Advertisement
E-Paper

শুরু হয়েও কেন থমকে গেল স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ, কী কী সুবিধা, অসুবিধাই বা কী, খুঁজল আনন্দবাজার ডট কম

চালু হয়েও বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্মার্ট মিটার বসানো। গত জুন মাসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা বন্ধ করেছিল রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু জনমানসে স্মার্ট মিটার নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন এবং কৌতূহল রয়েছে। সে ব্যাপারেই খোঁজ নিয়েছে আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০১
What are the advantages and disadvantages of smart meters

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রাজ্যের বেশ কিছু এলাকার জনবসতিতে শুরু হয়েছিল স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ। কিন্তু জনতার মধ্যে নানাবিধ প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। কোথাও কোথাও আন্দোলনও শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে গত জুন মাসে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর জানিয়ে দিয়েছিল, আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ। সে কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে প্রযুক্তির বিভিন্ন অগ্রগতির মতোই স্মার্ট মিটারও ভবিষ্যতে অবশ্যম্ভাবী। এখন বন্ধ রাখা হলেও পরবর্তী কালে রাজ্য সরকারগুলিকে সেই পথেই হাঁটতে হবে।

কিন্তু আমজনতার মধ্যে স্মার্ট মিটার নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে। রয়েছে বিভ্রান্তি এবং আশঙ্কাও। জনতার সেই সমস্ত প্রশ্ন, বিভ্রান্তি এবং আশঙ্কার জবাব নীচের প্রশ্নোত্তরে।

স্মার্ট মিটার কী?

এটি একটি ‘ইলেকট্রনিক ডিভাইস’। যা সাধারণ মিটারের মতোই বিদ্যুৎ খরচের পরিমাপ করে। এটির বিশেষত্ব হল, এই মিটার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ও গ্রাহকদের কাছে ‘রিয়্যাল টাইম’ তথ্য পাঠায়। অর্থাৎ, স্মার্ট মিটার থেকে মানবসম্পদ খরচ করে তথ্যসংগ্রহের কোনও প্রয়োজন হয় না। মানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কর্মীদের মিটার দেখে কত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে, তার হিসাব করার দরকার হয় না। শুধু বিদ্যুৎই নয়। স্মার্ট মিটার এখন ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস ও জলের ব্যবহার পরিমাপ করার ক্ষেত্রেও।

কেন এই পদক্ষেপ?

২০০৩ সালে সংসদে পাস হয়েছিল ‘মিটার রেগুলেশন’ সংক্রান্ত বিল। যা পরে আইন হয়। সেই আইন সংশোধন করা হয়েছিল ২০০৬ সালে। উপভোক্তা অধিকার বিষয়ক আরও কিছু বিষয় সংশোধিত হয়েছে ২০২০ সালে। তার ভিত্তিতেই ২০২৪ সালে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। যার অন্যতম ছিল, বিদ্যুৎ গ্রিডের আধুনিকীকরণের প্রথম ধাপ হিসাবে স্মার্ট মিটার বসানো হবে।

মোবাইল ফোনের মতোই প্রিপেড?

সাধারণ ভাবে অনেকেরই ধারণা, স্মার্ট মিটার বসালে বোধ হয় ‘আগে টাকা, পরে বিদ্যুৎ’ নীতিতে চলতে হবে। কিন্তু রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, এটি গ্রাহকদের উপর নির্ভর করে। কেউ প্রিপেড স্কিমেও স্মার্ট মিটার নিতে পারেন। কেউ পোস্টপেড স্কিম বাছতে পারেন। এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। পুরোটাই নির্ভর করছে গ্রাহকের ইচ্ছা এবং পছন্দের উপর।

শুরু করেও কেন বন্ধ?

স্মার্ট মিটার বসানোর আগে এর সুবিধাগুলি নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল। তাই স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে গ্রাহকদের বড় অংশের মধ্যে কিছু অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল। সেই কারণেই সাধারণ ভাবে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন সমস্ত সরকারি অফিস এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারে স্মার্ট মিটার ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্মার্ট মিটার কি বাধ্যতামূলক হবে?

ঘটনাপ্রবাহ তেমনই বলছে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মিটার প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি পুরোনো অ্যানালগ প্রযুক্তির সাধারণ মিটার উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট মিটার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। পুরনো প্রযুক্তির সাদা-কালো টিভি বা ট্রানজিস্টর এখন যেমন দুষ্প্রাপ্য, তেমনই দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে অ্যানালগ মিটারও। এখনই তা বিলুপ্তপ্রায়। তার জায়গায় এসেছে স্মার্ট মিটার। ‘বাধ্যতামূলক’ কি না, সে বিষয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের তরফে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর মতো সরাসরি জবাব মেলেনি। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই তাদের বক্তব্য, স্মার্ট মিটার ব্যবহারই এখন সঠিক পদক্ষেপ।

এর সুবিধা কী কী?

স্মার্ট মিটারগুলি স্বয়ংক্রিয় ভাবে ‘রিয়্যাল টাইম’ ও নির্ভুল তথ্য প্রদান করে বলে দাবি বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের। মিটার রিডিংয়ের জন্য আর মানবসম্পদের প্রয়োজন হয় না। ফলে মনুষ্যসৃষ্ট ত্রুটিরও (হিউম্যান এরর) কোনও সম্ভাবনা থাকে না। প্রিপেড বা পোস্টপেড— যে স্কিমেই গ্রাহক স্মার্ট মিটার নিন, ত্রৈমাসিক বা মাসিক বিল পরিশোধের সুযোগ থাকবে। অনেক সময়ে দেখা যায়, কোনও বাড়ি তালাবন্ধ থাকায় কর্মীরা মিটার দেখতে পারেন না। তখন ‘আনুমানিক’ বিল তৈরির অভিযোগ ওঠে। স্মার্ট মিটার বসালে এমন বিতর্কের কোনও অবকাশ থাকে না। স্মার্ট মিটারে দ্রুততার ত্রুটি শনাক্ত করে সেটি বদলে বসানো যায়। তাই দীর্ঘ সময় ধরে মিটার খারাপ থাকার কারণে আনুমানিক বিল আসার সম্ভাবনা নেই। ‘সোলার প্যানেল’ বসালেও একই স্মার্ট মিটার ব্যবহার করা যায়। স্মার্ট মিটারে বোঝা যায়, গ্রাহকেরা তাঁদের মাসিক বাজেটের কতটা বিদ্যুতের খরচে ব্যয় করবেন। স্মার্ট মিটারে ‘রিডিং’ এবং ‘বিলিং’ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং সহজ।

এত সুবিধা সত্ত্বেও আপত্তি উঠেছিল কেন?

বেশ কিছু এলাকায় স্মার্ট মিটার লাগানোর পরে সমাজমাধ্যমে নানা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে থাকে। কেউ কেউ দাবি করেন, স্মার্ট মিটার বসানোর পর তাঁদের বিদ্যুতের বিল অস্বাভাবিক বেড়ে যাচ্ছে। ভুল মিটার রিডিং ও বিলিং করা হচ্ছে। অনেকের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় পেতে শুরু করেন। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের দাবি, অভিযোগগুলি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করার পরে দেখা গিয়েছে, একটি অভিযোগেরও সারবত্তা নেই! ইচ্ছাকৃত ভাবে ও নিয়মিত বিদ্যুৎবিল বকেয়া রাখেন, এমন অল্পসংখ্যক গ্রাহক এবং সঙ্গে সরকারি সুবিধা ভোগ করেও ‘নাগরিক দায়িত্ব’ পালনে অনিচ্ছুক কিছু ‘অসাধু’ ব্যক্তির উস্কানিমূলক প্ররোচনায় গ্রাহকদের মনে স্মার্ট মিটার নিয়ে ‘ভ্রান্ত’ ধারণা তৈরি হয়েছিল। তবে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা মানছেন যে, তাঁদের তরফে আমজনতার মধ্যে স্মার্ট মিটার নিয়ে যে ‘সচেতনতা’ গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল, তাতে ঘাটতি ছিল।

বিদ্যুতের খরচ কি সত্যিই বাড়বে?

বিদ্যুৎ দফতরের একাধিক কর্তা ও বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাড়বে না। তাঁদের বক্তব্য, স্মার্ট মিটার বসানো হয় বিনামূল্যে। এ জন্য গ্রাহকদের কোনও খরচ বহন করতে হয় না। একইসঙ্গে সরকারি ভর্তুকি-সহ মাসিক স্ল্যাবের সুবিধাও পাওয়া যাবে। যে সমস্ত গ্রাহক তাঁদের ইচ্ছানুসারে প্রিপেড সিস্টেম পছন্দ নেবেন, তাঁদের বিদ্যুৎ খরচের উপর অতিরিক্ত ৩ শতাংশ ছাড় দেওয়ার বন্দোবস্তও আছে।

এতে বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা কতটা?

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার অধীনে স্মার্ট মিটার বসানো হচ্ছে। এগুলি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার তত্ত্বাবধানেই থাকবে এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও হবে বলেই দাবি সরকারি কর্তাদের। সরাসরি বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা নেই বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। যদিও একাধিক সংগঠনের অভিযোগ, ‘পিছনের দরজা’ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

রক্ষণাবেক্ষণে ঝক্কি থাকবে?

আধিকারিক থেকে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সাধারণ মিটারের তুলনায় বরং স্মার্ট মিটারের রক্ষণাবেক্ষণ বেশি সরল ও সন্তোষজনক।

(রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে)

Smart Meter Electricity Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy