E-Paper

নিউ টাউনে বান্ধবীকে বাঁচাতে গিয়ে খুন যুবক

বৃহস্পতিবার ভোরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সঙ্কেত চট্টোপাধ্যায় (২৯) নামে যুবকের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৮
সঙ্কেত চট্টোপাধ্যায়।

সঙ্কেত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

নিউ টাউন কি ক্রমেই দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠছে?

গভীর রাতে এক তরুণীকে একা পেয়ে প্রথমে তাঁকে উত্ত্যক্ত করা এবং পরে তাতে বাধা দিতে গেলে তরুণীর বন্ধুকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনা তেমনই ইঙ্গিত করছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে সেখানকার পুলিশি ব্যবস্থা নিয়েও। বুধবার গভীর রাতে নিউ টাউন থানা এলাকার গৌরাঙ্গনগরের ক্ষুদিরামপল্লিতে এই ঘটনা ঘটেছে। বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা এক তরুণী পাড়ারই তিন মত্ত যুবকের খপ্পরে পড়েন। ওই যুবকেরা তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। বান্ধবীকে ফেরাতে গিয়ে ওই দৃশ্য দেখে সেই দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁর বন্ধু। তখন দুষ্কৃতীরা তাঁর উপরে চড়াও হয়ে প্রথমে ইট দিয়ে মাথায় মারে। তার পরে বাঁশ দিয়ে পেটায় বলেও অভিযোগ। বৃহস্পতিবার ভোরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সঙ্কেত চট্টোপাধ্যায় (২৯) নামে ওই যুবকের।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ওই এলাকায়। ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা মারতে মারতে সাগর দাস, শম্ভু মণ্ডল ও রাজু ঘোষ নামে তিন অভিযুক্ত ও তাদের পরিবারের লোকজনকে থানায় নিয়ে আসেন। যদিও নিউ টাউন থানার পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন ওই ঘটনার পরে দীর্ঘক্ষণ নিহত যুবকের পরিজন-প্রতিবেশীরা নিউ টাউন থানার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন অভিযুক্তদের পেটানোর জন্য। যদিও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়। ওই তিন যুবককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট।

সঙ্কেত পেশাগত ভাবে এসি সারানোর কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। বাগুইআটির জ্যাংড়ায় তাঁর বাড়ি হলেও গৌরাঙ্গনগরের একটি ফ্ল্যাটে ওই বান্ধবীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। সেখানে তরুণীর মা-বাবারও যাতায়াত ছিল বলে যুবকের পরিবার জানিয়েছে। বছর দেড়েক আগে ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকস্তব্ধ তাঁর পরিবার।

বৃহস্পতিবার নিউ টাউন থানায় অসহায় ভাবে বসে ছিলেন সঙ্কেতের বাবা কানাই চট্টোপাধ্যায়। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় সঙ্কেতের বান্ধবীকে। পরে পুলিশ তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যায় আলাদা একটি ঘরে। আকস্মিক এই ঘটনায় তিনি কার্যত বাক্রুদ্ধ। তরুণী জানান, রাতে ওই ঘটনার পরে আহত সঙ্কেতকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করতে তিনি ফোন করেন সঙ্কেতের দিদি মহিমাকে। সঙ্কেতকে উদ্ধার করে প্রথমে
বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান তাঁরা। এ দিন সকালে এনআরএসেই মৃত্যু হয় সঙ্কেতের।

পুলিশ দাবি করেছে, বুধবার রাতে সঙ্কেত ও তাঁর বান্ধবী রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সেই সময়ে মত্ত তিন যুবকের বচসা বাধে। তার পরেই সঙ্কেতকে মারধর করা হয়। তরুণীকে হেনস্থা কিংবা উত্ত্যক্ত করার ঘটনার কথা তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেননি বলেই দাবি পুলিশের। যদিও সঙ্কেতের দিদি মহিমা সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে জানান, বান্ধবী ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে সঙ্কেতও তাঁর পিছু নেন। ফ্ল্যাটের অদূরেই সঙ্কেতের বান্ধবীকে অভিযুক্তদের খপ্পরে পড়তে হয়। তার পরেই সবটা ঘটে। এমনকি, জখম অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ সঙ্কেত রাস্তায় পড়ে থাকা সত্ত্বেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি বলেই অভিযোগ করেন মহিমা। সঙ্কেতের বান্ধবীর পরিজনদের দাবি, তাঁর হাত ধরে টানাটানি করেছিল অভিযুক্তেরা।

এ দিন ক্ষুদিরামপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে সঙ্কেত পড়ে ছিলেন, সেই জায়গায় লোকজনের জটলা। ধৃত শম্ভু, রাজু ও সাগর নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিল বলেই অভিযোগ করেন স্থানীয়েরা। বিশেষত, শম্ভু একাধিক বার অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অপরাধে জেলও খেটেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। শম্ভুর স্ত্রী অবশ্য এ দিন দাবি করেন, তাঁর স্বামী রাতে বাড়িতেই ছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police investigation New Town

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy