Advertisement
E-Paper

ঘূর্ণাসুরকে দশ গোল দশমীতেও

লাগাতার কলকাঠি নেড়েও বিশেষ সুবিধে করতে না-পেরে প্রথম ঘূর্ণাসুর মহানবমীতেই পগার পার।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৩
প্রতিমা বিসর্জন। মঙ্গলবার হাওড়ায়। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

প্রতিমা বিসর্জন। মঙ্গলবার হাওড়ায়। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

লাগাতার কলকাঠি নেড়েও বিশেষ সুবিধে করতে না-পেরে প্রথম ঘূর্ণাসুর মহানবমীতেই পগার পার।

দ্বিতীয় ঘূর্ণাসুরের ফোঁসফাঁস কিন্তু চলছেই। বিসর্জনের কিছু আগে সে বিদায় নিলে দুর্গার সন্তানদের হয়তো কিছুটা ভাল লাগত। কিন্তু দেবীর আগে বাংলা ছাড়তে চায়নি সে।

দুর্গার আগে নয়, তাঁর পিছনে পিছনে বিদায় নিতে চাইছে দ্বিতীয় ঘূর্ণাসুর! আবহাওয়ার মতিগতি দেখে এমনটাই মনে করছেন আবহবিদেরা। তাঁদের ধারণা, অনুজ ঘূর্ণাসুরের বিদায় নিতে নিতে দ্বাদশী গড়িয়ে যাবে। মঙ্গলবার, দশমীর সকালেও হামলা চালিয়েছে সে। তবে বিকেলের পর থেকে আবহাওয়ার উন্নতির ইঙ্গিত মিলেছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আজ, বুধবার বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হবে।

এই জোড়া ঘূর্ণাসুর আদতে দু’টি ঘূর্ণাবর্ত। বঙ্গোপসাগরের আঁতুড়ে জন্মে প্রথম ঘূর্ণাবর্ত ষষ্ঠী থেকে হামলা চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মহোৎসবে। কিন্তু পুজোপাগলদের কাছে তেমন আমল পায়নি। শেষ পর্যন্ত ওড়িশা থেকে ঝাড়খণ্ডে গিয়ে মিলিয়ে
গিয়েছে সে। তার জায়গায় এসেছে অন্য একটি ঘূর্ণাবর্ত, দ্বিতীয় ঘূর্ণাসুর। উপগ্রহ-চিত্র দেখে বিজ্ঞানীরা জানান, মঙ্গলবার সে ছিল সাগর লাগোয়া উপকূলীয় বাংলার উপরে। এবং মহানবমীর রাতের বর্ষণের পিছনে ছিল তারই কারিকুরি।

প্রথম হোক বা দ্বিতীয়, কোনও ঘূর্ণাসুরই টলাতে পারেনি উৎসবে মেতে ওঠা বাঙালিকে। সমানে বরুণবাণ হেনেও আখেরে ভিড়ের কাছে লেজেগোবরে হতে হয়েছে তাদেরই। মায়ের বিদায়বেলাতেও ঘূর্ণাসুরকে দমিয়ে রেখেছে বাঙালি। বিজয়া দশমীতে এখানে-ওখানে হানা দিয়েছে সে। তবে তাতে মাকে বিদায় দেওয়ার হর্ষ-বিষাদ উদ্‌যাপন কিছুমাত্র ব্যাহত হয়নি।

বাড়ির পুজোগুলিতে এ দিন ছিল দর্পণ-বিসর্জন, সিঁদুরখেলা-সহ মাতৃবিদায়ের যাবতীয় আচার-আয়োজন। সেখানে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়াপড়শির ভিড়ে পাত্তা পায়নি দ্বিতীয় ঘূর্ণাসুরের চোরাগোপ্তা হানা। বারোয়ারি মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনের জন্য এ দিনও ছিল তুমুল ভিড়। সেখানেও পাত্তা পায়নি ঘূর্ণাসুর। মণ্ডপে মণ্ডপে সমবেত উচ্ছ্বাস, উৎসব এখনও শেষ হয়নি। তাই ঠাকুর দেখা চলছে, চলবে। বৃষ্টির জন্য মহানবমীর রাতে যাঁরা বেশি এগোতে চাননি, দশমীর সকাল থেকে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে সেই ক্ষতি পূরণ করে নিয়েছেন তাঁদের অনেকেই। হাতিবাগানের একটি মণ্ডপে দাঁড়িয়ে সুতপা রায় যেমন বললেন, ‘‘নবমীর রাতে বৃষ্টির জন্য আর বেরোইনি। উত্তর কলকাতার মণ্ডপগুলো দেখা বাকি ছিল। দশমীর সকালে সকলকে নিয়ে বেরিয়েছি সেগুলো দেখতে।’’

বারোয়ারি মণ্ডপে যখন ভিড় বাড়ছে, বনেদি বাড়ির পুজোয় তখন ভাসানের ব্যস্ততা। কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে সকালেই শুরু হয়ে যায় উমাকে বিদায় জানানোর আয়োজন। এক জন বললেন, ‘‘পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই শহরের বাইরে থাকেন। পুজোটা সকলে একসঙ্গে কাটান। দশমীতে মা দুর্গাকে বিদায় দিতে গিয়ে মনে হয়, বাড়ির মেয়েকেই বিদায় দিলাম। আসলে তার পরে কাজের জন্য আমাদেরও তো বিচ্ছেদ হবে এক বছরের জন্য।’’ বিদায়বেলায় মাকে সিঁদুর পরিয়ে অনেকেই আক্ষেপের সুরে জানান, চার দিন পরেই উমাকে ফেরত পাঠাতে মন মানছে না। ‘‘অবাঙালিদের মতো আমাদেরও যদি দশ দিন ধরে দুর্গাপুজোর রীতি থাকত, তা হলে দিব্য হতো,’’ বললেন বাগবাজারের পূর্ণিমা রায়।

বারোয়ারি পুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকে বলছেন, অর্চনার আয়োজন চার দিনের হলেও চতুর্থী থেকে যে-ভাবে প্রতিমা দর্শনের ভিড় শুরু হচ্ছে, তাতে দশ দিন না-হোক, পুজোর মেয়াদ আড়ে-বহরে কিছুটা বাড়ছেই!

বিসর্জন নিয়ে কড়াকড়ির মধ্যে গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে পুলিশ-প্রশাসন। এ দিন বেশি ভাসান দেওয়া হয়েছে বাড়ির ঠাকুরই। পুলিশ জানায়, বাজে কদমতলা ঘাট, বাবুঘাট, নিমতলা দইঘাটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গঙ্গায় টহল দিচ্ছে জল-পুলিশের নৌকা। বিভিন্ন ঘাটে ফুল-পাতা-মালা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছে। গঙ্গাদূষণ ঠেকাতে কলকাতা হাইকোর্ট যে-সব নির্দেশ দিয়েছে, সবই মেনে চলা হচ্ছে বলে পুরসভার দাবি। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী মঙ্গলবার কলকাতায় গঙ্গার ষোলোটি ঘাটে ১৬৮৮টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে।

এক দিকে মা দুর্গার বিসর্জন তো অন্য দিকে রাবণ বধের তৎপরতা। মঙ্গলবারই ছিল দশেরা। রাম এই তিথিতেই রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন। এই অনুষ্ঠান মহাসমারোহে পালন করা হয় উত্তর ভারতে। দশস্কন্ধ রাক্ষসরাজের দীর্ঘ মূর্তি তির ছুড়ে ধ্বংস করেন রামচন্দ্র। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো কলকাতাও পিছিয়ে নেই এই উৎসবে। এ শহরেও ধুমধাম করে পালিত হল দশেরা।

রাবণ বধ হল। তবে আনুষ্ঠানিক বিসর্জনের পরেও দুর্গা এবং তাঁর পরিবার রয়ে গিয়েছেন কোথাও কোথাও। তাঁরা যোগ দেবেন ‘দুর্গা প্যারে়ড’-এ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ বার শহরের সেরা কয়েকটি পুজোর প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করছে সরকার। শুক্রবার রেড রোডে সেই ‘দুর্গা প্যারে়ড’। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে দশমীর ভিড়ে শোনা গিয়েছে সেই প্যারে়ড নিয়ে জল্পনা।

তবে দুর্গা প্যারেডের তালিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে কিছু ধন্দও। উত্তর কলকাতার একটি পুজো সেরার সেরা তকমা পেয়েছে। প্যারেডে তাদের দুর্গার ঠাঁই হচ্ছে বলে ঘোষণা করেছেন তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের শীর্ষ কর্তারা। কিন্তু লালবাজারের পাঠানো চিঠিতে তাদের নামই যে নেই! ওই পুজোর কর্তারা এতে কিছুটা ক্ষুব্ধ। ‘‘খাস নবান্ন থেকে ঘোষণার পরেও কেন ঠাঁই হল না, বুঝতে পারছি না,’’ বললেন ওই কর্তাদের এক জন।

rain Durgapuja Vijaya dashami
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy