Advertisement
১৯ মে ২০২৪

আরামবাগের জরির শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে গুজরাত, মুম্বই

‘ন্যানো’র গুজরাত হারিয়েছিল সিঙ্গুরকে। আরামবাগের জরির শাড়ি কিন্তু হারিয়ে দিচ্ছে গুজরাতকে। পুজোর মুখে আরামবাগের জরি শিল্পীদের এখন খাওয়া-ঘুমনোর সময় নেই। রাতদিন তাঁরা জরির শাড়ি তৈরি করে চলেছেন। স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা তো আছেই, ওই শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে গুজরাত, মুম্বইও।

নকশা বুনছেন শিল্পীরা।—নিজস্ব চিত্র।

নকশা বুনছেন শিল্পীরা।—নিজস্ব চিত্র।

মোহন দাস
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

‘ন্যানো’র গুজরাত হারিয়েছিল সিঙ্গুরকে। আরামবাগের জরির শাড়ি কিন্তু হারিয়ে দিচ্ছে গুজরাতকে।

পুজোর মুখে আরামবাগের জরি শিল্পীদের এখন খাওয়া-ঘুমনোর সময় নেই। রাতদিন তাঁরা জরির শাড়ি তৈরি করে চলেছেন। স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা তো আছেই, ওই শাড়ি পাড়ি দিচ্ছে গুজরাত, মুম্বইও।

আরামবাগ মহকুমা জুড়ে প্রায় পঁচিশ হাজার জরির কারখানা ছিল এক সময়। নিখুঁত আর নতুন ডিজাইনের জন্য দাম কিছুটা বেশি হলেও সমঝদার ক্রেতাদের মধ্যে এই শাড়ির কদর চোখে পড়ার মতো। তাই বাজারে চাহিদাও যথেষ্ট। এই জরির শাড়ি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক দোকানি বলেন, ‘‘জরির শাড়ির কদর এখন উচ্চবিত্তের মধ্যে বেশি। আমাদের তৈরি শাড়ি ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে।’’

এক সময় হুগলির চার মহকুমা শহর তো বটেই, কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা এলাকায় রমরমিয়ে আরামবাগের জরির শাড়ির ব্যবসা চলত। পুজো বা ইদের ভরা বাজারে ঝকঝকে এবং কিছুটা চড়া রঙের এই শাড়ির মেলা লেগে যেত দোকানে। মহিলাদের মধ্যে বিশেষত অল্পবয়সীদের মধ্যে চাহিদাও ছিল প্রচুর। এখন সেই চাহিদা উচ্চবিত্তদের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে। মহকুমার কয়েক হাজার মানুষ জরি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। হাতের ছোঁয়ায় তাঁরা জরি দিয়ে নানা নকশা ফুটিয়ে তোলেন শাড়িতে।

এখন অবশ্য গরিব বা মধ্যবিত্তদের বাজার ধরতে এসে গিয়েছে গুজরাতের জরির শাড়ি। দাম কিছুটা কম। চাহিদা নিয়ে ভিন্ন মত হলেও আরামবাগের আর এক শাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমরা যে শাড়ি তৈরি করছি তার সঙ্গে পাল্লা দিতে গুজরাতেও জরির শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এক সময় আরামবাগ বা সংলগ্ন এলাকা থেকে গুজরাতের সুরাত বা ভারতের অন্যান্য অংশে এই শাড়ি আরও অনেক বেশি বিকোত। কিন্তু আরামবাগের জরির শাড়িকে হারাতে গুজরাতের শিল্পীরা এখন আমাদের থেকে অপেক্ষাকৃত অল্প দামে শাড়ি করছেন।’’

কিন্তু তাতে কি বাজার খুইয়েছে আরামবাগ?

এক ব্যবসায়ী অবশ্য বলেন, ‘‘তা কেন? রাজস্থান, অসম-সহ ভারতের নানা প্রান্তে আরামবাগের জরির তৈরি শাড়ির কদর রয়েছে।’’ আর এক ব্যবসায়ী রিয়াজুল রহমান বলেন, ‘‘হাতে তৈরি জরির শাড়িকে টেক্কা দিতে ভিন্ রাজ্যে এখন যন্ত্রে অপেক্ষাকৃত হালকা খোলের শাড়ি তৈরি হচ্ছে। দাম কম। কিন্তু তাতে ওরা এঁটে উঠতে পারছে না। কেননা সেই শাড়ি টেকসই নয়।’’ তাপস দত্ত নামে আর এক শাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘শুধু কম দাম দিয়ে কিছু বিচার হয় না। মানুষের হাতে টাকা আছে।’’ তবে, স্থানীয় ক্রেতাদের একাংশ মনে করেন, এখানকার শাড়ির দাম কিছুটা অন্তত কম হওয়া জরুরি।

ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ চান, বিপণনের বাজার আরও বাড়ানোর জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ। সরকারি সুবিধা মিললে শাড়ির দাম কিছুটা কম করে পাতলা শাড়ির বাজারও তাঁরা ধরতে পারবেন বলে মনে করেন। জরি কারিগর আরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘মহরমে আমরা পাঁচশো শাড়ি তৈরি করতাম। এ বার দেখি বাজার কেমন পাই।’’ জরি ব্যবসায়ী শেখ মহসিন আলি বলেন, ‘‘একটি শাড়ি তৈরি করতে খরচ এখন আগের থেকে অনেক বেশি। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে পাতলা শাড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। মাঝে ফড়ে রুখতে বিপণনের বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার কিছু করুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE