E-Paper

ভর্তি কমেছে প্রাথমিকে, স্কুলছুট না থাকার দাবি নিয়ে প্রশ্ন

প্রশ্ন উঠেছে, এত সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক স্তরে স্কুলে ভর্তি কমছে কেন? প্রাথমিকে দীর্ঘ দিন নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাওয়া এর অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৩

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, তাঁর সরকারের আমলে ‘কন্যাশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘ঐক্যশ্রী’, ‘মেধাশ্রী’-সহ নানা প্রকল্প চালু হওয়ার কারণে বাংলায় প্রাথমিকে স্কুলছুট এখন শূন্য। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এই হার তিন শতাংশ। যদিও শিক্ষা দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্কুলগুলিতে প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রাথমিকে ভর্তির সংখ্যা এক বছরে অনেকটাই কমেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সরকারি স্কুলের উপরে ভরসা করতে পারছেন না অভিভাবকেরা? এরই পাশাপাশি, শিক্ষকদের একাংশের আবার দাবি, এক বছরের ব্যবধানে প্রাথমিকে ভর্তি কমে যাওয়ার অর্থ, তার মধ্যে স্কুলছুট পড়ুয়ারাও রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের ২০২১-’২২ সালের বার্ষিক রিপোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছরে প্রাক্-প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিল ৯,৬৫,৩৭৭ জন। প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিল ৪৫,৮১,২৯৮ জন। ওই সংস্থারই ২০২৩-’২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সে বছর প্রাক্-প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিল ৮,৫৭,৭৮৬ জন। আর প্রাথমিকে ভর্তি হয় ৪৪,৪৩,০৫৫ জন। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-’২২ সালের তুলনায় ২০২৩-’২৪ সালে প্রাক্-প্রাথমিক এবং প্রাথমিকে ভর্তি কমে গিয়েছে। প্রাক্-প্রাথমিকে সেই ফারাক ১,০৭,৫৯১ ও প্রাথমিকে ১,৩৮,২৪৩। শিক্ষকদের একাংশের মতে, এক বছরে প্রাক্-প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি কমেছে এক লক্ষেরও বেশি।

প্রশ্ন উঠেছে, এত সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক স্তরে স্কুলে ভর্তি কমছে কেন? প্রাথমিকে দীর্ঘ দিন নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাওয়া এর অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাংশের মতে, সরকারি প্রকল্প হয়তো আছে অনেক, কিন্তু স্কুলগুলির পরিকাঠামোর হাল খুব খারাপ। ফলে, অভিভাবকদের অনেকেই সরকারি স্কুলের উপরে ভরসা করতে পারছেন না। সেই কারণেই ভর্তি কমছে প্রাথমিকে। সেই সঙ্গে স্কুলছুট তো রয়েছেই।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির এক নেতার কথায়, ‘‘ভর্তির সংখ্যা এক বছরে এক লক্ষের বেশি কমে যাওয়ার অর্থ, সেখানে স্কুলছুটরাও রয়েছে। প্রাথমিকে স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্য কোনও ভাবেই বলা যায় না। পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের বার্ষিক রিপোর্টে দেখা যাবে, ২০২৩-’২৪ সালে মাধ্যমিকের চেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির সংখ্যা কম। ওই বছরে মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিল ২৭,১২,৩৭২ জন। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে ১৫,৭২,০৬১ জন। এর অর্থ, সেখানেও রয়েছে প্রচুর স্কুলছুট পড়ুয়া।’’

যদিও শিক্ষা দফতরের এক কর্তার মতে, অনেক সময়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা কাজের সূত্রে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে চলে যান। তখন ছেলেমেয়েদের সেই রাজ্যের স্কুলে ভর্তি করান তাঁরা। ফলে, রাজ্যের পরিসংখ্যানে তখন ভর্তির সংখ্যা কমে যায়। এ ছাড়া, কিছু পড়ুয়া থাকতে পারে, যারা সরকারি স্কুল থেকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হয়। সেই তথ্য আর সরকারের কাছে থাকে না। ওই পড়ুয়ারা তো স্কুল ছেড়ে দেয়নি, অন্য স্কুলে পড়ছে। তা হলে তাদের স্কুলছুট বলা যাবে কী করে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

School students School Students Issue Government Schools West Bengal government Government Schemes

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy