Advertisement
E-Paper

অনুমতি কেন লাগবে? বহুতল আবাসনে ভোটকেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাবেন না! সিইও-কে চাপ রাজ্য বিজেপির

রাজনৈতিক দলগুলির হিসাব অনুযায়ী, কলকাতার ক্ষেত্রে বহুতলবাসীরা মোট ভোটের ৮-১০ শতাংশ। কিন্তু বাইরের ঝুটঝামেলা এড়িয়ে আবাসন চত্বরকে নিজস্ব সুরক্ষাবলয়ে মুড়ে রাখতে অভ্যস্ত এই সব অভিজাত বহুতলবাসীদের অনেকেই ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছোন না। কারণ একাধিক।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৩০
Why are you waiting for permission? BJP increases pressure of EC demanding separate polling booths inside big housing complex

মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

বহুতল আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির দাবিতে নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ বাড়াল বিজেপি। সোমবার কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছিল যে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক আবেদন জমা না-পড়ায় বহুতলের বাসিন্দাদের জন্য তাঁদের আবাসন চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা থেকে কমিশন পিছিয়ে আসছে। কিন্তু কমিশনের এই ভাবনা প্রকাশ্যে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সক্রিয় হল বিজেপি। মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-র সঙ্গে দেখা করে বহুতল আবাসনগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির দাবি আরও জোর দিয়ে পেশ করলেন রাজ্য বিজেপির নেতারা।

কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রেই অভিজাত বহুতল আবাসনের সংখ্যা গত দু’দশকে লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলির হিসাব অনুযায়ী, কলকাতার ক্ষেত্রে এই বহুতলবাসীরা মোট ভোটের ৮-১০ শতাংশ। কিন্তু বাইরের ঝুটঝামেলা এড়িয়ে আবাসন চত্বরকে নিজস্ব সুরক্ষাবলয়ে মুড়ে রাখতে অভ্যস্ত এই সব অভিজাত বহুতলবাসীদের অনেকেই ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছোন না। বিভিন্ন রাজ্যেই এমনটা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভোটের সকাল থেকে আবাসনের গেটের সামনে হামলা বা শাসানির অভিযোগ ওঠে। ভোটকেন্দ্রে যেতে সেখানকার বাসিন্দাদের বারণ করা হয়। অনেকে আবার ভোটকেন্দ্রে সম্ভাব্য অশান্তি পছন্দ করেন না বলে স্বেচ্ছায় যান না। অভিজাত বহুতল আবাসনগুলির বাসিন্দাদের এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে আবাসন চত্বরেই ভোটকেন্দ্র তৈরি করে দেওয়ার নীতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, অন্যান্য রাজ্যেও একই নীতি নেওয়া হয়েছে।

কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভাবনা ছিল যে, কোনও আবাসনে ৩০০-র বেশি ভোটার থাকলে সেই আবাসন চত্বরের ভিতরেই পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরি করে দেওয়া হবে। তাতে অশান্তির আশঙ্কায় ভোট দিতে না-যাওয়ার কোনও অবকাশ থাকবে না। ভোটদানের হার বাড়বে। তৃণমূল শুরু থেকেই কমিশনের এই ভাবনা তথা নীতির বিরোধী ছিল। উল্টো দিকে বিজেপি চাইছিল, ৩০০-র বেশি ভোটার থাকেন, এমন সব আবাসন চত্বরের ভিতরেই পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরি হোক। কিন্তু বহুতল চত্বরে ভোটকেন্দ্র তৈরি আটকাতে তৃণমূল নেতারা কলকাতার বিভিন্ন অভিজাত আবাসনে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের উপর চাপ তৈরি করছেন বলে বিজেপির তরফে অভিযোগ করা হচ্ছিল। আবাসন চত্বরের ভিতরে ভোটকেন্দ্র তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁদের আপত্তি রয়েছে বলে জানিয়ে চিঠি লিখে দেওয়ার জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও বিজেপির দাবি। তৃণমূল সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সোমবার কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র দু’টি। তাই কমিশন এই ভাবনা থেকে পিছিয়ে আসছে।

বিজেপির দাবি, তৃণমূলের চাপে ভয় পেয়েই আবাসনের বাসিন্দারা পৃথক ভোটকেন্দ্র চেয়ে আবেদন জানাতে পারেননি। মঙ্গলবার বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ এবং শিশির বাজোরিয়া দেখা করেন সিইও মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে। এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু অভিযোগ পেশ করার পাশাপাশি বহুতল আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির বিষয়টিও তাঁরা তোলেন। শিশিরের কথায়, ‘‘আমরা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বহুতল আবাসন চত্বরে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে কমিশন কি পিছিয়ে গিয়েছে? মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আমাদের জানিয়েছেন যে, তিনি এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।’’ আনন্দবাজার ডট কমকে শিশির বলেছেন, ‘‘আবাসন চত্বরের ভিতরে ভোটকেন্দ্র তৈরি করতে হলে আবাসনের বাসিন্দাদের অনুমতি নিতে হবে বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। আমরা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি যে, রাস্তা থেকে যখন গাড়িগুলোকে ভোটের কাজে নিয়ে নেন, তখন কি মালিকের অনুমতি নেন? তখন তো যত গাড়ি দরকার, নিজেদের ইচ্ছামতো রাস্তা থেকে তুলে নেন। ভোটকেন্দ্র তৈরির ক্ষেত্রে তা হলে অনুমতি বা আবেদনের অপেক্ষা করছেন কেন?’’

মঙ্গলবার কমিশনের দফতরে কাকদ্বীপের এক বাসিন্দাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। এসআইআর শুরু হওয়ার পরে দুই সন্তানের পিতা বাসুদেব দাস নামে ওই ব্যক্তির বাড়িতে তিন সন্তানের নামে ফর্ম এসেছে বলে অভিযোগ। কাকদ্বীপের একটি জেলা পরিষদ আসন থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত হওয়া জেলা পরিষদ সদস্য সঞ্চয় দাস ভুয়ো নথি পেশ করে বাসুদেবকে নিজের বাবা হিসাবে দেখিয়ে ওই এলাকার ভোটার হয়েছিলেন বলে বিজেপির দাবি। রাহুল বলেন, ‘‘এই সঞ্চয় দাস ওরফে সঞ্জয় দাস বিদেশি। তিনি অন্য দেশ থেকে এসে ভুয়ো নথি তৈরি করিয়ে বাসুদেব দাসকে নিজের বাবা হিসাবে দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্যপ্রমাণ-সহ তৃণমূলের এই জালিয়াতির ছবি তুলে ধরেছি।’’

High Rise Buildings Polling Booth Kolkata West Bengal BJP West Bengal Politics Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy