Advertisement
E-Paper

যৌনপল্লির অন্ধকার থেকে ক্যানিংয়ের নাবালিকাকে ফেরাল ফোন!

ভ্যানচালক বাবা হৃদ্‌রোগী। দু’টি অস্ত্রোপচারের পরে শয্যাশায়ী। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভাইবোনের পড়াশোনা। ক্যানিং থানা এলাকার বাসিন্দা পূজার এই বৃত্তান্ত নতুন কিছু নয়।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০১
Share
Save

‘পূজা (নাম বদল)–কে ফেরত পেতে হলে এই নম্বরে ফোন করুন’— বাড়ির ঠিকানায় আসা বাংলায় লেখা এই চিঠিটুকুই সম্বল ছিল পরিবারের লোকজনের কাছে। সেই সূত্র ধরেই উদ্ধারের পরে মেয়ে যখন বাড়ি ফিরে এল, তার মধ্যে কেটে গিয়েছে ১৪ মাস। হাতবদল হতে হয়েছে দু’টি যৌনপল্লিতে। ফিরে ওই স্কুলছাত্রী দেখল, বদলে গিয়েছে বাড়ির ছবিও।

ভ্যানচালক বাবা হৃদ্‌রোগী। দু’টি অস্ত্রোপচারের পরে শয্যাশায়ী। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভাইবোনের পড়াশোনা। ক্যানিং থানা এলাকার বাসিন্দা পূজার এই বৃত্তান্ত নতুন কিছু নয়। এটা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মেয়ে পাচারের বারোমাস্যার অঙ্গ। ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, মথুরাপুর থেকে নাবালিকা নিখোঁজের অভিযোগ প্রায়ই জমা পড়ে থানায়। পরে দেখা যায়, মেয়ে পাচার হয়ে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যের যৌনপল্লিতে। ক্যানিংয়ের পূজার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তাকে পুণে-মুম্বইয়ের দু’-দু’টি যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।

অন্ধকার থেকে ফিরে নাবালিকা পূজা জানিয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ব্যাঙ্কে কন্যাশ্রীর টাকার খোঁজ নিতে। রাকেশ মোল্লা নামে এক যুবক তাকে আটকায়। মেয়েটির অভিযোগ, স্কুল থেকে ফেরার পথে বেশ কিছু দিন ধরেই ওই যুবক তাকে বিরক্ত করছিল। সে-দিন ব্যাঙ্কে যাওয়ার পথে তাকে জোর করে আটকে চকলেট খেতে দেয় সে। খেতে না-চাওয়ায় জোর করে তার মুখে চকলেট পুরে দেয়। সে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে ওই যুবক তাকে হাওড়া হয়ে পুণেতে নিয়ে যায় বলে মেয়েটির অভিযোগ। পূজা জানায়, পুণেতে নিয়ে গিয়ে তাকে যৌনপল্লিতে বেচে দেওয়া হয়। কিন্তু সে কাজ করতে রাজি হয়নি। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় মুম্বইয়ের কামথিপুরার যৌনপল্লিতে। সেখানে সাড়ে চার লক্ষ টাকায় তাকে বেচে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পূজার।

ভাগ্যক্রমে কামথিপুরায় পূজা পেয়ে যায় এক বাঙালি যুবককে। তার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নেয় সে। একটি কাগজে সেই নম্বর আর একটা লাইন লিখে সেই যুবককে তার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলে পূজা। চিঠি পেয়ে সেটি নিয়ে পরিবারের লোকজন হাজির হন মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে। সেখান থেকে ক্যানিংয়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে যান তাঁরা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে শুভশ্রী রাপতান বলেন, ‘‘বুঝতে পারছিলাম না, কে কোথা থেকে ওই চিঠি পাঠাল। খুঁটিয়ে দেখার পরে জানা যায়, খামের উপরে মুম্বইয়ের স্ট্যাম্প মারা আছে। আর দেরি করিনি।’’ ক্যানিং থানায় বিষয়টি জানান তাঁরা। সেখান থেকে মুম্বই পুলিশকে জানালে আট ঘণ্টার মাথায় ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন: আয়ুষ্মান মমতা-হীন, নাম করেই আক্রমণ মোদীকে

তার পরে আট মাস সেখানকার একটি হোমে কাটিয়ে বুধবার বাড়িতে ফেরে পূজা। বৃহস্পতিবার ক্যানিং থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করার পরে তার মুখে একটাই কথা: ‘‘রাকেশ আমার যা ক্ষতি করেছে, পেলে আমি ওকে মেরে ফেলবো।’’

Red Light Area Teenage Girl Mobile Phone

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}