Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বৈষম্য ঘুচবে কবে, সরব পার্শ্বশিক্ষকরা

এক যাত্রায় পৃথক ফল। আক্ষরিক অর্থেই। অথচ স্থায়ী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে হয় পার্শ্বশিক্ষকদের। যোগ্যতাও সমান। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশিও।

মধুরিমা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

এক যাত্রায় পৃথক ফল। আক্ষরিক অর্থেই। অথচ স্থায়ী শিক্ষকদের মতোই দায়িত্ব পালন করতে হয় পার্শ্বশিক্ষকদের। যোগ্যতাও সমান। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশিও।

তবু রাজ্যের স্কুলগুলিতে বিভিন্ন মাপকাঠিতে, বিশেষত পারিশ্রমিকের পরিমাণে পিছিয়ে রাখা হয়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের। স্থায়ী শিক্ষকদের মতো ক্লাস নিতে হলেও বেতন-কাঠামোয় তাঁরা একেবারে তলানিতে। নেই যথেষ্ট মর্যাদাও। বারে বারেই সরকারের দ্বারস্থ হয়েও সমস্যার সুরাহা হয়নি রাজ্যের পার্শ্বশিক্ষকদের।

স্থায়ী শিক্ষকদের মতো সম্মান, বেতন-কাঠামোয় সমতা এবং স্থায়ী পদে নিয়োগের দাবি পার্শ্বশিক্ষকেরা জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি বেতন সামান্য বাড়লেও তাতে সন্তুষ্ট নন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, এই বাজারে এত কম টাকায় দিন গুজরান হয় না। তাই বারবার পথে নামছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, আগে প্রাথমিক স্তরে পার্শ্বশিক্ষকদের ১০০০ টাকা দেওয়া হতো। ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ৫৪০০। ‘শিক্ষাবন্ধুরা’ পেতেন ২০০০ টাকা। পার্শ্বশিক্ষকেরা স্থায়ী শিক্ষকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষাবন্ধুরা অন্য কাজ সামলাচ্ছেন। কিন্তু সর্বশিক্ষা মিশনের আওতায় নিয়োজিত এই শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। তাই বিএড প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারেননি অনেক পার্শ্বশিক্ষকই।

২০১০ সালের বাম জমানায় পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব এলেও তা নিয়ে আলোচনা বিশেষ হয়নি বলে অভিযোগ। তবে তিন বছর অন্তর তাঁদের ৫% হারে বেতন বৃদ্ধির নির্দেশ কার্যকর হয়। ২০১০-এ প্রাথমিকে এবং উচ্চ প্রাথমিকে ওই হারে বেতন বেড়েছিল। ২০১৩-য় বেতন বেড়ে প্রাথমিকে ৫৬৭০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৭৯৬ টাকা হয়। চলতি বছরের ১ জুন আরও ৫% বৃদ্ধির ফলে বেতন বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৬০৪৮ এবং ৮১৮৬ টাকা। শিক্ষাবন্ধুদের বেতনও বেড়ে হয়েছে ৫৪০০। নামমাত্র বেতন বাড়িয়ে রাজ্য সরকার তাঁদের চাকরি স্থায়ী করার মূল দাবিটিই এড়িয়ে যেতে চাইছে বলে পার্শ্বশিক্ষকদের অভিযোগ।

রাজ্যে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক মিলিয়ে পার্শ্বশিক্ষকের সংখ্যা ৫২ হাজারের কিছু বেশি। স্থায়ী শিক্ষকদের থেকেও বেশি ক্লাস নেওয়া, বিভিন্ন বিষয়ের ক্লাস নেওয়া ইত্যাদির বাধ্যবাধকতা তো আছেই। অনেক স্কুলে চার জন শিক্ষকের মধ্যে তিন জনই পার্শ্বশিক্ষক। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষকপদ শূন্য। শুধু প্রাথমিকেই শূন্য পদ প্রায় ৪০ হাজার। পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী পদে নিয়োগ করলে স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-সমস্যার অনেকটা সুরাহা হতে পারত বলে মনে করছেন পার্শ্বশিক্ষক সমিতির সভাপতি রমিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘শুধু বেতন-কাঠামো নয়, বদলি, চিকিৎসা লিভ, সাধারণ ছুটি, শিশু পালনের ছুটি, এমনকী প্রভিডেন্ট ফান্ডের ক্ষেত্রেও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে।’’

সর্বশিক্ষা কর্মী ও পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী করার দাবি তুলেছে বঙ্গীয় শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী সমিতিও। সমিতির রাজ্য সহ-সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ত্রিপুরা, বিহারে পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী করে নির্দিষ্ট বেতন-কাঠামোর আওতায় আনা হয়েছে। এ রাজ্যে সরকার উদ্যোগী হলেই সমস্যা মিটে যায়।’’ যোগ্যতার প্রশ্নটিও জুড়ে দিচ্ছেন পার্শ্বশিক্ষকেরা। অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্বশিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা পূর্বে নিযুক্ত স্থায়ী শিক্ষকদের থেকে অনেক বেশি। পার্শ্বশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মান বাড়ানোর (যেমন বিএড ডিগ্রি নেওয়ার) সুযোগ দেওয়া হবে বলেও গত বছর জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। পার্শ্বশিক্ষক সমিতির অভিযোগ, সেই কাজও থমকে রয়েছে।

কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী?

এই মুহূর্তে পার্শ্বশিক্ষকদের স্থায়ী করার কোনও পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নেই বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের সমস্ত সুবিধা দেওয়ারই চেষ্টা করছি। বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিলাম, সেটা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই বিষয়ে অর্থ দফতরের সঙ্গে কথা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assistant teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE