Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নূপুরে তার জড়িয়ে বধূকে শক, ধৃত স্বামী

বিয়ের পরে যে সময়টা নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর থাকে একটা মেয়ে, সেই প্রথম এক মাসেই তিন তিন বার মৃত্যুর মুখোমুখি হল সদ্য আঠারো পেরনো এক তরুণী। কখনও বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রের জলে ঠেলে ফেলে মারার চেষ্টা হল তাঁকে, কখনও আবার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হল ট্রেনের সামনে।

কৌশিক মিশ্র
এগরা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

বিয়ের পরে যে সময়টা নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর থাকে একটা মেয়ে, সেই প্রথম এক মাসেই তিন তিন বার মৃত্যুর মুখোমুখি হল সদ্য আঠারো পেরনো এক তরুণী। কখনও বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রের জলে ঠেলে ফেলে মারার চেষ্টা হল তাঁকে, কখনও আবার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হল ট্রেনের সামনে। আর সর্বশেষ পায়ের নূপুরে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে শক দেওয়া। শ্বশুরবাড়ির অন্য কেউ নয়, খোদ স্বামীই মৌমিতা মিশ্র নামে ওই তরুণীর উপর এমন নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত বছর আটত্রিশের রবীন্দ্রনাথ মিশ্রকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার। মৌমিতা এখন এগরা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী সুস্থ নয়। যোগ পেলেই ও আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করত।’’ রবিবার মৌমিতার লিখিত অভিযোগ পেয়েই পুলিশ গ্রেফতার করে রবীন্দ্রনাথকে। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘নারী নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ, সোমবার ধৃতকে আদালতে তোলা হবে।’’ পুলিশি জেরায় রবীন্দ্রনাথ অবশ্য অন্য দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে। তাই এ সব বানিয়ে বলছে। আমি নির্যাতনের বিষয়ে কিছু জানি না।’’

গত ১৫ জুন এগরা শহরের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এগরা-১ ব্লকের মহাবিশ্রা গ্রামের মৌমিতার। রবীন্দ্রনাথের প্রসাধনীর দোকান রয়েছে। শৈশবে পিতৃহীন ওই যুবকের সাত দাদা ও মা থাকেন কলকাতায়। এগরার বাড়িতে একাই থাকেন রবীন্দ্রনাথ। এমন নির্ঝঞ্ঝাট সংসারে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাই নিশ্চিন্ত ছিলেন মৌমিতার বাবা-মা। বিয়ের পরে প্রথম তিন-চারটে দিন ভাল কেটেছিল মৌমিতার। কিন্তু তারপরই সব ওলটপালট হয়ে যায়।

মৌমিতা এ দিন জানালেন, গত ২৫ জুন স্বামীর সঙ্গে টাটায় বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন খড়গপুর স্টেশনে চলন্ত ট্রেনের সামনে তাঁকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন রবীন্দ্রনাথ। সহযাত্রীদের চেষ্টায় সে যাত্রায় বেঁচে যান মৌমিতা। তারপর ২ জুলাই দিঘায় নিয়ে গিয়ে মৌমিতাকে সমুদ্রের জলে ঠেলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁর স্বামী।

তবে এ সব ঘটনা বাপের বাড়িতে জানিয়ে উদ্বেগ বাড়াতে চাননি মৌমিতা। ভেবেছিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু শনিবার রাতে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। প্রথমে সিলিং ফ্যানে কাপড় জড়িয়ে স্ত্রীকে খুনের হুমকি দেন রবীন্দ্রনাথ। অবস্থা কিছুটা সামলানোর পরে ঘুমিয়েও পড়েন মৌমিতা। আর ঘুমের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর পায়ের নূপুরের সঙ্গে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে শক দেন বলে অভিযোগ। আর চুপ থাকতে পারেননি মৌমিতা। প্রথমে মামাকে সব জানান। খবর পৌঁছয় বাপের বাড়িতেও। তাঁরাই মৌমিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে অত্যাচারের সব ঘটনা লিখিতভাবে জানিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী।

মানসিক বিকৃতি থেকেই রবীন্দ্রনাথ এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের। তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে তিন রকম সম্ভাবনা থাকতে পারে। প্রথমত, স্ত্রী বয়সে বেশ ছোট হওয়ায় নির্যাতন করে তাঁকে বশীভূত রাখার চেষ্টা করতেন রবীন্দ্রনাথ। দ্বিতীয়ত, মহিলাদের উপর কোনও কারণে তাঁর অসম্ভব রাগ ছিল। আর তৃতীয়ত, ওই যুবকের যৌন অক্ষমতা ছিল। সেটা চাপা দিতেই স্ত্রীর উপর নির্যাতন করতেন। মৌমিতাও জানান, তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। আলাদা ঘরে ঘুমোতেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথের দাদা অমিয় মিশ্রের কথায়, ‘‘ভাইয়ের আচরণে আমরা বরাবর বিরক্ত। তাই ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি না। এ সব ঘটনার কথাও জানা নেই।’’ গোটা ঘটনায় হতবাক মৌমিতার পরিবার। বাবা রাধেশ্যাম মিশ্র বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ছেলেটা ভাল। তাই বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়ের এমন পরিণতি হবে ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE