Advertisement
E-Paper

ভাঙড়ে রমরমা আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে কোমর বাঁধছে প্রমীলা-বাহিনী

ভাঙড় নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের। সেই চিন্তার মূল কারণ, আন্দোলনের গ্রামগুলিতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের আমদানি। এবং সেই আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত মহিলা-বাহিনীর গড়ে ওঠা!

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:২১
প্রতিরোধ: যেন ‘গুলাব গ্যাং’! অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাঙড়ের রাস্তায় মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

প্রতিরোধ: যেন ‘গুলাব গ্যাং’! অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাঙড়ের রাস্তায় মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

ভাঙড় নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের।

সেই চিন্তার মূল কারণ, আন্দোলনের গ্রামগুলিতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের আমদানি। এবং সেই আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত মহিলা-বাহিনীর গড়ে ওঠা!

পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের জেরে গত ১৭ জানুয়ারি অগ্নিগর্ভ হয়েছিল ভাঙড়। তারপর লাগাতার অবরোধের জেরে ভাঙড়কে কার্যত ‘মুক্তাঞ্চল’ বানিয়ে ফেলেছিলেন আন্দোলনকারীরা। নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী এবং নেতা প্রদীপ সিংহ ঠাকুরকে গ্রেফতারের পরে সেই আন্দোলনের ঝাঁঝ কমছিল বলে ধারণা হয়েছিল পুলিশের একাংশের। উঠে গিয়েছিল অবরোধ।

কিন্তু ভাঙড়-কাণ্ডের ৫২ দিন পরেও পুলিশের দুশ্চিন্তা তো কমলোই না, উল্টে বাড়ল। সেই উদ্বেগ পৌঁছেছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরেও। শনি ও রবি— পর পর দু’দিন ফের অবরোধ হয়েছে ভাঙড়ে। সোমবারও পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন খামারআইট, পোলেরহাট, মাছিভাঙার মতো গ্রামগুলি থেকে অবরোধ সরেনি। সেই অবরোধ সরানো পুলিশের মাথাব্যথা ঠিকই, কিন্তু তার চেয়েও তদন্তকারীদের বেশি ভাবাচ্ছে, ওই সব গ্রামে মজুত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। শনিবার তৃণমূলের মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের তরফেও পাল্টা বোমা ছোড়া হয়েছিল। আর তা ছুড়েছিলেন মহিলারাই।

কী ভাবে বোমা ছুড়তে শিখলেন গ্রামের আটপৌরে মহিলারা?

তদন্তকারীদের দাবি, ১৭ জানুয়ারি ভাঙড়-কাণ্ডের আগে, প্রায় দু’মাস ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন নকশাল নেতারা। তাঁরাই তৈরি করেন ওই মহিলা-বাহিনী। আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণে সাহায্য করে স্থানীয় অপরাধীরা। গোলমালের দিনও সামনের সারিতে ছিলেন মহিলারাই।

কিন্তু অস্ত্র এল কোথা থেকে?

গোয়েন্দা-কর্তাদের তথ্য বলছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে বহু দাগি অপরাধী রয়েছে। এমন কয়েক জন অস্ত্র কারবারিও রয়েছে, যাদের সঙ্গে মুঙ্গেরের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের যোগ রয়েছে। ভাঙড়ের ওই অস্ত্র কারবারিরা কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা মুঙ্গেরের অস্ত্র কারবারিদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। ওই দু’পক্ষের কাছে আগে থেকেই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত ছিল। কিন্তু সেই অস্ত্র ‘অ্যাকশনে’ কম পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল আন্দোলনকারীদের। তাই মাছিভাঙা গ্রামের পিছনে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের নির্জন ভেড়ি এলাকা দিয়ে বাইরে থেকে আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করা হয়।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পুলিশি অভিযানের পর থেকেই নকশাল নেতারা শাসনের ওই ভেড়ি এলাকায় ডেরা বাঁধেন। সম্প্রতি ওই এলাকা দিয়ে মুঙ্গেরের কয়েক জন অস্ত্র কারবারি মাছিভাঙা এবং খামারআইটে এসে আস্তানা গাড়ে। ওই দুই গ্রামের নির্দিষ্ট কয়েকটি বাড়ি এখন কার্যত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের আড়ত।

কেমন সে অস্ত্র?

গোয়েন্দা-কর্তাদের দাবি, পরিকল্পনা করে মুঙ্গেরে তৈরি একনলা, দোনলা বন্দুক এবং সেভেন এমএম ও ওয়ান শটার মজুত করা হয়েছে। কারণ, ওই সব বন্দুক এবং ওয়ান শটারে থ্রি-নট-থ্রি কার্তুজ ব্যবহার করা হয়। যাতে পুলিশের সঙ্গে ‘অ্যাকশন’-এর সময় গুলি কোথা থেকে চলেছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। কারণ, পুলিশের অনেক রাইফেলেও একই কার্তুজ ব্যবহার করা হয়। ঠিক যে কারণে গত ১৭ জানুয়ারি গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যুর পরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই মামলা এখন আদালতের বিচারাধীন।

অতঃকিম?

গোয়েন্দারা মানছেন, পা ফেলতে হবে সন্তর্পণে। এক গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের সব বিষয়ে খোঁজ রাখছি। পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়েও পরিকল্পনা
করা হচ্ছে।’’

Bhangar Power Grid Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy