তিন বছর আগের স্মৃতি এখনও টাটকা। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েই দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলন নিয়ে সতর্ক রাজ্য সিপিএম। শুক্রবার থেকে বারাসতে শুরু হয়েছে সম্মেলন। রবিবার তা শেষ হওয়ার কথা। যে সম্মেলন সামলাতে কার্যত অর্ধেক আলিমুদ্দিন স্ট্রিটই উঠে চলে গিয়েছে বারাসতে। কিন্তু তার পরেও নানা মুনির নানা মত নিয়ে নাজেহাল রাজ্য নেতৃত্ব।
সম্মেলনের প্রথম দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সন্দেশখালি থেকে সল্টলেক পর্যন্ত বিস্তৃত জেলার অধিকাংশ এরিয়া কমিটিই চাইছে বর্তমান জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তীকে এ বার সরানো হোক। কিন্তু তাঁর বদলে কে হবেন সম্পাদক? আপাতত এই নিয়েই জেলা সিপিএমে একাধিক মত তৈরি হয়েছে। দলের তরুণ নেতা সায়নদীপ মিত্রদের গোষ্ঠী দাবি করেছে, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আবার গার্গী চট্টোপাধ্যায়, আহমেদ আলি খানেরা চাইছেন সোমনাথ ভট্টাচার্য হোন জেলা সম্পাদক। কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়দের গোষ্ঠী আবার দাবি তুলেছে, অপেক্ষাকৃত তরুণ, ১৩ বছর ধরে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপকেই জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ঘটনাচক্রে, প্রাক্তন বিধায়ক মানস সম্পর্কে সায়নদীপের মেসো হন। এই একাধিক মতেই বিকল্পের সন্ধান শুরু করেছেন রাজ্য নেতৃত্ব।
কিন্তু কে হবেন সেই বিকল্প? সে ব্যাপারে সিপিএম নেতারা কেউই কিছু খোলসা করছেন না। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘শান্তিতে সবটা মেটাতে আমাদের ‘নিরাপদ’ পথে হাঁটতে হবে।’’ উত্তর ২৪ পরগনার প্রাক্তন সম্পাদক গৌতম দেব গুরুতর অসুস্থ। শনিবার হুইলচেয়ারে বসেই বারাসতে সম্মেলন মঞ্চে খানিকক্ষণের জন্য হাজির হয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, গৌতম মত দিয়েছেন মৃণালকেই রেখে দেওয়া হোক।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, মৃণাল দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। গত তিন বছরে বহু বার দীর্ঘ ছুটি নিতে হয়েছিল তাঁকে। দলের একাংশের বক্তব্য, অসুস্থ হতেই পারেন। কিন্তু তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে হবে। রাজ্য সিপিএমের বড় অংশ মনে করছে, মৃণালকে সরানোই ‘বিজ্ঞানসম্মত’ সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু কাকে স্থলাভিষিক্ত করা হবে, সেটাই এখন আলিমুদ্দিনের কাছে মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। জেলায় দলের গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে এক তরুণ সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ বলেছিলেন যত মত, তত পথ। আর আমাদের জেলায় যত মত, তত জট।’’
শনিবার সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম-সহ সাত জন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রও। রবিবার এই আরও সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে শনিবার রাত ‘চাপে’ই কাটবে সিপিএম নেতাদের।