Advertisement
E-Paper

ভরসা দিয়েই পাচারে দড় নদিয়ার সুব্রত

যেমন চেহারা, তেমনই কাজের ধরন। এর আগে নারী পাচার চক্রে জড়িত বহু লোককে গ্রেফতার করেছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। তবে এ যেন অনেকটাই আলাদা।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৯
শিয়ালদহে গ্রেফতার সুব্রত বিশ্বাস ওরফে শুভ।

শিয়ালদহে গ্রেফতার সুব্রত বিশ্বাস ওরফে শুভ।

যেমন চেহারা, তেমনই কাজের ধরন। এর আগে নারী পাচার চক্রে জড়িত বহু লোককে গ্রেফতার করেছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা। তবে এ যেন অনেকটাই আলাদা।

বছর চব্বিশের ওই যুবকের ভালমানুষির আপাত আবরণ, তন্দ্রালু চোখজোড়়া দেখে বোঝার উপায় নেই, তার মনে কী ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা রয়েছে। রয়েছে মিছরিতে মোড়া ভাল ভাল কথায় নিজের প্রতি সহজেই বিশ্বাস জাগানোর ক্ষমতাও। যার ফাঁদে পড়ে নাবালিকা থেকে শুরু করে যুবতী, যৌনপল্লিতে পণ্য হিসেবে বিক্রি হয়েছে অন্তত ১০ জন মেয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যৌনপল্লিতে বিক্রি করার আগে সে নিজেও কোনও কোনও মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো।

বছর সাত-আট ধরে এমন কারবার ফেঁদে বসা নদিয়ার নাকাশিপাড়ার সেই সুব্রত বিশ্বাস ওরফে শুভ অবশেষে সিআইডি-র হেফাজতে। গত মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর শিয়ালদহ স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা।

সুব্রতের কীর্তিকলাপ জেনে এখন তদন্তকারীরা থ। তাঁরা জেনেছেন, এই কারবারে সুব্রত শুধু গত তিন মাসে ১৯টি মোবাইল ও ১৯টি সিম ব্যবহার করেছে। এবং ওই সবগুলিই সে চুরি করেছে। ফলে, তার বিরুদ্ধে চুরির মামলাও রুজু করেছে সিআইডি। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘ওই যুবকের সঙ্গে হায়নার চরিত্রের অনেকটা মিল! হায়নার মতো সে শিকারের সন্ধানে ওত পেতে থাকত।’’

তদন্তে জানা গিয়েছে, শিকার ধরতে সুব্রত ঘুরে বেড়াতো স্টেশনে স্টেশনে। চোখমুখ দেখেই প্রাথমিক ভাবে কোনও নাবালিকা বা তরুণীর অসহায়তা পড়ে ফেলার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে তার। এবং সেই সঙ্গে একটু কথা এগোনোর পরেই তার মনও পড়ে ফেলতে পারত সে। ঠিক সেইমতো কথার জালে খেলিয়ে খেলিয়ে শিকারকে জালে ফেলত। প্রথমে সে নিজেকে ওই অসহায় নারীর একমাত্রা ‘ত্রাতা’ হিসেবে দেখিয়ে তার সঙ্গে ভালবাসার
অভিনয় করত এবং নিজের কোনও ডেরায় নিয়ে গিয়ে রাখত ওই নাবালিকা অথবা তরুণীকে। ভরসা অর্জনের পরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কে যেতেও অসুবিধা হয়নি। কাউকে কাউকে সে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘যৌনপল্লিতে যারা মেয়েদের বিক্রি করে দেয়, তারা নিজেরা ওই মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।’’

সুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেলায় জেলায় এমন সব যৌনপল্লির হদিস সিআইডি পেয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে এতদিন গোয়েন্দাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না। এর মধ্যে বর্ধমানের কালনা, উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির যৌনপল্লির ব্যাপ্তি দেখে তদন্তকারীরা অবাক। সুব্রত ওরফে শুভ মুর্শিদাবাদের এক নাবালিকাকে নৈহাটিতে, কালনার এক তরুণীকে বর্ধমানে এবং নদিয়ার এক গৃহবধূকে নৈহাটিতে বিক্রি করেছিল। অর্থাৎ এই ধরনের কয়েকটি যৌনপল্লির সঙ্গে শুভর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই ভাবে সে কত টাকা রোজগার করেছে, সিআইডি তা খতিয়ে দেখছে।

মাস তিনেক আগে ভবানী ভবনে গোয়েন্দাদের কাছে একটি ফোন আসে। সেখানে জানানো হয়, নৈহাটির যৌনপল্লিতে মুর্শিদাবাদের এক নাবালিকাকে আটকে রাখা হয়েছে এবং জোর করে তাকে যৌন ব্যবসায় নামানো হয়েছে। ওই তদন্তের সূত্রেই সুব্রতের হদিস পাওয়া।

কিন্তু তুখোড় বুদ্ধির ওই যুবককে হাতে পাওয়া সহজ হয়নি। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সুব্রতের ১৯টি মোবাইলের মধ্যে ১৫টি বন্ধ এবং কেবল ৪টি মোবাইল কাজ করছে। ওই চারটিতে বিভিন্ন নম্বর থেকে দু’সপ্তাহ ধরে অনবরত ‘মিস্ড কল’ দেন গোয়েন্দারা। তার মধ্যে একটি মিস্ড কল-এর সূত্রে সুব্রত ফোন করে। সিআইডি-র এক মহিলা অফিসার নাবালিকার গলা করে তাকে টোপ দেন। তিনি বলেন, ‘তোমার নম্বরটা আমি জোগাড় করেছি বহু কষ্টে। তোমাকে আমি দেখেছি। তোমাকে আমার খুব ভাল লেগে গিয়েছে। আমার খুব সমস্যা। তোমার সঙ্গে দেখা করব।’

এমন ভাবে কথাগুলি বলা হয় যে, টোপটা সুব্রত গিলে ফেলে। ২২ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ সে ওই ‘অসহায় নাবালিকাকে’ শিয়ালদহ স্টেশনে যেতে বলে। এ বার সিআইডি সত্যিই এক তরুণীর সাহায্য নেয়, যাঁর চেহারাটা ছোটখাটো, নাবালিকা বলে মনে হয়। শিয়ালদহ স্টেশনের দক্ষিণ শাখায় ওই তরুণী ও সিআইডি-র মহিলা অফিসার সমান্তরাল ভাবে যাচ্ছিলেন। তরুণীকে বলা ছিল, পিছন ফিরে না তাকাতে। এবং অফিসারের চোখের ইশারা খেয়াল করতে। তবে সুব্রতের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে যাচ্ছিলেন ওই মহিলা অফিসারই। একটা সময়ে সুব্রত মহিলাদের পৃথক টিকিটের লাইনে দাঁড়াতে বলে। অফিসার ওই তরুণীকে চোখের ইশারায় লাইনে দাঁড়াতে বলেন। আর ওই তরুণী লাইনে দাঁড়িয়ে ডান দিকে তাকাতেই দেখেন, উপরের একটি ব্যালকনিতে দাঁড়ানো এক যুবক হাসছে।

Human Trafficking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy