Advertisement
E-Paper

ব্যান্ডেল চিজ-কে তুলে ধরতে উৎসুক রাজ্য

মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিশ্ববাংলা’ ভাবনায় রাজ্যের চেনা-অচেনা সম্ভাবনাময় সব উৎকর্ষকেই মেলে ধরার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সদ্য জিআই-তকমাপ্রাপ্ত রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া থেকে শুরু করে বালুচরী, মসলিন, পটচিত্র, নকশি কাঁথার প্রসার-প্রচারের ছক কষা হচ্ছে।

ব্যান্ডেল চিজ। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যান্ডেল চিজ। —নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০২
Share
Save

কাচের শোকেসে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ইতালির কুলীন চিজের সঙ্গে ঘাড় সোজা করে লড়ে যাচ্ছে সে। হুগলির ব্যান্ডেলের এই ভূমিপুত্রের নামডাক নিউমার্কেট, থুড়ি হগ সাহেবের বাজারের জন্মের সময় থেকেই।

মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিশ্ববাংলা’ ভাবনায় রাজ্যের চেনা-অচেনা সম্ভাবনাময় সব উৎকর্ষকেই মেলে ধরার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সদ্য জিআই-তকমাপ্রাপ্ত রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া থেকে শুরু করে বালুচরী, মসলিন, পটচিত্র, নকশি কাঁথার প্রসার-প্রচারের ছক কষা হচ্ছে। এই তালিকাতেই এ বার শিকে ছিঁড়ছে ‘ব্যান্ডেল চিজ’-এর বরাতে। কয়েক শতক ধরে মুগ্ধ ভক্তকুল গড়ে উঠলেও বাংলার নিজস্ব এই চিজ এখনও কুটির শিল্পের স্তরেই রয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনলজি অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৎপরতায় ব্যান্ডেল চিজের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা জরিপ করা ও উৎপাদকদের অর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প সদ্য শুরু হয়েছে। এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে উচ্চশিক্ষা দফতরের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিভাগ।

এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘‘ব্যান্ডেল চিজের ঐতিহাসিক নথি খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে পরীক্ষাগারে এর উপাদান খুঁটিয়ে দেখাটা জরুরি। এই চিজের মান নির্দিষ্ট করে প্যাকেজিং দরকার। সেই লক্ষ্যেই প্রকল্পটা চলছে।’’ ইতিহাসের সূত্র বলছে, সন্দেশের ছানার মতোই এই চিজ তৈরির কসরতও বাঙালিরা পর্তুগিজদের থেকে শিখেছে। তবে এর রূপকারেরা এখন আরামবাগ লাইনের গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছেন। গোয়ালাদের ঘরোয়া রীতিতে চিজ তৈরির পরে ঘুঁটের আগুনের ধোঁয়ায় স্মোকিংয়ের বন্দোবস্ত।

বাঙালির কাছে এই চিজের ঠিকানা অবশ্য নিউমার্কেট। কয়েক প্রজন্মের নিউমার্কেট-রোম্যান্সের সঙ্গে মিশে আছে ধোঁয়াগন্ধ নোনতা স্বাদের এই চিজ। সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় বলছিলেন, ‘‘জ্ঞান হওয়া ইস্তক ব্যান্ডেল চিজ খাচ্ছি। রায়বাড়ির সবাই এর জন্য পাগল।’’ নিউমার্কেটের নাহুমের কেক-বিপণির সঙ্গে এক সারিতে কোন চার-পাঁচটি দোকানে ব্যান্ডেল চিজ মিলবে, তা যে কেউ দেখিয়ে দেবেন। তাদেরই একটির কর্তা কৃষ্ণকান্ত ঘাটা বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলায় সত্যজিৎ রায়কে এই চিজের টানে কত বার আসতে দেখেছি! পরে ড্রাইভারকে পাঠাতেন।’’ সত্যজিতের বউমা ললিতাদেবী এখনও নিয়মিত টুকটুক করে ব্যান্ডেল চিজ কিনে আনেন! বললেন, ‘‘শুকনো শক্ত স্মোক্ড চিজের খণ্ড জলে ভিজিয়ে নরম করতে হয়। তার পরে ফালি কেটে টোস্টে টম্যাটো বা লেটুসে বসিয়ে খেলে মন ভাল হয়ে যায়!’’

রাখিপূর্ণিমা দাশগুপ্ত, জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে চিরঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়— কলকাতার নামী শেফরাও ব্যান্ডেল চিজের মাহাত্ম্য নিয়ে একমত। টোস্ট, স্যালাড, স্প্যাগেতির সঙ্গতে বা কিশ-পাতের আদলে ব্যান্ডেল চিজ নানা ভূমিকাতেই মানানসই। নিউমার্কেটে সাদা ও ধূসররঙা (স্মোক্ড) ছোট সন্দেশের আকারে ব্যান্ডেল চিজ বিকোয় ভূরি-ভূরি। যাদবপুরের শিক্ষক তথা প্রকল্পটির নির্দেশক দেবব্রত বেরার কথায়, ‘‘প্যাকেজিংয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে উৎপাদনের বিষয়টা নিশ্চিত করার কাজ চলছে। এই চিজ থেকে মুখরোচক খাবার তৈরিরও কাজ এগিয়েছে, যা বিপণনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।’’

ব্যান্ডেল চিজ চিজ Bandel Cheese Bandel Cheese

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}