Advertisement
E-Paper

কলেজে ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্যে দুই নেতারই নিন্দা করেছে তৃণমূল, মদনকে শো কজ়ের পদক্ষেপ করলেও কল্যাণকে নয় কেন

শো কজ়ের উত্তর দেওয়ার জন্য দলের তরফে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে মদনকে। কিন্তু সব ঠিক থাকলে এবং কর্মসূচিতে শেষ মুহূর্তে বড় কোন বদল না-হলে মঙ্গলবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলে থাকতে পারেন কল্যাণ।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ১২:২৮
মদন মিত্র (বাঁ দিকে) এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

মদন মিত্র (বাঁ দিকে) এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের জন্য শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের একযোগে নিন্দা করেছিল তৃণমূল। গত শুক্রবার সর্বভারতীয় তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে দু’জনের বক্তব্যেরই সমালোচনা করে শাসকদলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, ওই বক্তব্যকে দল সমর্থন তো করেই না, বরং নিন্দা করছে। অতঃপর রবিবার মদনকে শো কজ়ও করা হয়েছে। কিন্তু কল্যাণের ক্ষেত্রে সোমবার সকাল পর্যন্ত তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি তৃণমূল।

দলের তরফে একসঙ্গে দু’জনের বক্তব্যের সমালোচনা করা হলেও কেন মদনের ক্ষেত্রে শো কজ়ের মতো পদক্ষেপ করা হল? কল্যাণের ক্ষেত্রে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না বা হচ্ছে না কেন।

প্রত্যাশিত ভাবেই এ নিয়ে তৃণমূলের কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলছেন না। তবে একান্ত আলোচনায় দলের প্রথম সারির নেতাদের ব্যাখ্যা হল, মদন এবং কল্যাণের বক্তব্যে ‘মৌলিক’ এবং ‘গুণগত’ ফারাক রয়েছে। দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘মদনের বক্তব্যে চূড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক স্বর ছিল। তাঁর বক্তব্যে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য ঘটনাকে শুধু লঘু করা নয়, একই সঙ্গে নির্যাতিতাকেও কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি, আড়াল করা হয়েছিল ধর্ষকদের। যা চূড়ান্ত অসংবেদনশীল।’’ সেই নেতারই যুক্তি, কল্যাণ সামগ্রিক ভাবে সামাজিক দর্শনের কথা বলতে চেয়েছিলেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে, তা হলে কে কাকে নিরাপত্তা দেবে। পাশাপাশিই, কল্যাণের কথায় দলীয় স্তরে আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল। কল্যাণ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ২০১১ সালের পরে দলে আসা এই নেতাদের কারা প্রশ্রয় দেন? কল্যাণের বক্তব্যের সময় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু মদনের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।

বস্তুত, তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকের আশঙ্কা, মদনের ওই বক্তব্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরা চাইলে আদালতে উদ্ধৃত করতে পারেন। মদনের বক্তব্য ছিল, কেন মেয়েটি একা কলেজে গিয়েছিলেন? কেন সঙ্গে কাউকে নিয়ে যাননি ইত্যাদি। শাসকদলের এক নেতার কথায়, ‘‘অনেকে মনে করেন মেয়েদের পোশাক ধর্ষণের জন্য দায়ী। মদনের কথায় সেই মানসিকতাই প্রতিফলিত হয়েছে।’’ তৃণমূলের কেউ কেউ এমনও বলছেন, মদন শো কজ়ের কী জবাব দেন, তা দেখতে চাইছে দল। কিন্তু পাশাপাশিই শো কজ়ের জবাব পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে আরও বড় পদক্ষেপের সম্ভাবনাও এখনও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অন্তত কালীঘাটের ‘মনোভাব’ তেমনই বলে দাবি একাধিক নেতার।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দলগত ভাবে নিন্দার পরে মদন খানিকটা মাথা নোয়ালেও কল্যাণ পাল্টা পোস্ট করে জানিয়ে দেন, তিনি দলের বক্তব্যের সঙ্গে কোনও ভাবেই একমত নন। অর্থাৎ, প্রকাশ্যেই দলীয় সিদ্ধান্তকে নস্যাৎ করেন কল্যাণ। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, তিনি যে কথা বলেছেন, তা বলার জন্য তাঁকে নিন্দিত হতে হলেও সে কথা তিনি হাজার বার বলবেন। কিন্তু দলীয় বিবৃতির প্রকাশ্য বিরোধিতা করার পরেও কল্যাণের বিরুদ্ধে মদনের মতো পদক্ষেপ করেনি তৃণমূল, যা দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের প্রশ্নে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অনেকের অভিমত। সেই সূত্রে তৃণমূলের অন্দরে এই প্রশ্নও উঠছে যে, মদনের সঙ্গে একই বন্ধনীতে ফেলে কল্যাণের নিন্দা করার সিদ্ধান্ত কি খানিকটা তাড়াহুড়ো করেই নেওয়া হয়ে গিয়েছে? প্রথম থেকেই দু’জনকে আলাদা করে রাখলে সুবিবেচনার কাজ হত?

তৃণমূল সূত্রের খবর, মদন যে শো কজ়ের চিঠি পেয়েছেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তার খসড়া করেছেন রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। স্বাক্ষর করেছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সূত্রের এ-ও খবর যে, রবিবার জয়প্রকাশের মোবাইল থেকেই হোয়াট্সঅ্যাপে মদনকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। উত্তর দেওয়ার জন্য তিন দিনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে কামারহাটির বিধায়ককে। রবিবার নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে একটি ক্রীড়া অ্যাকাডেমি উদ্বোধনে হাজির ছিলেন মদন। সেখানে ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষেরাও। শো কজ়ের চিঠি সম্পর্কে মদন বলেছেন, ‘‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করব না।’’

মদনের এই পরিস্থিতির সমান্তরালেই কল্যাণ-কাহিনি অন্য পথে চলছে। সব ঠিক থাকলে এবং কর্মসূচিতে শেষ মুহূর্তে বড় কোন বদল না-হলে মঙ্গলবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলে থাকতে পারেন কল্যাণ। দলের তরফে কল্যাণ সেখানে গেলে ধরে নিতে হবে, সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশেই তিনি ওই প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাতে মদন-কল্যাণ ‘ফারাক’ আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

তবে ভিন্ন একটি প্রসঙ্গও শাসকদলের অন্দরের আলোচনায় আসছে। তা হল, কল্যাণের দলের মহিলা সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে আক্রমণ করা। গত শুক্রবার যে এক্স পোস্টে তৃণমূলের তরফে মদন এবং কল্যাণের নিন্দা করা হয়েছিল, সেটি রিপোস্ট করে মহুয়া লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে নারীবিদ্বেষ কোনও নির্দিষ্ট দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যিনিই করুন না কেন।’’

এর পরে রবিবার মহুয়ার বিরুদ্ধে আগলভাঙা আক্রমণ শানান কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘দেড় মাসের হনিমুন শেষ করে দেশে ফিরেই কি ওঁর (মহুয়ার) আমার পিছনে লাগা শুরু হল? আমি সব নারীকে সম্মান করি। কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে ঘৃণা করি। যাঁকে পার্লামেন্টের এথিক্স কমিটি বহিষ্কার করে, তাঁকে ঘৃণাই করি।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি বার্লিনের প্রাসাদে পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন মহুয়া। বিবাহের কারণে দলনেত্রী মমতার অনুমতি নিয়ে বেশ কিছু দিন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। ছিলেন বিদেশে। দিন দুয়েক আগে দেশে ফিরেছেন।

মহুয়ার বিয়ের প্রসঙ্গ টেনে কল্যাণ বলেন, ‘‘আমি নারীবিদ্বেষী? আপনি এক মহিলার ৪০ বছরের বিবাহিত জীবন নষ্ট করে, তাঁকে কষ্ট দিয়ে সেই পুরুষকে বিয়ে করেছেন। আর আমি নারীবিদ্বেষী?’’ মহুয়া নিজের কেন্দ্রে অন্য কোনও মহিলা নেত্রীকে ‘উঠতে’ দেন না বলেও দাবি করেছেন কল্যাণ, যা কলেজ ধর্ষণ-কাণ্ডের আবহে শাসকদলের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করে দিয়েছে। এই প্রশ্নে কল্যাণের বিরুদ্ধে দল কোনও পদক্ষেপ করে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরে।

Kasba Rape Case kasba
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy