প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের ১৯টি জেলায় তফসিলি জাতি ও উপজাতির প্রায় ৩০ হাজার মহিলাকে বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপার্জনের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার রাজ্যের সমস্ত ব্লক ও পুরসভায় ৫০০টি বিউটি পার্লার তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে তফসিলি জাতি-উপজাতি বিত্ত নিগম। নবান্নের খবর— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, গ্রামের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির যুবতীরা স্বনির্ভর হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা পান। তাই দ্বিমুখী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে তফসিলি বিত্ত নিগম। এক দিকে এই মহিলাদের সম্মান বাড়ানো, অন্য দিকে আয়ের পথ প্রশস্ত করার বিষয়টি মাথায় রেখেছে তারা।
নিগমের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে প্রথম বিউটি পার্লার কোর্স চালুর সময়ে প্রায় ৯১ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। আবেদনকারী মহিলারা সকলেই ছিলেন তফসিলি জাতি-উপজাতির। মাধ্যমিক পাশ এই মহিলাদের থেকে প্রায় ৩০ হাজারকে বেছে নিয়ে চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ওই মহিলাদের অধিকাংশই এখন নিজেদের এলাকায় বিউটিশিয়ানের কাজ করে মাসে পাঁচ থেকে পনেরো হাজার টাকা আয় করছেন।
বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের দাবি, ‘‘দেশের মধ্যে এই ধরনের প্রশিক্ষণ আগে কোথাও হয়নি। কেন্দ্রের ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারকে প্রথম পুরস্কার দিয়েছে। আমরা তাই ৫০০ পার্লার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ নিগম সূত্রের খবর, এক-একটি পার্লার তিন থেকে চার জন মহিলা চালাবেন। পার্লার তৈরির জন্য নিগমই টাকা দেবে।
সরকারি উদ্যোগে বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রানাঘাটের উত্তর নাসরার তাপসী মণ্ডল। তিন ছেলে-মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাপসীর কথায়, ‘‘রানাঘাট রেললাইনের ধারে চোলাই মদের ব্যবসা করতাম। অন্ধকার জগতে চলে যাচ্ছিলাম। একদিন আমাকে এক জন এসে বললেন, বিউটিশিয়ানের ট্রেনিং হবে। তুমি শিখবে? পয়সা লাগবে না। আমি রাজি হয়ে গেলাম। চার মাস ট্রেনিং নিয়ে এখন বাড়ির মধ্যেই পার্লার করেছি।’’ এর জন্য বিত্ত নিগম ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে তাঁকে। এর অর্ধেক শোধও করে ফেলেছেন তাপসী। তিনি বলছেন, ‘‘বিয়ে, পুজোর মতো অনুষ্ঠানে ভালই কাজ হয়। তবে শীতে পার্লারে মেয়েরা তুলনায় কম আসেন।’’
কারা এই বিউটিশিয়ান কোর্সের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন? কত টাকা খরচ হচ্ছে? প্রশ্নের উত্তরে উপেনবাবু জানান, ‘ফ্লোরা’ নামে একটি সংস্থা প্রথমে প্রশিক্ষণ দেয়। তার পরে এগিয়ে আসেন শেহনাজ হুসেন। প্রশিক্ষণ দিতে মাথা-পিছু খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। রাজবংশী, নমঃশূদ্র থেকে শুরু করে ধোপা, বাউড়ি, চামার, বাগদি, সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, কোরা, বেদিয়া তামাং— সব গোষ্ঠীর মেয়েরাই রয়েছেন প্রশিক্ষিতের তালিকায়।
বিত্ত নিগমের এক শীর্ষ কর্তা জানালেন, বিউটিশিয়ানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকটি প্রশ্নের ভিত্তিতে সম্প্রতি সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, জাতপাতের তোয়াক্কা না করে তথাকথিত ‘উচ্চবর্ণের’ মহিলারাও এঁদের কাছে ফেশিয়াল করাতে বা চুল কাটাতে আসছেন। কেউ কেউ এঁদের বাড়িতেও ডেকে নিচ্ছেন। এর ফলে রূপচর্চার ‘সরকারি’ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই নারীদের সমাজে মর্যাদা বেড়েছে। আর ভাল উপার্জন তো হচ্ছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy