ছবি: সংগৃহীত
সমাবর্তনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে দেখে মুখ খুলেছেন প্রাক্তনীদের কেউ কেউ। আবার এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়়তে হবে আশঙ্কা করে আমন্ত্রিত হয়েও শুক্রবার শান্তিনিকেতনমুখো হননি প্রাক্তনীদের একাংশ। তাঁরা যে অনন্য প্রতিষ্ঠানের শরিক ছিলেন, তার প্রতীক হিসেবে ছাতিম পাতাটা পরবর্তী প্রজন্মকে দেখাতে না পারার দুঃখ তাঁরা আগেই স্বীকার করেছিলেন। এ বার সমাবর্তনের চেহারা তাঁদের যন্ত্রণা আরও বাড়়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন এ বার হয়েছে পাঁচ বছর পরে। আচার্যের উপস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ সমাবর্তন ধরলে অপেক্ষা ছিল ১০ বছরের। এই সময়ের মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেছেন, তাঁদের সকলকেই প্রথামাফিক সমাবর্তনে আমন্ত্রণ করেছিল বিশ্বভারতী। কিন্তু শান্তিনিকেতনের বরাবরের রেওয়াজ ছাতিম পাতা এ বার আচার্য তুলে দেবেন না জেনে অনুষ্ঠানে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন আমন্ত্রিতদের কেউ কেউ। আবার কারও আপত্তি নরেন্দ্র মোদীর মতো বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভাষণে। এবং সমাবর্তন শেষে এই প্রাক্তনীরা সমস্বরে সেই দাবিই তুলছেন, যা শুক্রবারই উঠতে শুরু করেছিল। এঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী হলেই পদাধিকার বলে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হবেন, শান্তিনিকেতনের এ বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ব্যবস্থা অবিলম্বে বদলানো উচিত!
স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি বিশ্বভারতী থেকে করে অধুনা দার্জিলিঙের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, এক প্রাক্তনীর কথায়, ‘‘মনমোহন সিংহের রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে কারও ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি অন্তত শিক্ষাজগতের মানুষ ছিলেন। নরেন্দ্র মোদী শান্তিনিকেতনে এসে পড়়ুয়া ও প্রাক্তনীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করবেন, এটা মন থেকে মানতে পারিনি। তাই শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রণপত্র পেয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ সমাবর্তনে কী হয়েছে, তার খবর এঁরা সকলেই কাগজে পড়়েছেন। ওই প্রাক্তনীর বক্তব্য, ‘‘মনে মনে ভাবার চেষ্টা করেছি, সমাবর্তন সেরে স্বয়ং কবিগুরু মঞ্চ থেকে নামছেন আর ‘রবি, রবি’ চিৎকার হচ্ছে! নাহ্, ভাবা যাচ্ছে না!’’
মালদহে কর্মরত আর এক প্রাক্তনীর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রীর সময় হবে না বলে ছাতিম পাতা দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অসুবিধে আছে বলে জলের বোতল নিয়ে ঢোকা যাবে না। তা হলে ছাত্র-ছাত্রী বা প্রাক্তনীদের আবেগ, ভাবনার চেয়ে ‘ভিআইপি’র অগ্রাধিকার বেশি? তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডিগ্রির শংসাপত্র তো সব বিশ্ববিদ্যালয় দেয়। শান্তিনিকেতন অনন্য তার নিজস্বতা, তার পরম্পরার জন্য। সেই গর্বের সঙ্গে আপস করা হচ্ছে জেনে সমাবর্তনে যাইনি।’’
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য শনিবার জানিয়েছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে না আসার কথা কেউ তাঁদের জানাননি। অস্থায়ী উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে পান থেকে চুন খসলেও উপাচার্যকে দায় নিতে হয়। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি পরম্পরা বজায় রেখে সব সুষ্ঠু ভাবে করার। কিন্তু নিয়ম-কানুন, ব্যবস্থার নানা বাধা ছিল। সমাবর্তনে যে চিৎকার নিয়ে এত কথা হচ্ছে, ওখানে বসে আমাকেও তো সে সব শুনতে হয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy