Advertisement
E-Paper

পুববাংলার অনুষঙ্গে পশ্চিম অর্থহীন

সেই মহাভারতের অসুর বলি রাজার পাঁচ ছেলের একজন ‘বঙ্গ’ হয়তো ছিল সুরবিরোধী অসুর পূজক ব্যক্তি। তাই হয়তো প্রাচীন পূর্বভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে, বিশেষ করে ‘বাঙ্গাল’ বিষয়ে উত্তর বা পশ্চিম ভারতে তেমন সশ্রদ্ধ উল্লেখ নেই।

সেবন্তী ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৩

সেই মহাভারতের অসুর বলি রাজার পাঁচ ছেলের একজন ‘বঙ্গ’ হয়তো ছিল সুরবিরোধী অসুর পূজক ব্যক্তি। তাই হয়তো প্রাচীন পূর্বভারতের বিভিন্ন অঞ্চল সম্পর্কে, বিশেষ করে ‘বাঙ্গাল’ বিষয়ে উত্তর বা পশ্চিম ভারতে তেমন সশ্রদ্ধ উল্লেখ নেই। এদেশে তাই ‘নিষাদ’দের মধ্যে এলে আর্যদের জাত যেত, দুঃসাহসিক আর্য যুবকেরা এদেশে যাতায়াত করলে তাদের ভালে ‘ব্রাত্য’ কলঙ্ক তিলক (অর্থাৎ একঘরে) এঁকে দেওয়া হত। পরে উত্তরাপথের উন্নাসিকতা হৃাস পেল, গৌড় বঙ্গও স্বীয় বিদ্যাবুদ্ধি কৃৎ-কৌশলের জোরে ব্রাহ্মণ্য সভায় প্রতিষ্ঠিত হল। এ হেন বঙ্গাঃ, বঙ্গাল, বঙ্গ থেকে বাংলা, বেঙ্গল প্রভিন্স; তারপর ওই পূর্ববঙ্গের নাড়ি ছেঁড়া স্মৃতিকাতরতায় অন্য একটি রাষ্ট্রের অবশিষ্ট বাংলার পশ্চিমবঙ্গ অর্জন। এ ভাবেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছি ‘পুববাংলা’ ছেড়ে এসে ‘পশ্চিম’ হয়ে।

অনেক দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গ নামটি নিয়ে বির্তক চলছে। বিদগ্ধজনেরা তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। কেউ বর্তমান অবস্থায় খুশি। জন্ম ইস্তক যা শুনেছেন, তাতেই স্বস্তি তাঁদের। এঁরা ক্যালকাটার কলকাতা হওয়ার সময়ও ওই যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তাতে মুম্বই, চেন্নাই হওয়া আটকায়নি। কেউ ‘বেঙ্গল’ নামে ঔপনিবেশিক গন্ধ পাচ্ছেন। কেউ ‘বাংলা’ নাম প্রস্তাবের জবাবে জানাচ্ছেন এতে প্রতিবেশী বাংলাভাষী রাষ্ট্রের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার মতো বিপদ দেখা দিতে পারে! এমনিতেই আমরা শিক্ষকরা ‘বাংলা’ নিয়ে দীর্ঘদিন নানা বিড়ম্বনায় রয়েছি। জীবনানন্দর বাংলা কি শুধুই এখনকার বাংলাদেশ? তাহলে পড়াবার সময় বাংলাদেশ বলতে হবে কার কার? সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’য় মৈমনসিংহ ফরিদপুরও আছে, আবার দেশভাগের আগে পরের মেদিনীপুর, কলকাতা, উত্তরবঙ্গও আছে। তা হলে এ কোন বাংলা?

এর পরের গোলটিই আমার কাছে হেঁয়ালির মতো। ওই যে উত্তরবঙ্গ, এটি কী উপায়ে পশ্চিমবঙ্গ হবে? অথচ সরকারি ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের একটি উত্তরবঙ্গ আছে! দক্ষিণের মানুষেরা কখনও দক্ষিণের বাসিন্দা বলেন না, উত্তরের মানুষদের বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে থাকে’। মজাটা এই বাকি ভারতের কাছে আমরা পশ্চিমবঙ্গের লোক! এই বিভাজনেই দূরত্ব বাড়ায়, অভিমানও- পশ্চিমবঙ্গের কাছে উত্তরবঙ্গ হয়ে ওঠে বন-জঙ্গল-তরাই-দুয়ার-পাহাড়ে ঘেরা অপরূপ ভ্রমণভূমি মাত্র! উত্তরবঙ্গে ছুটি কাটাতে যায় তাঁরা, পোস্টিং হলে বাংলার বাইরে নির্বাসন হয়েছে মনে করে!

সময় বদলায়। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় কিন্তু উত্তর-দক্ষিণের আড়াআড়ি ঘোচে না। বাংলাদেশ সেই ’৪৭-এই পূর্ব পাকিস্তান হয়ে অন্য দেশ। তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ক্রমশ এপারের খণ্ড পশ্চিমবঙ্গের থেকে পৃথক হয়ে গেছে। তাই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সেই পুববাংলার অনুষঙ্গে পশ্চিম হওয়ার কোনও অর্থ থাকে না। বাংলা না হোক ‘বঙ্গ’ নাম হতেই পারে। নামটি ওজনে ভারী, প্রাচীনত্বেও। মধুসূদন দত্ত থেকে রঙ্গলাল, নীহাররঞ্জন রায়, সুকুমার সেন, আহমেদ শরীফ সহ অনান্য বিশিষ্টজনে বঙ্গের প্রাচীনত্বের অজস্র নমুণা প্রমাণ সহ পেশ করেছেন। প্রাচ্যের বৈশিষ্ট্যই হল প্রাচীনের প্রতি সমর্থন! তাই ‘বঙ্গ’ বা বাংলা (বাঙ্গালা-র বদলে) নামের মধ্যে দিয়ে উত্তর-পশ্চিম এক হয়ে যেতে পারে। রাজত্ব দক্ষিণে থাকলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজকন্যা আমাদেরই আছে ধরে নিয়ে দুয়োরানি হয়তো আত্মসান্তনায় খানিক হৃষ্ট হবে। ‘খুশ্ হলি না পারি কি?’ বেঙ্গল বাদ দিয়ে বঙ্গ বাংলা বঙ্গভূমি যেটা ইচ্ছে রেখে দিন শুধু উত্তর দক্ষিণ পশ্চিম বাদ দিয়ে।

state name change Purbabango West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy