখের শেষ বেলাতেও সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়ে গিয়েছে এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে নীচে। পাশাপাশি আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন বাসিন্দারা।
কিন্তু কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ছবিটা অন্য রকম। মহানগরীতে তাপমাত্রা তেমন না-বাড়লেও জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় দিন যত গড়িয়েছে, বেড়েছে অস্বস্তি। দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গায় ঝড়বৃষ্টিতে অস্বস্তি কমলেও কেন বঞ্চিত হচ্ছে কলকাতা?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এটা মেঘপুঞ্জের খেল্। স্থানীয় ভাবে তৈরি মেঘপুঞ্জ যেখানে ভাঙছে, সেখানেই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এক আবহবিদের ব্যাখ্যা, তাপমাত্রা বেশি না-থাকায় মেঘপুঞ্জ খুব একটা উঁচুতে উঠতে পারছে না। ফলে তারা কলকাতা পর্যন্ত আসতে পারছে না। এ দিন সকালে পুরুলিয়ার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের উপরে একটি মেঘপুঞ্জ দানা বেঁধেছিল। পরে মুর্শিদাবাদ-বীরভূমের উপরকার অন্য একটি মেঘপুঞ্জের সঙ্গে মিশে যায় সে। মেঘপুঞ্জটি ভেঙে যায় নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার সীমানায়। তাই বীরভূম এবং বাংলাদেশের লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনায় জোরালো ঝড়বৃষ্টি হয়েছে।
শ্রীনন্দন মণ্ডল নামে নওদার ঘোড়ামারার এক ব্যক্তি খেতে গিয়েছিলেন। ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গাছতলায় আশ্রয় নেন। ঝড়ে সেই গাছের ডাল ভেঙে ঢুকে যায় তাঁর গলায়। মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাল বার করে তাঁকে আইসিইউয়ে রাখা হয়েছে।
আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টির স্বস্তি সাময়িক। এই প্রভাব কেটে গেলেই ফের তাপমাত্রা মাথাচাড়া দেবে। পাল্লা দিয়ে বাড়বে অস্বস্তিও।