Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Hindu Mahasabha

আসল হিন্দু মহাসভা কোনটা? দাবিদার অসুর বিতর্কের চন্দ্রচূড় এবং দুর্গাপুরের ‘আদি’ কার্তিক

রাজ্যে হিন্দু মহাসভার বিশেষ সংগঠন না থাকলেও দাবিদার দু’জন। এক দিকে কলকাতার বাসিন্দা চন্দ্রচূড় গোস্বামী অন্য দিকে দুর্গাপুরের বাসিন্দা কার্তিক ভট্টাচার্য। দু’জনেরই দাবি, ‘তাঁর সংগঠনই আসল’।

এক দল। দুই দাবিদার।

এক দল। দুই দাবিদার। ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ১৭:১৪
Share: Save:

চন্দ্রচূড় গোস্বামী ও কার্তিক ভট্টাচার্য। দু’জনেরই দাবি, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য শাখার দায়িত্ব তাঁদের। চন্দ্রচূড়ের দাবি, তিনি রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি। অন্য দিকে কার্তিকের দাবি, তিনি রাজ্যের সভাপতি। দু’জনেই দু’জনকে চেনেন, জানেন। কিন্তু ‘সংগঠনতুতো’ কোনও সম্পর্ক তাঁদের মধ্যে নেই। আসলে হিন্দু মহাসভার কোনটি আসল তা নিয়েই রয়েছে বিতর্ক।

দুর্গাপুজোর সময় আচমকাই খবরের শিরোনাম হয়ে ওঠেন চন্দ্রচূড়। খবরে আসার কারণ ছিল তাঁর উদ্যোগে হওয়া দুর্গাপুজোয় অসুরের মুখ মহাত্মা গান্ধীর মতো হওয়ায়। পুলিশের উদ্যোগে মূর্তিতে পরিবর্তনও আনা হয়। তবে পুজোর মধ্যে এ নিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে কিছু বলা হয়নি। পরে অবশ্য এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মুখ খুলেছেন। ওই বিতর্কের সময়ে চন্দ্রচূড় দাবি করেছিলেন, তিনি অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য শাখার দায়িত্বে। একটা সময় তাঁর সঙ্গে বিজেপির গভীর যোগাযোগের কথাও জানান। কিন্তু পরে সে সম্পর্ক ভেঙে তিনি হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন বলে দাবি করেন।

অন্য দিকে দুর্গাপুরের বাসিন্দা কার্তিকের দাবি, তিনি অনেক দিন ধরেই হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁকে নিয়োগ করেছেন খোদ সর্বভারতীয় সভাপতি স্বামী ত্রিদণ্ডী মহারাজ। তিনি মূল বাসিন্দা দিল্লির। বেশি থাকেন লখনউয়ের আশ্রমে। অন্য দিকে, চন্দ্রচূড়ের দাবি তাঁকে নিয়োগ করেছেন জাতীয় সভাপতি বাবা নন্দকিশোর মিশ্র। তিনি দিল্লির বাসিন্দা হলেও গোটা দেশে ঘুরে বেড়ান। চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে শেষ বার দেখা হয়েছিল পটনায়। তা-ও বছরখানেক আগে। তার পরেই তিনি রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি হয়েছেন। আর সভাপতি হন সুন্দরগিরি মহারাজ।

বাংলায় আসল হিন্দু মহাসভা কোনটা? কে তাঁর নেতা? চন্দ্রচূড় সম্পর্কে কার্তিক বলেন, ‘‘কেউ দাবি করলে সেটা তাঁর নিজের দায়িত্ব। যে কেউ দাবি করতেই পারেন। তবে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়েও নানা ভাগ রয়েছে। দাবি করা হয় একটা ভাগের রাজ্য সভাপতি সুন্দরগিরি মহারাজ।’’ চন্দ্রচূড়রা দুর্গাপুজোয় অসুরের রূপ নিয়ে যেটা করেছিলেন তাতেও সমর্থন নেই কার্তিকের। তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় অসুরকেও পুজো করা হয়। তার মানে গান্ধীজিকেও পুজো করা হল। অর্থাৎ, দেবী দুর্গাকেও অপমান করা হয়েছে।’’

কার্তিক ‘আদি’ হিন্দু মহাসভার রাজ্য প্রধান বলে দাবি করলেও চন্দ্রচূড়ের দাবি তাঁদের সংগঠনই আসল। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদেরটাই আসল। কার্তিকবাবু কী বলছেন তাতে কিছু যায় আসে না।’’ চন্দ্রচূড়ের দাবি, কিছু দিন আগে রাজ্যে হিন্দু মহাসভার সব ভাগ মিলেমিশে কাজ হবে বলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। আর তার জেরে তিনিই এখন বাংলায় হিন্দু মহাসভার প্রধান নেতা।

প্রসঙ্গত, ১৯১৫ সালে দেশে হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা হয়। তখন নাম ছিল সর্বদেশক হিন্দু সভা। পরে ১৯২১ সালে হয় অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। স্বাধীনতার পরে প্রথম দিকে হিন্দু মহাসভা রাজনৈতিক দল হিসাবেও প্রতিষ্ঠা পেতে চায়। ১৯৫১ সালের লোকসভা নির্বাচনে চারটি আসনে জয় পায় তারা। এর পরে ক্রমেই কমতে থাকে শক্তি। শেষ বার ১৯৮৯ সালে লোকসভায় একটি আসনে জিতেছিল। তবে বাংলায় ইদানীং কালে বিশেষ শক্তি দেখাতে পারেনি হিন্দু মহাসভা। তবে দুর্গাপুরকে কেন্দ্র করে কার্তিক যে সংগঠন চালিয়ে যাচ্ছেন সেটা অবশ্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে। এখন চন্দ্রচূড় নিজেকে মূল নেতা বলাতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তবে ভবানীপুর উপনির্বাচনে হিন্দু মহাসভা নয়, চন্দ্রচূড় নির্দল হিসাবেই লড়েছিলেন। চন্দ্রচূড় অবশ্য জানিয়েছেন, সেই নির্বাচনের পরে মহাসভায় যোগ দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hindu Mahasabha leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE