যে রাজ্যে নতুন রেললাইন পাতা হবে, সেই রাজ্যকে খরচের কিছুটা বহন করতে হবে বলে রেল মন্ত্রক যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা খারিজ করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। একাধিক রাজ্য অবশ্য রেল মন্ত্রকের এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু নবান্নের কর্তাদের যুক্তি, রাজ্যের কোনও রেল প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়তি খরচ হলে তার কিছুটা আর্থিক দায় নিতে পারে সরকার। নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে রেলের খরচের দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মানা হবে না। এ ভাবে কোনও রেল প্রকল্পের অংশীদার হবে না পশ্চিমবঙ্গ।
নবান্নের এই অবস্থানের ফলে রাজ্যের অন্তত ১৫টি রেললাইন পাতার প্রকল্পের কাজ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত একাধিক প্রকল্পও রয়েছে। প্রকল্পগুলি দিনের আলো দেখবে কি না, সে ব্যাপারে মুখে কুলুপ রেলকর্তাদের।
জমি অধিগ্রহণের বাধা ও কোষাগারের করুণ দশা— মূলত এই দুই যুক্তি দেখিয়ে নতুন লাইন পাতার কাজ থেকে কার্যত হাত গুটিয়ে নিচ্ছে রেল। পুরনো রেললাইন সংস্কারের কাজে অর্থ বরাদ্দ করলেও নতুন প্রকল্পের পুরো খরচ বহনে নারাজ রেল। এবং এই কারণে বছরখানেক আগে থেকেই সব রাজ্যকে চিঠি দিয়ে রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, রেললাইন পাতার কাজে কিছুটা আর্থিক দায়িত্ব নিক সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। লাইন পাতা হয়ে গেলে তা মেরামতি ও সংস্কারের দায়িত্ব রেলের। প্রকল্প লাভজনক না হলেও সেখানে ট্রেন চালিয়ে যাবে তারা।
রেল মন্ত্রকের দাবি, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, হরিয়ানা, ছত্তীসগঢ়, গুজরাট, ঝাড়খণ্ড তাদের রাজ্যের ৪১টি রেললাইন পাতার প্রকল্পে অংশীদার হতে চেয়ে ইতিমধ্যে সম্মতি জানিয়েছে। এই প্রকল্পগুলির প্রায় ২৫ থেকে ৬৭ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করবে ওই রাজ্যগুলি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এতে আপত্তি। নবান্নর তরফে রেল মন্ত্রককে সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের কী যুক্তি? প্রশাসনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, কেন্দ্র এ ভাবে তার সাংবিধানিক ও আর্থিক দায়িত্ব রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারে না। রাজ্যকে রেল প্রকল্পে অংশীদার হতে বলাও অনৈতিক। ওই কর্তার কথায়, ‘‘জমি অধিগ্রহণে আর্থিক সাহায্য দিতে হলে প্রয়োজনে তা করা যেতে পারে। গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পে এমন সাহায্য করাও হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে অংশীদার হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।’’ সূত্রের খবর, রেল প্রকল্পের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে জমি অধিগ্রহণ করবে না, সে সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে। এ বার রেল প্রকল্পে অংশীদার হওয়ার প্রস্তাবও েফরানোয় কাঁথি-এগরা, দিঘা-এগরা, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া, পাঁশকুড়া-ঘাটাল, মুকুটমণিপুর-পারশোলের মতো ১৫টির বেশি নতুন রেললাইন পাতার প্রকল্প আটকে গেল।
রেল-কর্তাদের বক্তব্য, গত দু’বছর ধরে বাজেটে রেলের নতুন প্রকল্প ঘোষণা করার চেয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দের উপরই জোর দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রক চাইছে, যে সব রাজ্যে বহু দিনের ঘোষিত প্রকল্প পড়ে রয়েছে, সেগুলির বাস্তবতা খতিয়ে দেখে দ্রুত কাজ শেষ করা হোক। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ আর আর্থিক চাপে ওই সব প্রকল্প শেষ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়েই অংশীদারির প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যগুলির দারস্থ হয়েছে রেল। কিন্তু মমতা-সরকারের এই অবস্থানে তারা ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে। ঘোষিত প্রকল্পগুলি নিয়ে কী করা হবে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না রেল-কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, যে সব জায়গায় নতুন লাইন পাতা হবে, সেখানকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। তা মাথায় রেখেই রাজ্যের উচিত কিছুটা খরচ বহন করা। অন্য রাজ্যগুলি এই উন্নয়নের যুক্তি মেনেই রেলের প্রস্তাব মেনে নিয়ে খরচের কিছুটা দায় নিতে রাজি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy