৪০০-এ ৪০০! আইএসসিতে তাক লাগানো ফল করেছিলেন কলকাতার সৃজনী। সে-ই এ বার আইএসসিতে প্রথম হয়। তার পর থেকেই খবরের শিরোনামে বার বার উঠে এসেছেন সৃজনী। কিন্তু প্রতি বারই তিনি নিজের নাম বলতে গিয়ে শুধু সৃজনীই উচ্চারণ করেছেন, কোনও পদবি নেই! এমনকি, স্কুলের খাতা হোক বা পরীক্ষার মার্কশিটে লেখা শুধু সৃজনীই। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কেন পদবী ব্যবহার করেন না তিনি? নিজেই সেই রহস্যভেদ করলেন।
রিজেন্ট পার্কের ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের পড়ুয়া সৃজনী। ছোট থেকে একই স্কুলে পড়েছেন। দ্বাদশে পদার্থবিদ্যা, গণিত এবং রসায়নের পাশাপাশি ইংরেজি ছিল আবশ্যিক বিষয়। প্রতিটিতেই তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ১০০-এ ১০০। এমন মেধাবী পড়ুয়া কেন পদবি ব্যবহার করে না? উত্তরে একগাল হেসে সৃজনীর জবাব, ‘‘আমি এমন একটা সমাজে বিশ্বাস করি, যেখানে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা অর্থনৈতিক অবস্থার বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে ভাববে। আমার কাছে তাই পদবি কোনও আলাদা গুরুত্ব পায় না। আমি সবসময় সকলের কাছে আমার প্রথম নাম দিয়েই পরিচিত।’’
সৃজনী পদবি ব্যবহার না করলেও এলাকায় তাঁরা গোস্বামী পরিবার বলেই পরিচিত। তাঁর বাবা দেবাশিস গোস্বামী পেশায় অধ্যাপক। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-র সঙ্গে যুক্ত। সৃজনীর মা গোপা মুখোপাধ্যায়ও একই পেশায় রয়েছেন। তিনি ফুলবাগানের গুরুদাস কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক। তবে দু’জনে প্রথম থেকেই সৃজনীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। তাই প্রগতিশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা সৃজনীর কোনও পদবি দেননি তাঁরা। জাতপাতের ঊর্ধ্বে মেয়েকে বড় করেছেন। সেই ভাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সৃজনী।
আরও পড়ুন:
তবে পদবি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত প্রথম নেন সৃজনীর মা-বাবাই। তাঁরা তাঁদের দুই মেয়ের জন্য জন্মপত্রে আবেদনের সময় পদবির উল্লেখ করেননি। গোপার কথায়, ‘‘আমরা যে মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস আমাদের মেয়েদের মনে গেঁথে দিয়েছি, তাঁরাও সেই চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। আমরা এমন একটি পরিবারের স্বপ্ন দেখি যেখানে পুরুষতন্ত্র বা উগ্রতাবাদের কুসংস্কার থাকবে না।’’
পড়াশোনায় ডুবে থাকলেও মনের জানলা খোলা রেখেছিলেন সৃজনী। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলেও হেঁটেছেন তিনি। আবার রাত দখলের জমায়েতে গিয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানও দিয়েছেন। বিজ্ঞানের এই ছাত্রী ভবিষ্যতে গণিত বা পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চান। সেখানেও গতানুগতিকতার বাঁধ ভাঙতে চান সৃজনী।