পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ‘বিভাজনের রাজনীতি এবং সংস্কৃতি’র মোকাবিলায় বাংলা নববর্ষকে হাতিয়ার করেছেন বামপন্থী এবং উদারপন্থী শিল্পী-কলাকুশলী ও সাধারণ মানুষ। বিভাজনের বিপরীতে সম্প্রীতির বার্তা দিতে গত বছর বাংলা নববর্ষে মঙ্গলযাত্রা করেছিলেন তাঁরা। এ বার নববর্ষেও অব্যাহত থাকল সেই কর্মসূচি।
বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ পালনের ধাঁচে গত বছর, অর্থাৎ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দের শুরুতে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছিল গড়িয়া থেকে যাদবপুর। ১৪২৫ বঙ্গাব্দের ১ লা বৈশাখ রবিবার অবশ্য দু’টি শোভাযাত্রার সাক্ষী থাকল দক্ষিণ কলকাতা। একটি গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। অন্যটি সুকান্ত সেতু থেকে ঢাকুরিয়া।
গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রায় এ দিন কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে পা মেলান সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের শিল্পীরা। সুকান্ত সেতু থেকে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত শোভাযাত্রায় যোগ দেন নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ। দু’টি শোভাযাত্রারই আয়োজক ছিল ‘বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ’।
পরিষদ সূত্রের খবর, প্রথমে গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর পর্যন্ত একটিই শোভাযাত্রার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে হাঁটতে কারও কারও আপত্তি থাকায় পরে সুকান্ত সেতু থেকে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত আর একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। আয়োজকদের অবশ্য দাবি, কোনও মতান্তরের ফলে দু’টি আলাদা শোভাযাত্রা হয়নি। একটি শোভাযাত্রার আয়োজক প্রদীপ সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘শোভাযাত্রার শুরুর স্থান নিয়ে বিভিন্ন মতামত এসেছিল। শেষ পর্যন্ত সবটা করে ওঠা যায়নি। তাই আলাদা করা হয়েছে। অন্য কোনও কারণ নেই।’’ আর এক আয়োজক ঊর্মি রহমানের কথায়, ‘‘অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি থাকাতেই দু’টি শোভাযাত্রা করতে হয়েছে।’’ আগামী বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশাবাদী আয়োজকেরা। সোনারপুরের মকরমপুরের সংখ্যালঘু মানুষেরা অংশ নেন এ দিনের শোভাযাত্রায়। প্রদীপের কথায়, ‘‘সম্প্রীতির প্রশ্নে মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের মতো এ বঙ্গেও করা গেলে অন্য মাত্রা পাবে।’’
তবে যাদের বিরুদ্ধে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা, সেই বিজেপি-ও এ দিন নববর্ষ পালনে পিছিয়ে থাকেনি। আগে বিশেষ না করলেও এ বছর বিজেপি ভারতীয় জাদুঘরে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছে। তবে অনুষ্ঠানের কোথাও বিজেপির নাম ব্যবহার করা হয়নি। বঙ্গ উৎসব নামে একটি মঞ্চের তরফে অনুষ্ঠানটি হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র বিলি হয়েছে বিজেপির রাজ্য দফতর থেকে। কেন্দ্রীয় জলম্পদ ও নদী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল এ দিন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নববর্ষ পালনের কর্মসূচিতে অংশ নেন তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক এবং কাউন্সিলররাও। ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁকুড়গাছিতে ছিলেন সাধন পাণ্ডে। বিধাননগরে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে পথে নামেন কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy