Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

বাহিনী নিয়ে হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে নবান্ন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করতে হবে।

West Bengal state government and State Election Commission plea before Supreme Court on Panchayat Election

রাজীব সিংহ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং টিএস শিবজ্ঞানম (বাঁ দিক থেকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ১২:৩১
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলে কলকাতা হাই কোর্টের যে নির্দেশ, তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন! শনিবার শীর্ষ আদালত বন্ধ থাকায় ‘ই-ফাইলিং’এর মাধ্যমে আবেদন জানানো হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের ওই রায়ের পর বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছিলেন, চ্যালেঞ্জ নয়, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই চলবেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হাই কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর করব।’’ শুক্রবার রাজীব জানান, সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। যদিও বিরোধী নেতৃত্বের একাংশ গোড়া থেকেই মনে করছিলেন, হাই কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে রাজ্য সরকার। ঘটনাচক্রে, সেই ‘পূর্বাভাস’ মিলে গিয়েছে।

সূত্রের খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশন আবেদনে জানিয়েছে যে পঞ্চায়েত ভোটে বাংলার সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি নেই। কমিশনের এই ‘অবস্থান বদলের’ সমালোচনা করে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘যখন নির্বাচন কমিশনার হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে নেওয়ার কথা বলেছিলেন, তখনও রাজ্য সরকারের নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি। নির্দেশ পাওয়ার পরে অবস্থান বদলেছেন তিনি।’’

পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। তাঁদের নোটিস না-পাঠিয়ে একতরফা শুনানির মাধ্যমে রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন যাতে হাই কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ পাওয়ার চেষ্টা করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ক্যাভিয়েট। ডালুর আইনজীবী ঋজু ঘোষাল শুক্রবার বলেন, ‘‘যে হেতু পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের রায় আমাদের পক্ষে গিয়েছে, তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে।’’

প্রসঙ্গত, ডালুর মামলার প্রেক্ষিতেই গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) কলকাতা হাই কোর্ট পঞ্চায়েত ভোটে ‘স্পর্শকাতর এলাকায়’ কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায়ের ‘ব্যাখ্যা’ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। ‘স্পর্শকাতর এলাকা’ চিহ্নিত হয়নি বলে হাই কোর্টকে জানিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন রায় সংশোধনের আবেদন জানানোর পরে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) স্পষ্ট ভাষায় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। অর্থাৎ, হাই কোর্টের নির্দেশমতো শনিবারের মধ্যেই কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চেয়ে আবেদন জানাতে হত। কিন্তু তার আগেই শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানো হল।

সরকারি একটি সূত্রের দাবি, নবান্ন মনে করছে, আইন অনুযায়ী পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্যের উপর। দস্তুর হল, কোথায় কত পুলিশ লাগবে, নির্বিঘ্নে ভোট করাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কী কী পদক্ষেপ করা দরকার, তা রাজ্যের কাছে জানতে চাইবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্বাচনী নিরাপত্তার কাজ সম্পন্ন করবে কমিশন। অর্থাৎ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত খুঁটিনাটি রাজ্য সরকারই কমিশনকে অবহিত করবে। নবান্ন মনে করছে, হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্যকে এড়িয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে। সে কারণেই সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE