Advertisement
E-Paper

কেমন মন্ত্রী উনি, সুর চড়ল বিরোধীদের

কোন আঁতাতে মন্ত্রী হলেন উনি— নারদ নিউজের গোপন ভিডিও সামনে আসার পরে বিরোধীদের প্রচারের মূল প্রশ্ন এটাই। এমনকী, শাসক দলের অনেকেও ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘দলটার আর কিছু রইল না। এ বার পুলিশই মিটিং-মিছিল করুক।’’

সৌমেন দত্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১১
অগ্রদ্বীপে গোপীনাথের মেলায় সাফাই অভিযানে ব্যস্ত স্বপন দেবনাথ। ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।।

অগ্রদ্বীপে গোপীনাথের মেলায় সাফাই অভিযানে ব্যস্ত স্বপন দেবনাথ। ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।।

কোন আঁতাতে মন্ত্রী হলেন উনি— নারদ নিউজের গোপন ভিডিও সামনে আসার পরে বিরোধীদের প্রচারের মূল প্রশ্ন এটাই।

এমনকী, শাসক দলের অনেকেও ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘দলটার আর কিছু রইল না। এ বার পুলিশই মিটিং-মিছিল করুক।’’

সম্প্রতি নারদ সংস্থার তরফে ২০১৪ সালে ভোটের আগে গোপন ক্যামেরায় তোলা জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার কথোপকথন প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, ‘স্বপন দেবনাথ, মন্ত্রী হয়েছেন স্রেফ আমার জন্য। মুকুলদাকে বলে আমিই ওকে মন্ত্রী বানাই। এমনিতে লোক ভাল। কিন্তু শুধু আমি বলেছি বলে মুকুলদাকে তাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন।”

খবরের কাগজে কথোপকথন হুবহু প্রকাশিত হতেই এ নিয়ে নড়াচড়া শুরু হয় জেলায়। বিরোধরা অভিযোগ তোলেন, এ সব যোগাযোগের জন্যই মন্ত্রী হয়েছএন উনি। কারণে এক দিকে দুর্নীতির খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন স্বপনবাবু, আবার অন্য দিকে মির্জার ‘সাহায্য’ ভোট-লুঠ চলেছে। এতেই মন্ত্রী হয়েছেন উনি। স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ এক নেতাও সোমবার বলেন, “ওই আইপিএস অফিসারের দাবিতে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। দল ক্ষমতায় আসার পরেও মুকুলবাবুর সঙ্গে দাদার (স্বপন দেবনাথ) তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। দলের এক বিধায়ক, বর্ধমান পুরসভার এক কাউন্সিলর এবং অবাঙালি এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মির্জার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় দাদার। সেখান থেকেই মুকুল রায়ের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ে।” তৃণমূল নেতারাও জানাচ্ছেন, স্বপনবাবুর যে কোনও অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মির্জা-দম্পতিকে দেখা যেত। শুধু তাই নয়, বালি-কেলেঙ্কারিতে যে সব নাম উঠে এসেছে, তাঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু স্বপন দেবনাথ ও মির্জার সঙ্গে যোগসাজস ছিল বলেও তাঁদের দাবি। এমনকী, কলকাতায় দলের এক সভায় স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ এক বিধায়ককে সবার সামনেই ‘উনি বালির টাকার ভাগ নেন’ বলে তোপ দেগেছিলেন দক্ষিণ দামোদরের এক নেতা।

যদিও কেউ তাঁকে মন্ত্রী করিয়ে দিয়েছেন, এ কথা মানতে চাননি স্বপনবাবু। এ দিন অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ মেলায় চরণ পালের আখড়ায় তদারকি করার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের কথায় কেউ মন্ত্রী হয়, এটাই প্রথম শুনলাম। উনি (ওই পুলিশ কর্তা) এক জন শিক্ষিত মানুষ হয়ে, এ রকম কেন বললেন বুঝলাম না। এ ব্যাপারে ওনার সম্যক জ্ঞান থাকা উচিত। উনি মিথ্যাচার করছেন।”

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক মাস আগে বর্ধমানের পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা তৃণমূলের বর্ধমান গ্রামীণের সভাপতি স্বপন দেবনাথ রাজ্য মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পান। তাঁকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে যোগ হয় প্রাণিসম্পদ দফতর। স্বপনবাবু আদতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও সমাজসেবার নানা কাজেও জড়িয়ে থাকতেন। ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে নাটক, যাত্রায় অভিনয় করতেও দেখা গিয়েছে তাঁখে। ফলে ‘ভাল মানুষ’ বলে পরিচিত স্বপনবাবুর নাম নারদ ভিডিওয় উঠে আসায় দলের অনেকেই বলেছেন, ‘এ তো হওয়ারই ছিল’। আবার পূর্বস্থলী, কালনার তৃণমূল কর্মী থেকে অনেক সাধারণ বাসিন্দাও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সুপারিশের কথা শুনে মনে হচ্ছে ওই পুলিশ কর্তার সঙ্গে গোপনে যোগসাজস ছিল স্বপনবাবুর।” এমনকী, ওই পুলিশ কর্তার সঙ্গে কাজ করা বর্ধমানের প্রাক্তন আর এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “মন্ত্রী হওয়ার পরেও স্বপনবাবু কিন্তু জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপারকে ‘স্যার’ বা ‘সাহেব’ বলে সম্বোধন করতেন। যা আমাদের কানে লাগত।” সেই সূত্র ধরে দলের একাধিক নেতাও বলেন, “মির্জা সাহেব তো আমাদের জেলায় তৃণমূলের ‘ডিফ্যাক্টো’ সভাপতি ছিলেন। স্বপনদা মন্ত্রী হওয়ার পরেও মির্জা সাহেবকে ‘জো হুজুর’ করে চলতেন। এখন এই সব ভিডিও দেখেশুনে তো মনে হচ্ছে, মুকুলদা যাতে তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন থাকে, সে জন্য তিনি ওই পুলিশ অফিসারকে চটাতেন না।”

সিপিএমেরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রহসন হয়েছিল। তৃণমূল একের পর এক বুথ দখল করে। পুলিশও অভিযোগে কান দেয়নি। গণনার দিন তো পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে জেলার বেশিরভাগ জায়গায় গণনাকেন্দ্র থেকে বিরোধীদের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা মেরে বের করে দেয় বলেও তাঁদের দাবি। তাঁদের আরও অভিযোগ, বর্ধমানের পুরভোটেও স্বপনবাবুর ছায়ায় পুলিশের সাহায্য নিয়ে ভোট-লুঠ করে তৃণমূল। সিপিএমের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগো উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “কত গভীর আঁতাত থাকলে তবেই না একজন পুলিশ অফিসার রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে স্থানীয় নেতাকে মন্ত্রী করার জন্য বলতে পারেন। স্বপনবাবু ও মির্জার এই আঁতাত কেন, কী জন্য— তা নিয়ে আমাদের প্রচার চলবে।” সিপিএমের পূর্বস্থলীর জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা সুব্রত ভাওয়াল বলেন, “স্বপনবাবুর মন্ত্রীত্ব নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিল! আমরা দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফ্লেক্স-ফেস্টুন করতে দিয়েছি।”

তবে বিরোধীরা যতই সুর চড়ান তা পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূলের নেতারা। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর দাবি, ‘‘যে যা বলে বলুক, এতে কিছু আসে যায় না।’’

narada news election TMC swapan debnath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy