Advertisement
E-Paper

ওঁদের হাত ধরে গোলা ভরছে সরকারের

চাষিদের সচেতন করার জন্য গত বছরই রাজ্যের অল্পকিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নামানো হয়েছিল। সেই পাইলট প্রকল্পে সাড়া মিলেছিল ভালই। এ বার তাই শুরু থেকেই তাঁদের ময়দানে নামানো হয়েছে। শুধু সচেতন করাই নয়, তাঁরা চাষির বাড়ি থেকেই সরাসরি ধান কিনছেন।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৭

সলতেটা পাকানো শুরু হয়েছিল গত বছর। বছর পার হতে না হতে প্রজ্জ্বলিত দীপ হয়ে রাজ্যের গাঁয়ে-গাঁয়ে আলো ছড়াচ্ছেন ওঁরা।

হাতে ট্যাব, কাঁধে ঝোলা। সটান হানা দিচ্ছেন চাষির বাড়িতে। ‘ধান আছে নাকি গো? আনো উঠোনে। আমরাই কিনে নেব।’ আটপৌরে মহিলাদের কথা শুনে থতমত খেলে ওঁরাই ধরিয়ে দিচ্ছেন। ‘কম দামে ঘরের লক্ষ্মী দালালদের হাতে দিয়ে লাভ কী গো? এই ধান দেবে, টাকা জমা পড়বে তোমার ব্যাঙ্কে। দালালরা এত দাম দেবে নাকি?’ বিষয়টা বুঝতে সময় নিচ্ছেন না চাষিরা। চাষিদের ধান ওদের হাত ধরে জমা পড়ছে সরকারের গোলায়। সৌজন্যে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। কুইন্টালে ৩১.২৫ টাকা কমিশন পাচ্ছেন তাঁরা।

তাঁরা যদি মূল গায়েন হন, তবে রাজ্যের খাদ্য দফতর এ বার দোহার নামিয়েছে ময়দানে। তাঁরা বাউল এবং লোকগানের শিল্পী। মাঠেঘাটে লোক জড়ো করে গান শোনাচ্ছেন তাঁরা। বলছেন দালালদের খপ্পরে পড়ে অভাবি বিক্রি নয়। প্রয়োজনে ঘরে বসেই নিজের জমির ধান সরকারকে বেচতে পারবেন তাঁরা। তাতে কাজ যে হচ্ছে, তা মানছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নিজেই। বলছেন, ‘‘মহিলারা যেটা পারেন, তা সকলে পারে না। তাঁরা চাষির ঘর থেকে ধান কেনার ফলে আমাদের ভাঁড়ারে ধান সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ছে।’’

গত বছর ধান সংগ্রহ নিয়ে নাকানি চোবানি খেতে হয়েছিল সরকারকে। শিবির নিয়ে, টাকা জমা নিয়ে অভিযোগও ছিল বিস্তর।
সেই ফাঁকে চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কম দামে ধান তুলে নিয়েছিল ফড়েরা।

চাষিদের সচেতন করার জন্য গত বছরই রাজ্যের অল্পকিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নামানো হয়েছিল। সেই পাইলট প্রকল্পে সাড়া মিলেছিল ভালই। এ বার তাই শুরু থেকেই তাঁদের ময়দানে নামানো হয়েছে। শুধু সচেতন করাই নয়, তাঁরা চাষির বাড়ি থেকেই সরাসরি ধান কিনছেন।

খাদ্য দফতরের দেওয়া ট্যাবেই ধান কেনার হিসেব তুলছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা জমা পড়ছে দফতরের সার্ভারে। কিছুক্ষণের মধ্যে টাকাও জমা পড়ছে চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

মহাসঙ্ঘগুলিকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৮৬টি মহাসঙ্ঘ নাম নথিভুক্ত করেছে। তাদের অধীনে ২০টি করে সঙ্ঘ রয়েছে। সঙ্ঘের অধীনে আবার রয়েছে ১০টি করে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তাঁদের জন্য খাদ্য দফতর নিয়মও কিছুটা শিথিল করেছে। তাঁরা বছরের যে কোনও সময়ই নাম নথিভুক্ত করতে পারবে। দফতরের এক কর্তা জানান, গ্রামে, পঞ্চায়েতে বা ব্লকে শিবির করলে চাষিদের ধান আনতে অনীহা থাকে। সেই ভাবনা থেকেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ধান সংগ্রহের কাজে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। চাষিদের প্রায় সকলেই তাঁদের চেনা। তার ফলে অল্পসল্প ধান হলেও চাষিরা তা সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্য ১৫৩০ টাকায় বেচছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কেনা ধান পরে চালকলগুলি সেই ধান তুলে নিয়ে আসছে। ফলে ফড়েদের পিছু হটতেই হচ্ছে।

ফড়ে তাড়াতে বাউলরাও খুব কাজে আসছে দফতরের। বাউলরা মাঠেঘাটে ধান কেনা নিয়ে বিস্তারিত প্রচার করছেন তাঁরা। তার জন্য বাউলদেরও রোজ ২০০ টাকা করে ভাতা মিলছে।

Paddy Self-Help Group State Government Store
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy