মৌসুমী মিস্ত্রি।
কড়িকাঠে ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন এক তরুণী। কথা বলতে বলতেই উঠে পড়লেন চেয়ারে। হঠাৎ গলায় ওড়না জড়িয়ে ঝুলে পড়ে ছটফট করতে করতে মারাও গেলেন!
এমন ঘটনা যখন ঘটছে, তখন তরুণীর মোবাইলে চলছে ফেসবুক লাইভ।
ওই তরুণীর আত্মহত্যার ‘লাইভ’ দেখলেন ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুরা। ফেসবুকে চোখ রেখেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠবৃত্তে থাকা বন্ধুরাও। অবাক করার বিষয়, তাঁদের মধ্যে কেউই ওই তরুণীকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেন না বা তাঁর বাড়িতেও যোগাযোগ করলেন না!
কতই বা বয়স সোনারপুরের বৈদ্যপাড়ার বাসিন্দা মৌসুমী মিস্ত্রির। সবে ১৭, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছিলেন তিনি। শনিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ার জলসা দেখতে গিয়েছিলেন মৌসুমী। জলসায় গিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে কোনও সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার পরেই বাড়ি ফিরে এমন কাণ্ড!
আরও পড়ুন: ফেসবুক লাইভ করে আত্মঘাতী ছাত্রী, সোনারপুরে
আত্মহত্যার সময় যখন ফেসবুক লাইভ করছেন ওই তরুণী, তখন বাড়ির লোক কিছু বুঝতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু সেই সময় ফেসবুকে এই ঘটনার ‘লাইভ’ দেখেও কেন উদ্যোগী হলেন না বন্ধুরা?
মনেবিদ দোলা মজুমদার বলেন, “ফেসবুকের বন্ধুরা সত্যিই প্রকৃত বন্ধু কি না তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ওই যুবতী ব্যক্তিত্ব গঠনের সমস্যায় ভুগছিলেন। ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে আত্মহত্যার সময় কারও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করছিলেন। সেই সময় যাঁরা এই ঘটনা দেখেছিলেন, তাঁদের উচিত ছিল মৌসুমীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। সঠিক সময়ে খবর গেলে হয়তো এমন পরিণতি হত না।”
আরও পড়ুন: বিবাদের মূলে ‘মক্ষিরানি’, মত্ত বন্ধুকে জলে ফেলে খুন
কী বলছে আইন?
আইনজীবী অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কারও প্রাণ বাঁচানো মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি তাঁর বন্ধুরা বিষয়টি দেখে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তাঁদের সরাসরি ‘অপরাধী’ বলা যাবে না। যদি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তা হলে বিচারক ওই বন্ধুদের কাছে মৌলিক দায়িত্ব পালন না করার কারণ জানতে চাইতেই পারেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
এক পুলিশ অফিসার বলেন, “কেউ তাঁকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তা হলে নির্দিষ্ট ধারায় মামলাও রুজু হতে পারে।”
আত্মঘাতী ছাত্রীর মা শম্পা মিস্ত্রি বলেন, “সে দিন কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে চেঁচিয়ে কথা বলছিল। পাড়ার জলসা দেখতে যাবে বলে বেরিয়ে গিয়েছিল। দেরি করেই বাড়ি ফেরে। আমি কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। কোনও একটা কিছু হয়েছিল।”
আরও পড়ুন: দুই সন্তান-সহ বাবাকে পিষল ট্রাক, ভাঙচুর
তিনি এই ঘটনার জন্য সরাসরি মৌসুমীর বন্ধুদেরই দায়ী করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুরের ঘাসিয়াড়ার এক যুবকের সঙ্গে সম্প্রতি তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। শনিবার দুপুরে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মৌসুমী।
জলসা দেখে দেরি করেই বাড়ি ফেরেন। রাতে একাই ছিলেন তিনি। মৌসুমীর বাবা ও ভাই অন্যত্র থাকেন। প্রতি দিন সকাল ৮টার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন ওই ছাত্রী। রবিবার সকালে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে, জানলা দিয়ে ডাকাডাকি করে ভাই। তখনই সে দেখতে পায়, ঘরের ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দিদির দেহ ঝুলছে।
পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আত্মঘাতী ছাত্রীর বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy