Advertisement
E-Paper

চিড়িয়াখানার ময়ালছানা বনে যেতে পারবে কি

সম্ভাবনা। কেননা প্রথম প্রশ্নটাই হল, ওই ময়ালেরা প্রকৃতির কাছে যেতে পারবে কি না? দার্জিলিঙের চিড়িয়াখানায় জন্মানো লাল পান্ডারা জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার পরে এই প্রশ্নটাই ঘোরাফেরা করছে চি়ড়িয়াখানা এবং জ়ু অথরিটি বা রাজ্য চিড়িয়াখানা পর্ষদের অন্দরে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৩৮
কিলবিল: চিড়িয়াখানার ময়ালছানা। নিজস্ব চিত্র

কিলবিল: চিড়িয়াখানার ময়ালছানা। নিজস্ব চিত্র

বন্যেরা বনে সুন্দর ঠিকই। কিন্তু চিড়িয়াখানা যাদের আঁতুড়ঘর এবং শৈশবের উঠোন, সেই বুনোরা জঙ্গলে যাওয়ার সুযোগ পেলে সুন্দর হয়ে উঠতে পারবে তো? প্রশ্নটা উঠছে আলিপুর চিড়িয়াখানায় জন্মানো ময়াল সাপের বাচ্চাদের প্রকৃতির কোলে ফেরানোর সম্ভাবনাকে ঘিরে।

সম্ভাবনা। কেননা প্রথম প্রশ্নটাই হল, ওই ময়ালেরা প্রকৃতির কাছে যেতে পারবে কি না? দার্জিলিঙের চিড়িয়াখানায় জন্মানো লাল পান্ডারা জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার পরে এই প্রশ্নটাই ঘোরাফেরা করছে চি়ড়িয়াখানা এবং জ়ু অথরিটি বা রাজ্য চিড়িয়াখানা পর্ষদের অন্দরে। কিন্তু সরকারি ভাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা হচ্ছে না।

সরীসৃপ বিশারদ অনির্বাণ চৌধুরী এবং তিন প্রাণিবিজ্ঞানী তানিয়া চট্টোপাধ্যায়, জয়িতা দত্ত হাজরা ও ঋক চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গত জুনে চিড়িয়াখানার অন্দরে ‘রেটিকুলেটেড’ ও ‘বার্মিজ’ ময়ালের ডিম কৃত্রিম ভাবে ফুটিয়ে বাচ্চাগুলিকে পৃথিবীর আলো দেখানো হয়। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, বর্তমানে ৫০টি বাচ্চা বেঁচে আছে। এর সঙ্গে রয়েছে ২০১৬ সালে জন্মানো ‘রক পাইথন’-এর কয়েকটি বাচ্চাও। কাচের খাঁচার ঘেরাটোপে কিলবিলিয়ে বেড়ে উঠছে ওরা। খিদে পেলেই গিলে নিচ্ছে টিকটিকি, ছোট ছোট ব্যাং!

চিড়িয়াখানার একাংশ বলছেন, এই সব সর্পশাবক বড় হয়ে উঠলে তাদের চিড়িয়াখানায় রাখা মুশকিল। সে-ক্ষেত্রে তাদের কয়েকটিকে রাজ্যের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় পাঠানো যেতে পারে। কেন্দ্রীয় জু অথরিটির অনুমতির ভিত্তিতে ভিন্‌ রাজ্যের চিড়িয়াখানার সঙ্গে প্রাণী বিনিময়ও করা যায়। সূত্রের খবর, রেটিকুলেটেড ময়াল সাপ দেশের বেশি চিড়িয়াখানায় নেই। ফলে বিনিময়ে ব্যবস্থায় দরাদরির ক্ষেত্রে আলিপুরের সুবিধাই হবে। কিন্তু সেই বিনিময় সময়সাপেক্ষ। কয়েকটি ময়ালকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেরাতে পারলে অন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করা যাবে বলে মনে করছেন জ়ু অথরিটির কিছু কর্তা।

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে ময়াল সাপ দেখা যায়। সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণবাবু জানান, পশ্চিমাঞ্চলে রক পাইথন এবং উত্তরবঙ্গে মূলত বার্মিজ ময়ালের দেখা মেলে। বার্মিজ ময়াল আছে সুন্দরবনেও। কিছু দিন আগেই পাথরপ্রতিমায় ওই প্রজাতির একটি ময়াল পাওয়া গিয়েছিল। ‘‘তবে সুন্দরবনের জঙ্গলে বার্মিজ ময়ালের সবিস্তার তথ্য জানা নেই। এ রাজ্যে তো নেই-ই, আন্দামান-নিকোবর বাদ দিলে দেশের জঙ্গলে রেটিকুলেটেড পাইথনের বাস নেই,’’ বলেন অনির্বাণবাবু। তাই বার্মিজ ও রক পাইথনকে জঙ্গলে ফেরানো যেতে পারে বলে করছেন বনকর্তাদের অনেকে।

কিন্তু চি়ড়িয়াখানার সাপ কি জঙ্গলে গিয়ে মানিয়ে নিতে পারবে? ‘‘ওরা তো জ্যান্ত প্রাণী খাচ্ছে। তাই জঙ্গলে শিকার ধরে খেতে অসুবিধা হবে না,’’ বলেন আশিসবাবু। তবে সরীসৃপ বিশারদদের একাংশের বক্তব্য, যত বেশি সময় ওরা কৃত্রিম পরিবেশে থাকবে, ততই জঙ্গলে মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে।

এ ব্যাপারে রাজ্য জ়ু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, দার্জিলিং চিড়িয়াখানার অন্দরে জন্মানো দু’টি লাল পান্ডাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ছা়ড়পত্র মিলেছে। এই ছাড়পত্র দেন রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপাল। ‘‘ময়ালদের ক্ষেত্রেও তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ময়ালদের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি,’’ বলেন বিনোদবাবু।

Alipore Zoo Reticulated Python Snake চিড়িয়াখানা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy