ভোট ঘোষণা হয়েছে শনিবার। তার সপ্তাহখানেক আগেই কোচবিহারের জেলাশাসকের দফতরে পৌঁছে গিয়েছে ব্যালট বক্স।
ছ’টির মধ্যে উত্তর দিনাজপুর এবং কোচবিহার ছাড়া বাকি চারটিই জিতেছিল বিরোধীরা। পরে ধীরে ধীরে সেই চারটি জেলা পরিষদ কব্জা করে তৃণমূল। শনিবার পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পরে শাসকদলের কাছে এখন তাই বড় পরীক্ষা সব ক’টি জেলায় নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা। পরিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণে এই কাজে তৃণমূলের প্রধান বাধা বিজেপি। একান্ত আলোচনায় সে কথা মানছেন অনেক নেতাই। একই সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় বাম-কংগ্রেস আগের মতো শক্তি ধরে রাখতে পারবে কিনা, তা-ও দেখার।
বিরোধী ভোট যত ভাগ হবে, ততই তৃণমূলের লাভ। এই সরল পাটিগণিতের জন্য রাজনৈতিক পণ্ডিত হওয়ার দরকার নেই। তৃণমূলের অন্দরে এই অঙ্ক নিয়েই এখন জোরদার আলোচনা। একই সঙ্গে চুলচেরা বিশ্লেষণ, কোন জেলা বামেরা শক্তিশালী আর কোন জেলায় কংগ্রেস। আবার কোন জেলার কোনও অঞ্চলে বিজেপি কতটা শক্তি বাড়িয়েছে, তারও হিসেব চলছে শাসকদলে।
সেই সূত্রেই উঠে এসেছে কয়েকটি নাম। যেমন, ডুয়ার্স। আলিপুরদুয়ারে জেলা পরিষদে এই মুহূর্তে ১ জন বিজেপি সদস্য। সেখানে ৬টি পঞ্চায়েত সমিতির একটিও বিজেপি জেতেনি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৯৯টি আসনের মধ্যে ২০৮টি জিতেছিল তৃণমূল। দলবদল করিয়ে বাম-কংগ্রেস-বিজেপির থেকে ছিনিয়ে সেই সংখ্যা পরে তারা বাড়িয়ে করে ৭২৪টি। বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েতে সদস্য সংখ্যা সেখানে ১৭ জন। একই ভাবে জলপাইগুড়ি জেলাতেও পঞ্চায়েতের নিচুতলায় কিছু আসন জিতলেও জেলা পরিষদে এঁটে উঠতে পারেনি গেরুয়া বাহিনী।
বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, এই ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। বিজেপির শক্তি বেড়েছে তার পরের বছর লোকসভা ভোটের সময় থেকে। কোচবিহার লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা, বিধানসভায় মাদারিহাট আসনটি জয় কিন্তু তারও পরের ঘটনা। তাই পাঁচ বছরের পুরনো হিসেব দিয়ে স্পষ্ট করে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা ঠিক নয়।’’
২০১৬ সালে বিমল গুরুঙ্গের নেতৃত্বাধীন মোর্চার সঙ্গে জোট ছিল বিজেপির। গুরুঙ্গের সমর্থন পাওয়ার ফলেই মাদারিহাট জয় সহজ হয়েছে, বলছেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের কথায়, এখন সেই গুরুঙ্গও নেই, আর সেই ডুয়ার্সও নেই। বরং সাত চা বাগান খোলার আশ্বাস দিয়েও তা পূরণ করতে পারেনি বিজেপি। উল্টে তৃণমূল পাঁচটি বাগান খুলে দিয়েছে।
এর পরেও কিন্তু তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ মেনে নিচ্ছেন, পরীক্ষা কঠিন। ঠিক যেমন কঠিন লড়াই অপেক্ষা করে আছে কোচবিহারেও। বাংলাদেশ সীমান্ত ও অসম সীমানা ঘেঁষা এই জেলায় বিজেপির শক্তি যে বাড়ছে, তা অস্বীকার করতে পারছেন না তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। যদিও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বা মোহন শর্মার মতো তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতারা জোর গলায় বলছেন, বিরোধীরা দাঁত ফোঁটাতে পারবে না। সৌরভ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে মানুষ। তাই বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাবে না।’’
তৃণমূলের কাছে আরও দুই কঠিন পরীক্ষা দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ। এই দুই জেলাতেই বাম-কংগ্রেসের ভাল শক্তি। মালদহে বিজেপিও শক্তি বাড়াচ্ছে। এবং এই দুই জেলাতেই তৃণমূলের সব থেকে বড় সমস্যা গোষ্ঠী কোন্দল। এই ঝগড়া থামাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বারবার ধমক দিয়েছেন যুযুধান নেতাদের। দক্ষিণ দিনাজপুরে বারবার বদল হয়েছেন দলের জেলা সভাপতি। তবু দুই জেলার কোথাওই একজোট হতে পারেনি দল, মানছেন তৃণমূল নেতারা। তুলনায় উত্তর দিনাজপুরে শাসকদলের অবস্থা ভাল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নাড্ডা, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং নেতা রাহুল সিংহ— এঁরা সকলেই এখন উত্তরবঙ্গে। তাঁদের কথায়, যত কম সময় ভোটের মনোনয়ন পেশের জন্য রাখা হয়েছে এবং যত বেশি সময়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য রাখা হয়েছে, দু’টোই সন্দেহজনক। উল্টো দিকে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাবে না। তাই অভিযোগ তুলছে।’’
সব মিলিয়ে, নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরপরই পঞ্চায়েত ভোটের উত্তাপ চড়তে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy