Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়তি সার্ভিস চার্জ কেন বিদেশির, দেখছে কমিশন

এই পরিস্থিতিতে বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা খরচের কোনও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন না থাকায় বিদেশিদের বিভ্রান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনই রাজ্যের মেডিক্যাল ট্যুরিজম পরিকাঠামো নিয়েও যে ভুল বার্তা যায় স্বাস্থ্য, পর্যটন ও বাণিজ্য বিভাগের একাধিক কর্তা তা স্বীকার করছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৪:২১
Share: Save:

রোগী যদি বিদেশি হন তা হলে পশ্চিমবঙ্গের এক-এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে এক-এক রকম টাকা দিতে হচ্ছে। তার উপর কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

কোথাও চিকিৎসার যা বিল হবে তার থেকে বিদেশিদের অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ টাকা হাসপাতালকে দিতে হচ্ছে, কোথাও আবার দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ। অথচ এখানকারই অনেক হাসপাতালে দেশি-বিদেশি রোগীদের চিকিৎসার বিলে কোনও তফাত নেই।

এ রাজ্যে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার এমনকী আমেরিকা, আফ্রিকা থেকেও প্রতি মাসে কয়েক হাজার রোগী আসেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে মেডিক্যাল ট্যুরিজম-এর প্রসার ঘটাতে আগ্রহী।

এই পরিস্থিতিতে বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা খরচের কোনও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন না থাকায় বিদেশিদের বিভ্রান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনই রাজ্যের মেডিক্যাল ট্যুরিজম পরিকাঠামো নিয়েও যে ভুল বার্তা যায় স্বাস্থ্য, পর্যটন ও বাণিজ্য বিভাগের একাধিক কর্তা তা স্বীকার করছেন।

রাজ্যে স্বাস্থ্য রেগুলেটরি কমিশন তৈরির পর বেসরকারি হাসপাতালে অযৌক্তিক টাকা নেওয়া বা ‘হিডন্ কস্ট’-এ লাগাম পরানোর পাশাপাশি এ বার বিদেশিদের থেকে নেওয়া সার্ভিস চার্জের মধ্যেও সামঞ্জস্য আনতে চাইছে স্বাস্থ্য কমিশন।

ভিনদেশি রোগীদের ব্যাপারে নানা দেশে নানা নিয়ম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। আবার ইংল্যান্ডের নিয়মে যাঁরা সে দেশের করদাতা, তাঁদের জন্য চিকিৎসা ‘ফ্রি’, শুধু ওষুধের টাকা তাঁদের দিতে হয়। কিন্তু যাঁরা বিদেশি তাঁরা যেহেতু করদাতা নন, তাই তাঁদের চিকিৎসা ও ওষুধ— দু’টোর খরচই দিতে হয়। আবার কানাডা, সুইৎজারল্যান্ড বা জার্মানির মতো দেশগুলিতে দেশি আর বিদেশির মধ্যে চিকিৎসা খরচের কোনও পার্থক্য নেই।

স্বাস্থ্য কমিশনের এক চিকিৎসক সদস্যের কথায়, ‘‘ভারতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বিদেশি পর্যটকদের টিকিট ও ক্যামেরার জন্য বেশি মূল্য দিতে হয়। কিন্তু সেই টাকা সরকার বেঁধে দেয়। বিদেশিদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তা করা দরকার।’’

গত ৮ জুন কলকাতার আনন্দপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে গোড়ালির এমআরআই করিয়েছিলেন চিনা বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক লিন লিং। ৭ হাজার টাকার এমআরআইয়ের জন্য তাঁর থেকে নেওয়া হয় ১১ হাজার টাকা। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশি রোগীদের থেকে তাঁরা অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেন।

সেটা কেন? কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা— তাঁরা প্রয়োজনে বিদেশিদের দোভাষী দেন, বিমানবন্দর থেকে আনা-নেওয়া, থাকার ব্যবস্থা করা, সাহায্যের জন্য কর্মী, আলাদা হেল্পডেস্ক সবই দেওয়া হয়।

কিন্তু লিন লিং দাবি করেছেন, এমন কোনও সুবিধা তিনি পাননি। উল্টে হাসপাতালেই তাঁর ব্যাগ থেকে কয়েক হাজার টাকা চুরি হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। চুরির ব্যাপারটি নিয়ে রোগিণী আনন্দপুর থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা তাঁকে ফিরিয়ে দেয় হাসপাতাল।

ঢাকুরিয়া ও সল্টলেকের এক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরাও বিদেশিদের থেকে ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ নেন। তবে আউটডোরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। বেলেঘাটা কানেক্টরের একটি হাসপাতাল আবার জানিয়েছে, ইন্ডোরে ভর্তি হওয়া সব বিদেশি রোগীর থেকে তারা অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেয়। কিন্তু আউটডোরে আসা বাংলাদেশিদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। অন্য দিকে শহরেরই অন্তত ৬টি হাসপাতাল দাবি করেছে, তারা বিদেশিদের থেকে অতিরিক্ত কোনও সার্ভিস চার্জ নেয় না।

এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত যে সুবিধা দেওয়ার দাবি করে বিদেশিদের থেকে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলি আদৌ দেওয়া হচ্ছে কিনা তার উপর নজরদারি তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করছে স্বাস্থ্য কমিশন। বিদেশি রোগীদের থেকে নেওয়া সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে সমতা আনার বিষয়টিও কমিশন খতিয়ে দেখছে।

তথ্য সহায়তা: মধুমিতা দত্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE