Advertisement
E-Paper

জঙ্গিদের মোটরবাইক জোগাত কে, খোঁজ পূর্বস্থলীর প্রৌঢ়ের

লাল-কালো-সাদা মোটরবাইক নানা রঙের, নানা মডেলের। কিন্তু মিল একটা জায়গায়কোনওটিরই নম্বরপ্লেটে নম্বর নেই। নম্বরবিহীন এই মোটরবাইকগুলিতে চড়েই খাগড়াগড়-কাণ্ডের অভিযুক্ত কওসর, কদররা বর্ধমান শহরের ডেরাগুলিতে যাতায়াত করত, আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্‌ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পাচার করত বলে জেনেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দারা।

সৌমেন দত্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪২
বর্ধমানের সার্কিট হাউসে কওসরের নম্বরহীন মোটরবাইক। ছবি: উদিত সিংহ

বর্ধমানের সার্কিট হাউসে কওসরের নম্বরহীন মোটরবাইক। ছবি: উদিত সিংহ

লাল-কালো-সাদা মোটরবাইক নানা রঙের, নানা মডেলের। কিন্তু মিল একটা জায়গায়কোনওটিরই নম্বরপ্লেটে নম্বর নেই। নম্বরবিহীন এই মোটরবাইকগুলিতে চড়েই খাগড়াগড়-কাণ্ডের অভিযুক্ত কওসর, কদররা বর্ধমান শহরের ডেরাগুলিতে যাতায়াত করত, আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্‌ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পাচার করত বলে জেনেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) গোয়েন্দারা। ওই মোটরবাইকগুলি জঙ্গিদের কে সরবরাহ করল সেই সূত্র ধরে এখন বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়ের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। নম্বরবিহীন মোটরবাইকে চড়েই সেই লোকটি মঙ্গলবার বিকেল থেকে বেপাত্তা। এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, “ছবি জোগাড় করে ওই প্রৌঢ়কে খুঁজছি।”

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পূর্বস্থলী থানার বিদ্যানগরের কাছে একটি গ্রামে ওই প্রৌঢ়ের বাড়ি। আত্মীয়দের একাংশ জানেন, সে অসমের তিনসুকিয়াতে শাড়ির ব্যবসা করে। ব্যবসা-সূত্রে পূর্বস্থলী ছেড়ে লোকটি বাইরে থাকে। কয়েক মাস অন্তর তাকে এলাকায় দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ি ফেরার পরে লোকটির জিম্মায় নানা রঙের মোটরবাইক দেখেছেন এলাকাবাসী। খোঁজ নিয়ে গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই প্রৌঢ় মোটরবাইক-পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। অসমে এ ধরনের কোনও চক্রের কাছ থেকে সে ১৪-১৫ হাজার টাকায় নম্বরবিহীন মোটরবাইক কিনে লোক মারফত পশ্চিমবঙ্গে ঢোকানোর ব্যবস্থা করত। কিছু ক্ষেত্রে পুরনো যোগাযোগের সুবাদে সে বর্ধমানে পৌঁছনোর আগেই ২০-২২ হাজার টাকায় মোটরবাইকগুলি বিক্রি করে দিত। বিক্রি না হওয়া মোটরবাইকগুলি ভাড়া দিত।

২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরেই বর্ধমান জেলা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি নম্বরবিহীন মোটরবাইক পেয়েছিল। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন শহরের বাবুরবাগ, বাদশাহি রোডের ডেরাগুলিতেও সন্দেহভাজন লোকজন নম্বরপ্লেটবিহীন মোটরবাইক চড়ে আসা-যাওয়া করত। এনআইএ সূত্রের দাবি, ওই সব মোটরবাইকেই বর্ধমান থেকে অন্তত চার বার আইইডি পাচার করা হয়েছিল। কওসর ও কদর এই কাজ করত।

বর্ধমান জেলা পুলিশ আউশগ্রামে কদরের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে নম্বরবিহীন লাল রঙের একটি মোটরবাইক পেয়েছে। সেটি এখন এনআইএ-র হেফাজতে। এনআইয়ের এক কর্তা বলেন, “লাল রঙের বাইকটি হাতে আসার পরে খোঁজ নিতে গিয়ে পূর্বস্থলীর ওই প্রৌঢ়ের নাম উঠে আসে।” জেলা পুলিশের কাছে খোঁজ নিয়ে এনআইএ জেনেছে, ওই ব্যক্তি বিদ্যুত্‌ চুরি এবং গাঁজা পাচারেও অভিযুক্ত। তবে জামিনে মুক্ত ছিল।

গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ের একতলা বাড়ির সদর দরজায় তালা। জানা গিয়েছে, পড়শিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না ওই প্রৌঢ়ের পরিবার। বাড়িতে প্রৌঢ়ের স্ত্রী থাকেন। দম্পতির এক ছেলে-এক মেয়ে। ছেলে যুবক। বাবার মতো তাকেও এলাকায় কয়েক মাস অন্তর-অন্তর দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সিভিক ভলান্টিয়ারদের তালিকায় নাম উঠেছিল ওই যুবকের। তবে সে সেই চাকরি করেনি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ের ছেলে উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

গ্রামবাসীরা জানান, বছর চারেক আগেও বেড়ার ঘরে থাকত পরিবারটি। আচমকা পাকা বাড়ি তুলে ফেলে। তাঁদের বক্তব্য, “ওদের বাড়িতে নানা রঙের মোটরবাইক রাখা থাকতে দেখেছি। বাড়ির মালিক নম্বরপ্লেট ছাড়া মোটরবাইকে চড়ে ঘুরত। তেমন সন্দেহ হয়নি বলে পুলিশে জানানো হয়নি।”

khagragarh blast soumen dutta kedarnath bhattacharya militant motorcycle arranged maoist state new online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy