—প্রতীকী চিত্র।
মাস ছয়েক আগে সার্ভে পার্কের বাসিন্দা দীপ্ত দাশগুপ্তের ল্যাপটপ খোওয়া গিয়েছিল ধানবাদ স্টেশনে। ফিরে পাওয়া যাবে না ধরে নিয়েই নিয়মরক্ষার্থে হাওড়ায় নেমে রেল পুলিশে একটা এফআইআর করে রাখেন। ক’দিন আগে ধানবাদ পুলিশ দীপ্তকে ডেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ ফেরত দিয়েছে। ল্যাপটপের ‘প্রোডাক্ট কি’ নম্বর মিলিয়ে দেখা গিয়েছে, সেটি তাঁরই।
দীপ্ত ভাগ্যবান, খোওয়া যাওয়া ল্যাপটপ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু ট্রেনপথে কোনও মূল্যবান সামগ্রী চুরি গেলে অধিকাংশ যাত্রী তা ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। রেল পুলিশের কর্তাদেরও তা অজানা নয়। তাই ভাবমূর্তি ফেরাতে এবং যাত্রী-বান্ধব হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে সম্প্রতি ‘জিরো এফআইআর’ চালু করেছে রেল পুলিশ।
সেটি কী? এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আগে যে থানায় এফআইআর হত, সেখানকার পুলিশ তদন্ত করত। বড়জোড় ভিন রাজ্যের যে থানা এলাকায় জিনিস খোওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগকারী জানাতেন, সেখানকার পুলিশের সাহায্য নেওয়া হত। কিন্তু এখন এফআইআর যে থানাতেই হোক, তা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জিনিস খোয়া গিয়েছে যে থানা এলাকায়, সেখানে। এরই পোশাকি নাম জিরো এফআইআর।’’ ওই পুলিশকর্তা জানান, এফআইআর কবে পাঠিয়ে দেওয়া হল তা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে অভিযোগকারীকে, যাতে তিনি ওই থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন, কিংবা খোওয়া যাওয়া
জিনিস উদ্ধার হলে পুলিশ তাঁকে জানাতে পারে।
রেল পুলিশের হিসেবে, গত বছরে এ রকম ৭১৯টি এফআইআর ভিন রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। আবার অন্য রাজ্য থেকে এসেছে ৩০৩টি। পুলিশের দাবি, এফআইআর-সহ অপরাধীদের বিস্তারিত তথ্য চটজলদি দেওয়া-নেওয়ার ফলে চুরি যাওয়া জিনিস উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েছে। কেবল হাওড়া পুলিশই খোওয়া যাওয়া ১৮১টি মোবাইলের মধ্যে ৮৮টি উদ্ধার করেছে। ল্যাপটপ পাওয়া গিয়েছে ৪৫টি মধ্যে ১৭টি। এ ছাড়াও উদ্ধারের তালিকায় সোনার গয়নাগাটি রয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘চলতি মাসেই খড়্গপুর রেল পুলিশ ২৩টি মোবাইল উদ্ধার করেছে। অপরাধী দলটি মালদহের কালিয়াচকের। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওড়িশার মধ্যে চলন্ত ট্রেনে অপারেশন চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সেখানকার রেল পুলিশকে সমস্ত জানানো হয়েছিল।’’
এ রাজ্যের রেল পুলিশের এডিজি অধীর শর্মা বলেন, ‘‘ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার ভয়ে জিনিস চুরি গিয়েছে দেখেও অনেকে সংশ্লিষ্ট থানায় এফআইআর করেন না। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে পুলিশকে জানান। অপরাধীরা সেই সুযোগটাই নেয়। ‘জিরো এফআইআর’-এর মাধ্যমে সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে আরও সফলতা মিলবে।’’
রেল পুলিশ জানাচ্ছে, চলন্ত ট্রেনে বা স্টেশন চত্বরে যত অপরাধ হয়, তার সিংহভাগই চুরি। তার পরেই রয়েছে মাদক মেশানো পানীয় খাইয়ে জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। তথ্য বলছে, ২০১৬-তে এ রাজ্যের রেল পুলিশের এলাকায় ২০৫২টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে চুরির ঘটনা ১১৪৫টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy