Advertisement
E-Paper

কিশোরীর গলা কেটে খুন, হত প্রেমে প্রত্যাখ্যাত যুবকও

বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কিশোরীকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত যুবকেরও গলাকাটা দেহ মিলেছে। সোমবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার গোফানগর অঞ্চলে ওই ঘটনার পরেই এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, ওই কিশোরীকে খুনের পরে ‘প্রতিশোধ’ নিতে একই ছুরি দিয়ে অভিযুক্তকেও মারা হয়েছে।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০৩:১৬
সুমনার শোকার্ত পরিবার। (ইনসেটে) সুমনা খাতুন। :ছবি: অমিত মোহান্ত।

সুমনার শোকার্ত পরিবার। (ইনসেটে) সুমনা খাতুন। :ছবি: অমিত মোহান্ত।

বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কিশোরীকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত যুবকেরও গলাকাটা দেহ মিলেছে। সোমবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার গোফানগর অঞ্চলে ওই ঘটনার পরেই এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, ওই কিশোরীকে খুনের পরে ‘প্রতিশোধ’ নিতে একই ছুরি দিয়ে অভিযুক্তকেও মারা হয়েছে। যদিও কিশোরীর পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের পাল্টা দাবি, ওই যুবক খুনের পরে আত্মঘাতী হয়েছেন।

দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘ওই যুবকের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুটি দেহই ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা ছুরিটিও ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে।’’ পুলিশের একাধিক অফিসার জানান, ওই যুবকের গলায় যে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, তা তাঁর নিজের হাতে করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

নিহত কিশোরীর নাম সুমনা খাতুন (১৫)। সে স্থানীয় বানিয়াল হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ দিন ভোরে গ্রামেরই এক গৃহশিক্ষিকার বাড়িতে পড়তে যাচ্ছিল। সে সময় গলির রাস্তায় যুবক মামুদ হোসেন (২৪) ছুরি দিয়ে মেয়েটির গলার নলি কেটে দেয় বলে অভিযোগ। মামুদ কুমারগঞ্জের ডাঙারহাটের জয়পুর মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

মামুদের দিদি মাসুদা বিবির অভিযোগ, ‘‘আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। ভাই ওই মেয়েটিকে ভালবাসত। বিয়েও করতে চেয়েছিল। ও হয়তো ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, বদলা নিতে ওকে খুন করা হয়েছে। পুলিশকে সেটা বলেছি। পরে লিখিত অভিযোগ করব।’’ মেয়েটির কাকা আব্দুল সামাদ মণ্ডলের দাবি, ‘‘ভাইঝিকে খুন করে মামুদ নিজের গলায় ছুরি চালায়। আমি নিজে ওই দৃশ্য দেখেছি।’’ নিহত ওই দু’জনের বাড়ি প্রায় পাশাপাশি। সুমনাদের তুলনায় মামুদদের পরিবার ততটা সচ্ছ্বল নয়। সম্প্রতি মামুদের পরিবারের তরফে সুমনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাজি হয়নি সুমনার পরিবার। কিশোরীর বাবা হামিদ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওদের বাড়ির পরিবেশ আমাদের পছন্দ নয়। সুমনাও আপত্তি করে। মামুদ মেয়েকে শেষ করে দেবে ভাবতে পারিনি। মামুদ নিজে গলা কেটে আত্মঘাতী হয়েছে বলে শুনেছি।’’

সুমনার কাকা আব্দুল জানান, এ দিন ভোরে পাশেই আদিবাসী পাড়ায় মজুর খুঁজতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় দূর থেকে একটি মেয়েকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখেন। তখনও বুঝতে পারেননি, মেয়েটি সুমনা। তাঁর দাবি, ‘‘গিয়ে দেখি আমার ভাইঝির দেহ পড়ে আছে। পাশে ছেলেটি। গলায় ছুরি চালিয়ে পড়ে ছটফট করছে সে।’’ কিশোরীর শিক্ষিকাও তা দেখে জ্ঞান হারান।

পড়শিরা জানাচ্ছেন, মামুদ দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছিল সুমনাকে। মাদ্রাসা থেকে ছুটি পেলেই সে গ্রামের বাড়িতে চলে আসতো। সুমনা প্রথম দিকে মামুদের প্রস্তাবে সাড়া দিলেও পরে বিয়ের প্রস্তাব শুনে মামুদের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চায়নি। সুমনার এক দিদি সাবানার বলেছেন, ‘‘বিয়ে না করলে বোনকে জবাই করে দেবে বলে মামুদ আড়ালে হুমকিও দিয়েছিল।’’ ছেলের মৃত্যুতে স্বাভাবিক ভাবেই মামুদের মা ফতেমা বেওয়া ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে কী হল ভেবেই পাচ্ছি না। আমার ছেলেটাকে যারা মারল মারল তাদেরও সাজা হোক।’’

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সুমনার গৃহশিক্ষিকার বাড়ির কাছে মেঠো গলির রাস্তার দু’ধারে চাপচাপ রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই যেন নির্বাক দর্শক হয়ে ভিড় জমিয়েছেন। ওই গৃহশিক্ষিকা আজমিরা সরকার বলেন, ‘‘সব বিষয়ই সুমনাকে দেখিয়ে দিতাম। সুমনা পড়তে আসার আগে এলাকার আরও দু’জন ছাত্রী চলে এসেছিল। আমি ওদের বসতে বলে বাথরুমে গিয়েছিলাম। সে সময় আর্ত চিৎকার শুনে বেরিয়ে দেখি সুমনা মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কিছুটা দূরে পড়ে ওই যুবকের দেহ। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।’’

anupratan mohanto tapan murde couple murder youth suicide youth slits throat youth killed lover
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy