Advertisement
E-Paper

মাথাহীন উচ্চশিক্ষার ছবি দেখালেন মন্ত্রীই

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও কেন দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে রয়েছে, সেই প্রশ্নে বারবার সরব হয়েছে শিক্ষা শিবির। জবাব মেলেনি। অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে এখন রাজ্যের আরও

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০৩:৫৮

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও কেন দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে রয়েছে, সেই প্রশ্নে বারবার সরব হয়েছে শিক্ষা শিবির। জবাব মেলেনি। অস্থায়ী উপাচার্যের হাতে এখন রাজ্যের আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞাপন দিয়েও অধ্যক্ষ মিলছে না বিভিন্ন সরকারি কলেজে। কাজ চালাচ্ছেন ‘ভারপ্রাপ্ত’ শিক্ষক বা শিক্ষিকারা।

উচ্চশিক্ষার এই মাথাহীন ছবিটা এ বার বেআব্রু হয়ে গেল খোদ শিক্ষামন্ত্রীর পরিসংখ্যানেই! তিনি জানিয়ে দিলেন, শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের ন’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই!

অনেক কলেজের শীর্ষ পদেও যে একই অবস্থা, এ দিন সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানাচ্ছেন, বিজ্ঞাপন দিয়েও অনেক সরকারি কলেজের জন্য অধ্যক্ষ মিলছে না। ৪২টি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের ফাঁকা পদের জন্য দু’বার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। মাত্র ২৭টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। নিয়োগ এখনও শুরু করা যায়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চালানো হচ্ছে ওই সব কলেজ। বুধবার বিধানসভায় রাজ্যের উচ্চশিক্ষার শীর্ষ স্তরে এই নড়বড়ে অবস্থার ছবি তুলে ধরেন মন্ত্রী। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অভাবে উচ্চশিক্ষা এমনিতেই অন্ধকার দেখছে। এ বার খোদ শিক্ষামন্ত্রী উচ্চশিক্ষার উঁচু স্তরেও শূন্যতার ‘খতিয়ান’ দেওয়ায় শিক্ষাজগতের একাংশ উদ্বিগ্ন।

• ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই

• অধ্যক্ষ অমিল ৪২ সরকারি কলেজে

কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার একটি প্রশ্নের উত্তরে পার্থবাবু এ দিন বিধানসভায় বলেন, রাজ্যে ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ন’টিতেই স্থায়ী উপাচার্য নেই। অস্থায়ী উপাচার্য দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কাজ। একই সঙ্গে মন্ত্রী অবশ্য জানান, ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত নিজেদের কোনও ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি না-থাকায় এবং কল্যাণীর মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ বা সন্ধান কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় কোনও প্রতিনিধি না-পাঠানোয় সমস্যা হচ্ছে।

মানসবাবু তখন প্রশ্ন তোলেন, বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্য যে চলে যাচ্ছেন, সেটা তো আগে থেকেই জানা ছিল। তা সত্ত্বেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাচীন প্রতিষ্ঠানে সময়মতো স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থা করা গেল না কেন?

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনেট ও সিন্ডিকেটের মেয়াদ ফুরোনোর পরে নতুন করে সেগুলো গঠন করা হয়নি। তাই সার্চ কমিটি গড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি এগোচ্ছে না। অ্যাড-হক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ চালাতে হচ্ছে।

শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, নতুন সেনেট বা সিন্ডিকেটই বা গড়া হয়নি কেন? ঠিক সময়ে সেগুলো গড়ে ফেললে তো স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের মতো কাজ এ ভাবে বকেয়া পড়ে থাকত না!

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছ’মাসের জন্য অস্থায়ী উপাচার্য-পদে যোগ দিয়েই সুগত মারজিত বলেছিলেন, তিনি ‘সরকারের লোক’। সরকার পরে তাঁর মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই মেয়াদ শেষের পরে ‘সরকারের লোক’-ও আর ওই পদে থাকতে চাননি। আর যাতে মেয়াদ না-বাড়ে, সেই জন্য দরবার করেন আচার্য-রাজ্যপালের কাছে। তাঁর জায়গায় আবার অন্য এক জনকে অস্থায়ী উপাচার্য করা হয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে সেই দায়িত্ব সামলাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ডিন আশুতোষ ঘোষ। সুগতবাবু দু’দফায় এক বছর উপাচার্যের অস্থায়ী পদে থাকা সত্ত্বেও ওই সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যায়নি কেন, কেন আবার অস্থায়ী ভাবে অন্য এক জনকে বসাতে হল, সেটারই ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন মানসবাবু।

এর পরেই পার্থবাবু তোলেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। তিনি জানান, বারাসতের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্থায়ী উপাচার্যের মৃত্যুর পরে উপাচার্যের পদ খালি পড়ে আছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সেখানেও অবিলম্বে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হবে এবং তার পরেই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য শুরু হবে সার্চ কমিটি গঠনের কাজ।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধি তৈরি করা যায়নি, অবিলম্বে সেটা উচ্চশিক্ষা দফতরকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের খবর, এই মুহূর্তে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক শিক্ষণ, শিক্ষা পরিকল্পনা ও প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়, সংস্কৃত কলেজ অ্যান্ড ইউনির্ভাসিটি এব‌ং রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও বিধি নেই। তাই সেই সব প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে কোনও কার্যকর পরিকল্পনাই করা যাচ্ছে না।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষা দফতর। তার পরে বিধি তৈরি করে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এখনও বিধি তৈরি না-হওয়ায় অস্থায়ী বা প্রথম উপাচার্যেরাই দায়িত্বে রয়ে গিয়েছেন বলে জানান পার্থবাবু। সদ্য গড়ে তোলা ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, সেখানে খুব শীঘ্রই স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

শুধু উপাচার্য নয়, এ দিন সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যার কথা তোলেন পার্থবাবু। ৪২টি সরকারি কলেজের জন্য অধ্যক্ষের খোঁজে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) ইতিমধ্যেই দু’বার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। ৪২টি পদের জন্য আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ২৭টি!

মাথাহীন ওই সব সরকারি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নড়বড়ে অবস্থায় চিন্তিত শিক্ষা শিবিরের একাংশ। অদূর ভবিষ্যতে এই নিয়োগ-সমস্যার সুরাহার ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। তাঁদের মতে, অধ্যক্ষ-পদে আবেদন করারই লোক মিলছে না কেন, সেই কারণ যাচাই করা জরুরি হয়ে পড়েছে। পঠনপাঠনের পরিবেশ নিয়ে যত্নবান না-হলে অধ্যক্ষ বা উপাচার্যের সমস্যা চলতেই থাকবে।

University Educational Minister Vice-chancellor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy